ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে

প্রিয় পাঠক যেকোনো ব্যবসা শুরু করার প্রথম পদক্ষেপে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া জরুরি, এবং তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো ট্রেড লাইসেন্স। ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। কিন্তু সঠিক তথ্য ও নিয়ম জানলে এটি বেশ সহজ। চলুন, আমরা এক এক করে জানব ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার সব গুরুত্বপূর্ণ দিক।
ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে

ভূমিকা

ট্রেড লাইসেন্স পেতে, আপনাকে আপনার স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা অফিসে গিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হবে।ফরম পূরণের পর, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন দোকান ভাড়া চুক্তিপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ট্যাক্স রশিদ জমা দিতে হবে। ফি পরিশোধের পর, আপনার ব্যবসার স্থান পরিদর্শন করা হবে এবং সব কিছু ঠিক থাকলে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হবে।

ট্রেড লাইসেন্স কী এবং কেন প্রয়োজন?

  • ট্রেড লাইসেন্স হলো একটি ব্যবসা বা বাণিজ্য পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার থেকে অনুমোদন। এটি সরকারী সংস্থা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক জারি করা হয়। যে কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোর জন্য এটি অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশে এটি ব্যবসার নৈতিকতা বজায় রাখা, কর সংগ্রহ নিশ্চিত করা এবং জনস্বার্থ রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন।
  • ট্রেড লাইসেন্স কেন বাধ্যতামূলক?ব্যবসার বৈধতা: ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যবসা আইনত বৈধ নয়। এটি ব্যবসার আইনি স্বীকৃতি এবং বৈধতা প্রদান করে।
  • কর পরিশোধ: ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা কর পরিশোধ করতে বাধ্য হন। এটি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক।
  • গ্রাহকের বিশ্বাস: গ্রাহকরা ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের উপর বেশি বিশ্বাস করে, কারণ এটি নির্ভরযোগ্যতার প্রতীক।
  • ব্যবসার স্থায়িত্ব: একটি বৈধ লাইসেন্স থাকার কারণে আপনার ব্যবসা দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব পায়।

ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র

ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য বিভিন্ন নথির প্রয়োজন হয়, যা স্থানীয় সরকার বা সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভায় জমা দিতে হয়। নথিপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভুল নথি জমা দিলে লাইসেন্স পেতে দেরি হতে পারে বা আবেদন বাতিলও হতে পারে।

ব্যক্তিগত ব্যবসার জন্য (সোল প্রোপ্রাইটরশিপ
  1. আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা: আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা পাসপোর্টের কপি।
  2. ব্যবসার নাম ও ঠিকানা: ব্যবসার স্থানের বৈধ কাগজপত্র, যেমন ভাড়ার চুক্তিপত্র বা জমির দলিল।
  3. ছবি: আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  4. কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN): TIN এর কপি।
  5. ব্যবসার প্রকৃতি: ব্যবসার ধরন ও কার্যকলাপ উল্লেখ করতে হবে (যেমন: দোকান, অফিস, কারখানা ইত্যাদি)।
পার্টনারশিপ বা যৌথ ব্যবসার জন্য
  • উপরের সব নথি ছাড়াও পার্টনারদের নাম এবং পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।
  • পার্টনারশিপ চুক্তিপত্রের একটি কপি জমা দিতে হবে।
  • প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বা লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানি (LLC):রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট: কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের সনদপত্র (RJSC কর্তৃক প্রদত্ত)।
  • মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন (MOA) এবং আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন (AOA)।
  • ডিরেক্টরদের পরিচয়পত্র: সকল ডিরেক্টরের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
  • কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN)।
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট: কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্টের কপি।
  • অন্যান্য নথিপত্র যা প্রয়োজন হতে পারে:ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স এর অনুমতিপত্র।
  • পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন।
  • স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন (খাবার বা ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসার ক্ষেত্রে)।

ট্রেড লাইসেন্সের জন্য প্রক্রিয়া এবং ধাপসমূহ

ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ হলেও এর কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার মাধ্যমে এই লাইসেন্স সংগ্রহ করা হয়।

ধাপ ১: আবেদনপত্র সংগ্রহ
  • সর্বপ্রথম আপনার স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে, অনলাইনে আবেদনপত্র পাওয়া যায়।
ধাপ ২: আবেদনপত্র পূরণ এবং নথিপত্র জমা
  • আবেদনপত্র সঠিকভাবে পূরণ করার পর, সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। সঠিক নথি প্রদান জরুরি, কারণ এর উপর নির্ভর করে আপনার আবেদন প্রক্রিয়ার সময় এবং সাফল্য।
ধাপ ৩: লাইসেন্স ফি প্রদান
  • ট্রেড লাইসেন্সের জন্য নির্দিষ্ট ফি রয়েছে, যা ব্যবসার ধরণ এবং আকারের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। ফি জমা দেওয়ার পর, রসিদ সংগ্রহ করুন।
ধাপ ৪: অনুমোদন এবং লাইসেন্স সংগ্রহ
  • আপনার নথিপত্র এবং আবেদন প্রক্রিয়া যাচাইয়ের পর, সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা আপনার ট্রেড লাইসেন্স অনুমোদন করবে। সাধারণত, অনুমোদনের পর কয়েকদিনের মধ্যে আপনি লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবেন।

ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ফি এবং খরচ

  1. ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ফি নির্ভর করে ব্যবসার ধরন, আকার, অবস্থান এবং সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার উপর। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফি ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ফি সাধারণত একটু বেশি হয়, বিশেষত বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে।
  2. ট্রেড লাইসেন্স ফি-এর সাধারণ তালিকা:ছোট ব্যবসা (যেমন, দোকান বা ছোট প্রতিষ্ঠান): সাধারণত ৫০০ থেকে ১০,০০০ টাকা।
  3. মাঝারি ব্যবসা (যেমন, অফিস বা কারখানা): ১০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা।
  4. বড় প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি: ৩০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা বা তার বেশি।
  5. ফি নির্ধারণের জন্য আপনার স্থানীয় সরকার সংস্থা থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা বাঞ্ছনীয়।

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন

  • ট্রেড লাইসেন্স সাধারণত এক বছরের জন্য বৈধ থাকে এবং এটি প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। নবায়ন প্রক্রিয়ায় প্রাথমিকভাবে আবেদনের মতো একই ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নবায়নের জন্য একই নথিপত্র প্রয়োজন, তবে লাইসেন্স নবায়নের জন্য ফি কিছুটা কম হতে পারে।
  • নবায়ন ফি ও পদ্ধতি:নবায়ন ফি সাধারণত মূল ফি-এর সমান অথবা কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা কম হতে পারে।
  • নবায়নের জন্য আবেদনপত্র পূরণ করে স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভায় জমা দিতে হবে।
  • নবায়নের রসিদ এবং লাইসেন্সের একটি কপি সংগ্রহ করতে ভুলবেন না।

ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে কি সমস্যা হতে পারে?

  1. বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে আইনগত সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।
  2. ট্রেড লাইসেন্স না থাকার ফলে কিছু সমস্যার উদাহরণ:আইনি জরিমানা ও শাস্তি: ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করলে স্থানীয় সরকার কর্তৃক জরিমানা বা শাস্তি প্রাপ্ত হতে পারেন।
  3. ব্যবসা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি: স্থানীয় সরকার আপনার ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে যদি ট্রেড লাইসেন্স না থাকে।
  4. কর সুবিধা হারানো: ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে আপনি কর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
  5. গ্রাহকের অবিশ্বাস: গ্রাহকরা ট্রেড লাইসেন্সবিহীন ব্যবসার প্রতি আস্থা রাখতে পারে না, যা আপনার ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসার ঝুঁকি

  • যারা ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করছেন, তাদের জন্য ঝুঁকি রয়েছে। নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি লাইসেন্সবিহীন ব্যবসার কারণে হতে পারে:আইনগত জটিলতা: ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে ব্যবসাটি অবৈধ বলে গণ্য হবে। এটি আপনাকে আইনগত ঝামেলায় ফেলতে পারে এবং জরিমানা দিতে হতে পারে।
  • কর পরিশোধে অসুবিধা: ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে, কর পরিশোধ করা কঠিন হবে এবং কর ফাঁকি দেওয়ার কারণে বড় শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।
  • ব্যবসা বন্ধ করার ঝুঁকি: স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আপনার ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে যদি তারা জানতে পারে যে আপনি ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
  • ক্রেডিবিলিটি এবং বিশ্বাসের অভাব: গ্রাহক এবং বিনিয়োগকারীরা আপনার ব্যবসার ওপর আস্থা হারাতে পারেন, যদি আপনি বৈধ লাইসেন্স ছাড়া কাজ করছেন।

উপসংহার

আশা করছি ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url