ঋণ মুক্তির দোয়া এবং আমল করার সঠিক নিয়ম
প্রিয় পাঠক ইসলামে ঋণ আদান-প্রদান করা বৈধ। এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। রাসুল (সা.) নিজেই ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। ঋণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। এবং তাঁর উম্মতকে ঋণমুক্তির দোয়া শিখিয়েছেন। সুতরাং ইসলাম মুসলমানদের বিপদে-আপদে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে অন্যের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছে সঠিক সময়ে তা পরিশোধ করা নির্দেশও দিয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে ঋণ করা কারো জীবনেই সুখকর বিষয় নয়। তবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে বাধ্য হয়েই অনেকে ঋণ করে। তবে সাধ্যের বাইরে ঋণ করা কোন ভাবেই কাম্য নয় একজন মুমিনের ক্ষেত্রে।
ভূমিকা
পৃথিবীতে সবার অর্থনৈতিক অবস্থা সব সময় অনুকূল থাকে না। কখনো কখনো সমস্যা ও প্রয়োজন মানুষকে ঋণ করতে বাধ্য করে। তাই বাধ্য হয়ে অন্যের সহযোগিতার মুখাপেক্ষী হতে হয়। তাই জীবন চলার পথে ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ইসলাম এ বিষয়ে মানুষকে উৎকৃষ্ট পদ্ধতি ও দিকনির্দেশনা দিয়েছে। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে ঋণ গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছেন, তেমনি যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আরো পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
ঋণ মুক্তির দোয়া এবং আমল করার সঠিক নিয়ম
ঋণমুক্ত হতে সক্ষম হওয়া এবং দ্রুত ঋণ পরিশোধ করার জন্য মহানবী (সা:) কিছু আমল এবং দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত আছে – “একবার হযরত আলী (রা:) এর কাছে একজন চুক্তিবদ্ধ গোলাম (ক্রীতদাস) এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপারগ হয়ে পড়েছি।
আপনি আমাকে সাহায্য করুন।
আলী (রা:) বললেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দিব, যা আমাকে রাসূল (সা:) শিক্ষা দিয়েছেন? তুমি যদি এটা পাঠ কর, তাহলে আল্লাহই তোমার ঋণ মুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নেবেন, যদি তোমার ঋণ পর্বত সমানও হয়।” অতঃপর হযরত আলী (রা:) ওই ব্যক্তিকে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে বলেছিলেন
দোয়াটি হল اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ : “আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিকা ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান সিওয়াক।”
অর্থ : “হে আল্লাহ ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট কর। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করোনা এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে স্বচ্ছলতা দান করো।” (তিরমিজি শরীফ, হাদিস : ৩৫৬৩)
আরো পড়ুনঃ শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম
ঋণ মুক্তির জন্য আমল
ইসলামী আমল:দোয়া: ঋণ মুক্তির জন্য নবী (সাঃ) বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন। নিয়মিত এই দোয়াগুলো পড়া ঋণ পরিশোধে সহায়তা করতে পারে।
একটি দোয়া হল: “اللهم اكفني همي وغمّي وادفع عنّي ضرّ المديونية”
(অর্থ:“হে আল্লাহ! আমার দুশ্চিন্তা ও দুঃখ দূর করুন এবং ঋণের কষ্ট আমার থেকে দূর করুন।”)
আরেকটি দোয়া হল: “اللهم ارزقني رزقاً حلالاً طيباً وأطفئ به ناري”
(অর্থ:“হে আল্লাহ! আমাকে হালাল ও পবিত্র রিজিক দান করুন এবং এর মাধ্যমে আমার ঋণের আগুন নিভিয়ে দিন।”)
ঋণ মুক্তির দোয়া ও আমল
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজা। ওয়াল আজিজী ওয়াল কাসলি। ওয়া আউযুবিকা মিনাল যুগনি ওয়াল বুখলি। ওয়া গলাবাতিন দাইন। ওয়া কহরির রিজাল।
অর্থ : হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে পানহা চাই পেরেশানি এবং দুশ্চিন্তা থেকে। অপারকতা এবং অলসতা থেকে মুক্তি চাই। হে আল্লাহ ভীরুতা এবং কাপুরুষতা এবং কৃপণতা থেকে আপনার কাছে পানহা চাই। ঋণের প্রাচুর্যতা থেকে আপনার কাছে পানহা চাই। মানুষের অনিষ্টতা এবং মানুষের জুলুম মানুষের ধমক এবং ধমকি থেকে ।
আপনার কাছে পানহা চাই।আবু উমামা বলেন রাসূল,আমাকে এই আমল শিখিয়ে দেওয়ার কিছুদিন পর আমার সকল পেরেশানি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার ঋণ আদায়ের সুন্দর ব্যবস্থা করে দিলেন।আমল করার নিয়ম : রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন, সকালে এবং সন্ধ্যায় সালাত আদায়ের পর এই দোয়াটি পড়ো তাহলে ইনশাল্লাহ আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য পাবে।
ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া
মহানবী (সা:) প্রায় সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন।
দোয়াটি হলো اللهم إني أعوذ بك من الكسل والهرم والمأثم والمغرم
উচ্চারণ : “আল্লাহুম্মা! ইন্নি আউযুবিকা মিনাল কাসালি, ওয়াল হারামি, ওয়াল মা’ছামি, ওয়াল মাগরামি।”
অর্থ : “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অলসতা, অধিক বার্ধক্য, গুনাহ এবং ঋণ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” (বুখারী : ৬০০৭)
উপসংহার
আশা করছি ঋণ মুক্তির দোয়া এবং আমল করার সঠিক নিয়ম ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url