রোজা ভঙ্গের কাফফারা ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ
রোজা ভঙ্গের কাফফারা ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ রোজা প্রধানত পানাহার ও স্ত্রী-সহবাস থেকে বিরত থাকার মাধ্যমেই পালিত হয়।আমাদের জানা প্রয়োজন, কোন কোন কারণে রোজা ভাঙ্গে এবং কোন কোন কারণে ভাঙ্গে না
রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ দু-ধরনের: (ক) কিছু কারণ হচ্ছে এমন, যেগুলো সংঘটিত হলে কাজা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হয়। (খ) আর কিছু কারণ হচ্ছে এমন, যেগুলো সংঘটিত হলে শুধু কাজা ওয়াজিব হয়; কাফফারা ওয়াজিব হয় না।
আরো পড়ুনঃ শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম
রোজা ভঙ্গের কাফফারা
- কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে।রোজা ভঙ্গের কাফফারা ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কাফফারার নিয়ম হলো—
- একাধারে ৬০ দিন রোজা রাখা – কোনো বিরতি ছাড়া টানা ৬০ দিন রোজা রাখতে হবে।৬০ জন গরিবকে খাওয়ানো – যদি কেউ ৬০ দিন রোজা রাখতে অক্ষম হয়, তবে ৬০ জন দরিদ্র ব্যক্তিকে একবেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে।শাস্তির বিকল্প ব্যবস্থা – যদি কেউ ৬০ জনকে খাওয়াতেও অক্ষম হয়, তবে তাকে সম্ভব হলে দান করতে হবে বা কোনো ভালো কাজে সাহায্য করতে হবে রোজা ভঙ্গের কাফফারা ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ।
রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ
- রোজা রাখার পর কিছু কারণে তা ভেঙে যেতে পারে।রোজা ভঙ্গের কাফফারা ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ নিচে রোজা ভঙ্গের প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো—
- খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ – ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খেলে বা পান করলে রোজা ভেঙে যাবে।যৌন মিলন – ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামী-স্ত্রীর মিলন হলে রোজা ভেঙে যাবে।জোরপূর্বক বমি করা – ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ বা গলা খুঁচিয়ে বমি করলে রোজা ভেঙে যাবে।ঔষধ গ্রহণ – মুখ বা নাক দিয়ে কোনো ওষুধ গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যাবে।
- রক্ত গ্রহণ বা রক্তদান – শারীরিক দুর্বলতার জন্য যদি রক্ত নেওয়া বা দেওয়া হয়, তবে রোজা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।হায়েজ ও নিফাস – নারীদের মাসিক (হায়েজ) বা সন্তান জন্মের পরের রক্তপাত (নিফাস) হলে রোজা ভেঙে যাবে।ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত – যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তমৈথুন বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে বীর্যপাত ঘটায়, তবে রোজা ভেঙে যাবে।
আরো পড়ুনঃ রোজা রাখা অবস্থায় মাসিক হলে রোজা হবে কি
রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণসমূহ
রোজা মাকরুহ হওয়ার অর্থ হলো এমন কিছু কাজ করা যা রোজার পূর্ণতা নষ্ট করে, তবে রোজা ভাঙে না।রোজা ভঙ্গের কাফফারা ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ নিম্নে মাকরুহ হওয়ার কারণসমূহ দেওয়া হলো
অপ্রয়োজনে কিছু চিবানো – যেমন, কাঠি, গাছের পাতা, কাগজ ইত্যাদি মুখে নিয়ে চিবানো।কোনো
খাদ্যের স্বাদ নেওয়া – যদি বিনা প্রয়োজনে কোনো খাবার চেখে দেখা হয়।অত্যধিক থুতু ফেলা – যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে অনেকবার থুতু ফেলতে থাকে।অতিরিক্ত গর্জন বা চিৎকার করা – রোজা রাখার সময় রাগান্বিত হয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করা মাকরুহ।কোনো পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া – যেমন, গিবত
(পরনিন্দা), মিথ্যা বলা, ঝগড়া করা।অপ্রয়োজনে গিলে ফেলা – নিজের লালা বা কফ বারবার গিলে ফেলা।কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করা – বিশেষ করে যদি তা নাকে প্রবেশ করে।অতিরিক্ত পানি দিয়ে কুলি করা – এতে পানি গলায় চলে যেতে পারে, যা রোজার জন্য মাকরুহ।
অজু ভঙ্গের কারণসমূহ
রোজা ভঙ্গের কাফফারা ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ জানার পাশাপাশি অজু ভঙ্গের কারণসমূহ সম্পর্কে আমাদের সবাইকে জানতে হবে। নিচে অজু ভঙ্গের কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো—
প্রস্রাব ও পায়খানা করা – সামান্য পরিমাণ হলেও অজু ভেঙে যাবে।বাতাস নির্গত হওয়া – বিশেষ করে
পায়ুপথ দিয়ে বাতাস বের হলে।ঘুমিয়ে পড়া – যদি কেউ এমনভাবে ঘুমায় যে বসার অবস্থানে তার শরীর ঢিলে হয়ে যায়, তবে অজু নষ্ট হয়ে যাবে।বেহুঁশ হওয়া – অসুস্থতা, জ্ঞান হারানো, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদির ফলে অজু ভেঙে যায়।বীর্যপাত হওয়া – ইচ্ছাকৃতভাবে বা স্বপ্নদোষের ফলে বীর্যপাত হলে অজু
নষ্ট হয়ে যাবে।রক্ত বা পুঁজ প্রবাহিত হওয়া – শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্ত বের হলে এবং তা প্রবাহিত হলে অজু নষ্ট হবে।অমার্জিতভাবে হাসা – নামাজে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে হাসলে অজু ভেঙে যাবে।
ওযু মাকরুহ হওয়ার কারণসমূহ
রোজা ভঙ্গের কাফফারা ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহঅজু মাকরুহ হওয়ার অর্থ হলো এমন কিছু কাজ করা যা অজুর সওয়াব কমিয়ে দেয়, তবে অজু ভাঙে না। নিচে ওযু মাকরুহ হওয়ার কারণসমূহ দেওয়া হলো—অতিরিক্ত পানি অপচয় করা – ওযুর সময় বেশি পানি ব্যবহার করা মাকরুহ।খুবই কম পানি
ব্যবহার করা – প্রয়োজনের তুলনায় অতি কম পানি দিয়ে ওযু করলে তা মাকরুহ।ওযুর ফরজগুলো বাদ দেওয়া – যেমন, কুলি না করা বা মুখ ভালোভাবে না ধোয়া।ওযুর সময় অনর্থক কথা বলা – অযথা কথা বলা বা হাসাহাসি করা মাকরুহ।ওযুর নিয়ম ভঙ্গ করা – যেমন, হাত ধোয়ার আগেই মুখ ধোয়া।নাপাক স্থানে ওযু করা – যেমন, প্রস্রাব বা পায়খানার স্থানে ওযু করা।
রোজার কাফফারার পরিমাণ
রোজার কাফফারা হিসাবে ৬০ জন দরিদ্র ব্যক্তিকে খাওয়ানোর নিয়ম আছে। রোজা ভঙ্গের কাফফারা ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহতবে বর্তমান বাজারমূল্য অনুসারে, জনপ্রতি খাবারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
- ধারণা করা যায়, প্রতি গরিব ব্যক্তির জন্য কমপক্ষে ২০০-৩০০ টাকা ধরা যেতে পারে। এতে মোট খরচ দাঁড়াতে পারে
- ৬০ × ২০০ = ১২,০০০ টাকা
- ৬০ × ৩০০ = ১৮,০০০ টাকা
- তবে, নির্ভরযোগ্য ইসলামিক স্কলার বা স্থানীয় মসজিদের ইমামের সঙ্গে পরামর্শ করে সঠিক পরিমাণ নিশ্চিত করা উচিত রোজা ভঙ্গের কাফফারা ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ।
- আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা চান, তাহলে বলতে পারেন!
উপসংহার
আশা করছি রোজা ভঙ্গের কাফফারা ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url