মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আপনি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার জন্য অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করছেন কিন্তু কোথাও সদুত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না আমি আপনাকে স্টেপ বাই স্টেপমাছের উপকারিতা ও অপকারিতা জানানোর চেষ্টা করব মাছ সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু খাবারগুলোর মধ্যে একটি। এটি প্রোটিন, ওমেগা -থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে পরিপূর্ণ।
ভূমিকা
মাছে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ পাওয়া যায়। এছাড়াও মাছে চর্বি, খনিজ তেল, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস পাওয়া যায়।নিয়মিত মাছ খেলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, চোখের অসুখ, হাত-পা ব্যথা, শরীরের দুর্বলতা ইত্যাদি রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। প্রতিদিন একশ গ্রাম করে তাজা মাছ খেলে পাঁচ থেকে ছয় পয়েন্ট উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়।মাছের তেলে থাকা ডকসা হেক্সোনিক অ্যাসিড এবং এলকোসা পেন্টাএনোইক অ্যাসিড মগজের বিকাশ ঘটায়। মাছ রক্ত বাড়ায়। স্মৃতিশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। মাছ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়।
মাছের পুষ্টিগুণ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক শরীরের ক্যালরি চাহিদার ১০ শতাংশ প্রোটিন থেকে সংগ্রহ করতে হবে। সেই হিসেবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৬০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। আর এই প্রোটিনের একটি ভালো উৎস হতে পারে মাছ। কারণ ১০০ গ্রাম মাছ থেকে প্রায় ২০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
যদিও প্রজাতি ভেদে মাছের পুষ্টিগুণে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে তবে সাধারণভাবে ২০ শতাংশ প্রোটিন ধরা হয়। এছাড়াও মাছ থেকে আরো যেসব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তা হলো
ফ্যাট বা চর্বি
- আয়োডিন
- সেলেনিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন বি
- ভিটামিন ডি
- ফসফরাস
- আয়রন
- জিংক
- কোলাইন
সাধারণ মাছে প্রায় ১০ শতাংশ ফ্যাট থাকে। তবে তৈলাক্ত মাছে ফ্যাটের পরিমাণ আরো বেশি। মাছের ফ্যাটের ধরন বা নাম হলো ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 fatty acid) যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
মাছ খাওয়ার ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
মাছ শরীরের জন্য একটি উপকারী খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। মাছ খাওয়ার ১০টি উপকারিতা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়
- মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের জন্য খুব উপকারী। যারা নিয়মিত মাছ খায় তাদের ক্ষেত্রে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক যা বিশ্বজুড়ে অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।
- হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের (American Heart Association) নির্দেশনা হলো, সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে
- শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাই গর্ভবতী নারী, স্তন্যদানকারী মা ও শিশুদের মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে মাছ খেতে অনীহা দেখা যায়।
- তবে এই ব্যাপারে মায়েদের সচেতন হয়ে শিশুকে বিভিন্ন ধরনের মাছ খেতে উৎসাহিত করতে হবে।
বয়স্কদের মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি কমায়
- বয়স বৃদ্ধির সাথে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে যার মধ্যে অন্যতম একটি রোগ হলো আলজেইমার্স ডিজিজ। যাদের নিয়মিত মাছ খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদের স্মৃতি শক্তি ভালো থাকে এবং আলজেইমার্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
বিষন্নতা দূর করতে সাহায্য করে
- বিষন্নতা হলো একটি মানসিক সমস্যা যার ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। নিয়মিত মাছ খাওয়ার অভ্যাস বিষন্নতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও যারা বিষন্নতায় ভুগছেন তাদের জন্যও মাছ খাওয়া উপকারী হবে।
- কারণ মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বিষন্নতা নিরাময়ের ওষুধের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে
- রোগ জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার গুরুত্ব অপরিসীম। মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন, মিনারেলস ইত্যাদি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে তোলে।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে
- ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। তাই শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে ছোট মাছ খেতে উৎসাহিত করতে হবে।
- এছাড়াও বয়স্কদের চোখের রোগে (Age-related macular degeneration) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- অর্থাৎ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সব বয়সের মানুষের জন্য মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ভালো ঘুমের পক্ষে সহায়ক
- সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য রাতে ভালো ঘুম হওয়া জরুরী। শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতির সাথে রাতে ঘুমের সমস্যা হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে।
- সূর্যের তাপ সরাসরি ত্বকে লাগলে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। তবে যারা সূর্যের তাপ গায়ে লাগানোর সুযোগ পান না তাদের জন্য মাছ ভিটামিন ডি এর একটি ভালো উৎস হতে পারে। মাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
- গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের নিয়মিত মাছ খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। যেমনঃ মুখগহ্বর, খাদ্যনালী, পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সার।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
- মাছে ফ্যাট থাকলেও তা উপকারী ধরনের ফ্যাট অর্থাৎ এই ধরনের ফ্যাট শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। বরং নিয়মিত মাছ খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
- যাদের শরীরের ওজন বেশি তাদের জন্য ভাত (কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার) কম খেয়ে ফল, শাকসবজি ও মাছ বেশি খেতে হবে।
গলগন্ড (Goitre) প্রতিরোধ করে
- মাছ থেকে আয়োডিন পাওয়া যায়। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন রয়েছে যা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্রম ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আয়োডিনের অভাবে গলগন্ড রোগ হয়। নিয়মিত আয়োডিন সমৃদ্ধ মাছ খাওয়া গলগন্ড রোগ প্রতিরোধ করে।
মাছের অপকারিতা
মাছ খাওয়ার তেমন কোনো ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা নেই বললেই চলে। তবে সামুদ্রিক মাছে মার্কারী (Mercury) সহ ক্ষতিকর ধাতব বস্তু ও রাসায়নিক উপাদান থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য অপকারিতা বয়ে আনতে পারে। তবে তা খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ মাছে থাকা মার্কারী ও ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ ।
খুব নগণ্য যা শরীরের জন্য মারাত্মক কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। বিশেষ করে মিঠা পানির মাছে মার্কারী একদম থাকে না বললেই চলে।হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ হলো সামান্য ক্ষতি এড়াতে গিয়ে মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হওয়া যাবে না। বরং নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
তবে গর্ভবতী নারী, স্তন্যদানকারী মা ও শিশুদের জন্য সম্ভাব্য ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে সামুদ্রিক মাছ বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। একদম বর্জন করতে হবে না বরং সপ্তাহে এক থেকে দুইদিন খাওয়া যেতে পারে।
উপসংহার
আশা করছি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url