নামাজ কবুল না হওয়ার কারন – নামাজ ভঙ্গের কারন
নামাজ কবুল না হওয়ার কারন – নামাজ ভঙ্গের কারনইসলাম ধর্মে নামাজ হলো মুসলমানদের জন্য, নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিনের ইবাদত।নামাজ আমরা যারা পড়ি তারা সঠিক নিয়মে নামাজ না পড়লে নামাজ কবুল হয় না।
আমরা নামাজ পড়লেও বিভিন্ন ভুলের কারনে, আমাদের নামাজ কবুল হয় না। ফলে নামাজ পড়েও নামাজ না পড়ার শাস্তি পরকালে আমাদের পেতে হবে। তাই আমাদের নামাজ কবুল না হওয়ার কারন এবং নামাজ ভঙ্গের কারন সম্পর্কে জানতে হবে।
নামাজ কবুল না হওয়ার কারন
ইমানের পরই নামাজের স্থান, ইমান আনার পর নামাজ পড়ার হুকুম দিয়েছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের নামাজ পড়ার হুকুম দিয়েছেন। মুসলিম জাতির শ্রেষ্ঠ কিতাব আল কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ৮২ বার সালাত অর্থাৎ নামাজের
কথা উল্লেখ করেছন। নামাজ হলো বেহেস্তের চাবি। নামাজ ছাড়া যেমন আল্লাহকে খুশি করা যায়না, জান্নাত পাওয়া যায়না। নামাজ কবুল না হওয়ার কারন – নামাজ ভঙ্গের কারনতেমনি নামাজ না পড়লে আমাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি ফলসরূপ জাহান্নাম। এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা নামাজ
পড়ে কিন্তু তাদের নামাজ আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। । কিছু মানুষ আছে যারা নামাজ পড়েও তাদের নামাজ কবুল হয় না। তাই আমাদের জানতে হবে কি কারনে আল্লাহ তায়ালা, কোনো বান্দা নামাজ পড়লেও সে নামাজ আল্লাহ কবুল করেন না। চলুন জেনে নিই কাদের নামাজ কবুল হয় না এবং
কি কারনে হয় না।আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজে না দাড়ালে নামাজ কবুল হয় না। যেকোনো ইবাদতের শর্ত হলো, ইবাদত একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে। আল্লাত ব্যতীত কারও ইবাদত করা যাবে না, কারও সামনে মাথা নত করা যাবে না। এরম নামাজ অন্যথায় পড়া হবে মহান আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন
না।সুন্নত পদ্ধতি না মেনে নামাজ কবুল হবে না। হাদিসে বর্ননা করা আছে রাসূল সা. বলেছেন-যেভাবে তোমরা আমাকে নামাজ আদায় করতে দেখেছ, সেভাবে নামাজ আদায় করো। তাড়াহুড়া করে নামাজ আমাদের নবী পড়তেন না। অনেকেই আছে রুকু থেকে না দাড়িয়েই সেজদায় চলে যায়, ধিরে নামাজ
- পড়ে না। এরকম নামাজ রসূলের মতো হলো না। তাই সুন্নত পদ্ধতি নামাজ আদায় করতে হবে তা নাহলে নামাজ কবুল হবে না।
- হালাল খাবার না খাওয়া, যারা হালাল ভাবে অর্থ উপার্জন করে না এবং হালাল খাবার খায় না তাদের নামাজ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।নামাজ কবুল না হওয়ার কারন – নামাজ ভঙ্গের কারন হাদিসে উল্লেখ আছে- হালাল রুজি ভক্ষন না করার কারনে বান্দার নামাজ আল্লাহর কাছে কবুল হয় না।
- লোক দেখানো নামাজ আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন- দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের, যারা তাহাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসিন, যারা লোক দেখানোর জন্য উহা করে। (সুরা মাউন,আয়াত ৪-৬)
- আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথার এক বিঘত ওপরেও ওঠে না-১. যে ব্যক্তি জনগনের অপচ্ছন্দ হওয়া সত্ত্বেও তাদের ইমামতি করে, ২. যে নারী তার স্বামীর অসুন্তুষ্টিসহ রাতযাপন করে, ৩. পরস্পর ছিন্নকারি ভাই। (তিরমিজি : ৩৬০)
- বিনা কারনে জামায়াতে নামাজ না পড়লে , সঠিক সময়ে নামাজ না পড়লে নামজ কবুল হবে না।
- যারা যাকাত দেয় না, তাদের নামাজ কবুল হয় না।
- পলায়ন কারি গোলামের নামাজ কবুল হয় না।
- যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে হত্যা করে এবং তাতে সে গর্ববোধ করে খুশি হয় তার নামাজ কবুল হয় না।
- যে ব্যক্তি মুসলিসদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার নামাজ কবুল হয় না। ( মুসলিম, সহীহ ১৩৭০)
- উপরের কারনগুলো যদি আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে অবশ্যই তা বর্জন করুন। কারন এই কারনগুলো থাকলে আল্লাহর দরবারে আমাদের নামাজ কবুল হবে না।
আরো পড়ুনঃ যে কারণে রিজিকের বরকত চলে যায়
ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত
- সকল ইবাদতের মুল লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তবে ইবাদাত কবুল হওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে। নিন্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো-
- ইমান ও ইসলাম: আল্লাহর ইবাদত কুবুলের প্রথম শর্ত হচ্ছে ইমান ও ইসলাম। ইসলামের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে ইমান আনতে হবে। নামাজ কবুল না হওয়ার কারন – নামাজ ভঙ্গের কারনইসলামে বিশ^জগতের সবকিছু সৃষ্টি, ইহকাল ও পরকাল, জন্ম, মৃত্যু সম্পর্কে সুন্দর ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আর ইসালামের মূল বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস করে সে অনুযায়ী আমল করা হলো ইমান। ইবাদতে কবুল করতে অবশ্যই এসব বিষয় মানতে হবে।
- ইখলাস: আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ইবাদত করার নাম হলো ইখলাস। ইবাদতে ইখলাস ধরে রাখতে হলে কয়েকটি বিষয় মানতে হবে। যেমন- লোক দেখানো ইবাদত করা যাবে না, ইবাদত করে মানুষের সামনে বলা যাবে না।
- সুন্নাহর অনুসরন: যেকোনো ইবাদতে আল্লাহর রাসূলের সুন্নত থাকা আবশ্যক। সুন্নত পদ্ধতিতে ইবাদত করতে হবে। সুন্নত ছাড়া কোনো ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
- হালাল ভক্ষন: ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল করতে চাইলে অবশ্যই ইবাদত কারীকে হালাল খাবার খেতে হবে, হারাম ভক্ষনকারীর ইবাদত আল্লার কাছে পৌঁছায় না।
- শিরকমুক্ত: ইবাদত কবুল হওয়ার আরেকটি শর্ত হলো শিরকমুক্ত থাকতে হবে। মহান আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার মনে করলে সেটা শিরক হয়। আর শিরককারীকে আল্লাহ তায়ালা পচ্ছন্দ করেন না। তাই ইবাদত কবুল করতে চাইলে শিরকে জড়ানো যাবে না।
- ইবাদত কুবুল হওয়ার জন্য উপরের শর্ত গুলো অবশ্যই আমাদের পালন করতে হবে। আমাদের প্রিয় নবী সা. প্র্যাক্টিক্যাল ভাবে সকল ইবাদতের শিক্ষা আমাদেরকে দিয়ে গেছেন। আমরা যদি তার দেখানো পথ অনুসরন করে চলি তাহলে আমাদের সকল ইবাদত কবুল হবে। ইন শা আল্লাহ
আরো পড়ুনঃ তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের
নামাজ ভঙ্গের কারন
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থমস্তিষ্কের অধিকারী মানুষের ওপর নামাজ ফরজ করা হয়েছে। নামাজ ইসলামের খুবই গুরত্বপূর্ন একটি ইবাদত। নামাজ ব্যতিত কোনো ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রত্যেক ব্যক্তিকে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ইসলামে ফরজ করে দিয়েছেন। নামাজ পড়ার
কিছু সঠিক নিয়ম আছে যেগুলো না জেনে নামাজ পড়লে নামাজ হয় না। নামাজ ভঙ্গের বেশ কিছু কারন রয়েছে, যেগুলো আমরা করলে নামাজ হয় না।নামাজ কবুল না হওয়ার কারন – নামাজ ভঙ্গের কারন বিভিন্ন কারনে আমাদের নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়, সে কারনগুলো আমাদের অবশ্যই জানতে হবে।
- নামাজ ভঙ্গের কারনগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:নামাজ অশুদ্ধভাবে পড়লে নামাজ ভেঙে যায়। নামাজে যদি আমরা সঠিকভাবে দুয়া, সুরা না পড়ি তাহলে নামাজের অর্থ পাল্টে যায়, ফলে আমাদের নামাজ ভেঙে যায়।
- নামাজের মধ্যে কথা বললে নামাজ হয় না, নামাজ ভেঙে যায়।
- নামাজ পড়া অবস্থায় কাউকে সালাম দেওয়া এবং কারো সালামের উত্তর দেয়া যাবেনা, এর ফলে নামাজ ভেঙে যায়।
- নামাজের মধ্যে আমরা অনেকেই উহঃ আহঃ শব্দ করে থাকি, ইচ্ছাকৃত ভাবে এরকম শব্দ করলে নামাজ ভেঙে যায়।
- বিনা কারনে কাশি দিলে নামাজ ভেঙে যায়।
- বিপদের মধ্যে, দুনিয়ার কোনো বিষয় নিয়ে কষ্ট পেলে নামাজে শব্দ করে কাঁদা যাবে না।
- তিন তাসবীহ পরিমান সময় সতর খুলে নামাজ পড়লে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়।
- ইমাম সাহেবের নামাজে ভুল হলে মুক্তিাদি ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ নামাজে ভুল ধরিয়ে দিলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায় নামাজ কবুল না হওয়ার কারন – নামাজ ভঙ্গের কারন।
- নামাজ পড়ার সময়কালে ভালো কিংবা খারাপ কোনো সংবাদ পেলে উত্তর দেওয়া যাবে না।
- নামাজ পড়ার সময় কিবলার দিক থেকে মাথা বা ঘার ঘুরে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়।
- নামাজে শব্দ করে হাসা যাবে না, এর ফলে নামাজ ভেঙ্গে যায়।
- নামাজের মধ্যে দুনিয়াবি কোনো কিছু চাওয়া যাবে না।
- নামাজের মধ্যে কোনো কিছু খেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়।
- হাঁচির উত্তর নামাজ চলা কালিন সময়ে দেওয়া যাবে না।
- নামাজ কুরআন শরীফ দেখে দেখে পড়লে নামাজ ভেঙে যায়।
- নাপাক জায়গায় সেজদা করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়।
- ইমামের আগে মুক্তাদি দাড়ালে অর্থাৎ ইমামের আগে আগে নামাজ পড়লে, নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়।
- উপরে নামাজ ভঙ্গের কারনগুলো তুলে ধরেছি , এছারাও অনেক কারন সেগুলো ভালোভাবে জেনে নিবেন, অজু ভঙ্গের কারনগুলোও জেনে নিবেন কারন ওজু সঠিক না হলে নামাজ হবে না। নামাজ সম্পর্কে সকল তথ্য ভালো করে জেনে নামাজ পড়বেন। তাহলে অবশ্যই আপনার নামাজ কবুল হবে। ইন শা আল্লাহ
নামাজ না পড়ার শাস্তি
আল্লাহর ওপর ইমান আনার পর সর্বপ্রথম করনীয় আমল হলো নামাজ। মুসলমান ও কাফেরদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারির বাহ্যিক মাধ্যম হলো নামাজ। যারা নামাজ পড়েনা তারাকে কাফেরদের কাতারেই দাড় করানো হয়।নামাজ কবুল না হওয়ার কারন – নামাজ ভঙ্গের কারন হাশরের মাঠে সর্বপ্রথম
নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। নামাজ না পড়লে এর শাস্তি ভয়াভহ। নামাজ আদায় না করার শাস্তি শুধু পরকালে নই দুনিয়াতেও মহান আল্লাহ তায়ালা শাস্তি দিয়ে রেখেছেন।
নামাজ না পড়ার দুনিয়াবি শাস্তি
- যে ব্যাক্তি নামাজ পড়ে না সে ব্যাক্তিকে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার বরকত থেকে বঞ্চিত করে।
- বেনামাজির চেহার উজ্জলতা নষ্ট হয়ে যায়।
- যে ব্যক্তি নামাজ ত্যাগ করলেও, যদি অনান্য ভালো কাজ করে তাহলে, সে ভালো কাজের পুরষ্কার থেকে বঞ্চিত হবে।
- নামাজ ত্যাগকারী ব্যক্তির জন্য যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে সে দোয়া বেনামাজির কোনো উপকারে আসবে না।
- নামাজ ত্যাগকারী ব্যক্তিকে আল্লাহর কোনো সৃষ্টিজীব পচ্ছন্দ করবে না।
- বেনামাজি ব্যক্তি ইসলামের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হবে।
মৃত্যুর সময় শাস্তি
- নামাজ না পড়া ব্যক্তির মৃত্যু অপমানের সহিত হবে।
- ক্ষুদার্থ অকস্থায় মৃত্যুবরন করবে নামাজ কবুল না হওয়ার কারন – নামাজ ভঙ্গের কারন।
- বেনামাজির মৃত্যু অত্যন্ত পিপাসার্ত অবস্থায় হবে। এমন পিপাসার্ত অবস্থায় যে সমুদ্র পরিমান পানি পান করালেও তার পিপাসা মিটবে না।
কবরের শাস্তি
- বেনামাজির কবর সংকীর্ন করে দেওয়া হবে, এতটা সংকীর্ন যে পাঁজরের এক দিকের হাড় অন্য দিকের হাড়ের সাথে ঢুকে যাবে।
- বেনামাজির কবরে জাহান্নামের আগুন জ্বালানো হবে।
- বেনামাজির কবরে বিশাল একটা ভয়ংকর সাপ দংশন করতেই থাকবে।
কেয়ামতের শাস্তি
- বেনামাজির হিসাব কেয়ামতে অত্যন্ত কঠিন করা হবে।
- বেনামাজির ওপর আল্লাহ তায়ালা নারাজ থাকবে।
- বেনামাজিকে অপমানের সাথে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
- নামাজ না পড়ার শাস্তি কি আমরা জানলাম, নামাজ না পড়ার শাস্তি কতটা ভয়াভহ হতে পারে আমরা কিছু হলেও আন্দাজ করতে পেরেছি। তাই শাস্তি থেকে বাঁচতে আসুন আমরা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি এবং আল্লাহর প্রিয় হয়ে উঠি।
উপসংহার
আশা করছি নামাজ কবুল না হওয়ার কারন – নামাজ ভঙ্গের কারন ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url