স্থায়ীভাবে মুখ ফর্সা হওয়ার ঘরোয়া উপায় ও ক্রিম
প্রিয় পাঠক উজ্জল ফর্সা ত্বকের প্রতি দূর্বলতা সবারই রয়েছে। একজন মানুষের স্ব-যোগ্যতার মধ্যে তার গায়ের রংটিই বিবেচ্য। জন্মগতভাবে আমরা একেক জন এক এক রকম গায়ের রং পাই। কেউবা কালো, কেউবা শ্যামলা, কেউবা ফর্সা। গায়ের রং কালো হলে বা শ্যামলা হলে তা নিয়ে মন খারাপ থাকে অনেকেরই। আরেকটু উজ্জল ত্বক পাওয়ার আকাঙ্খা থাকে সবারি।
ভুমিকা
গায়ের রং উজ্জ্বল বা ফর্সা হোক এই প্রত্যাশা সবারই। অনেকেই তো একধাপ এগিয়ে থাকেন। বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ব্যবহার করতে শুরু করে দেয়। এতে করে আপনার ত্বক সাময়িক সময়ের জন্য ফর্সা হলেও পরবর্তীতে ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়। এইসব প্রডাক্টের দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায় বেছে নেওয়াই শ্রেয়। কারণ ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার ভয় থাকে না।
আরো পড়ুনঃ চালের গুড়া ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক
কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়
কালো থেকে ফর্সা হওয়ার জন্য নির্ভর করুন প্রাকৃতিক বিভিন্ন ঘরোয়া উপাদানের উপর। চলুন কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক:
টমেটো এবং ওটমিল
- টমেটো এবং ওটমিল ভালোভাবে ধুয়ে ব্লেন্ডারে পেস্ট করে ত্বকের উপর ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর স্ক্রাবের মতো কিছুটা সময় ম্যাসাজ করুন। এতে করে ত্বকের কালো ভাব ধীরে ধীরে কেটে যায়।
কাঁচা হলুদ এর ফেসপ্যাক
- পরিমাণ মতো কাঁচা হলুদ বাটা অথবা হলুদের গুঁড়া এর সাথে কিছুটা পরিমাণ লেবুর রস যোগ করুন। মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহারে ত্বকের কালচে ভাব দূর হবে।
কমলালেবু এর ব্যবহার
- একটি কমলালেবুর খোসা বাটা এর সাথে অর্ধেক পরিবর্তন কমলালেবুর রস যোগ করুন। এই পেস্ট এর সাথে সামান্য পরিমাণ লেবুর রস এবং হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে সারারাত মুখে লাগিয়ে রাখুন। সকালে ধুয়ে ফেললে পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।
যষ্টিমধুর ফেসপ্যাক
- যষ্টিমধু থেকে রস বের করে নিয়ে কিছুটা তুলোর সাহায্যে রাতে ঘুমানোর আগে মুখে লাগিয়ে রাখুন। এতে করে ত্বকের ডার্কনেস এবং সূর্যের তাপ থেকে তৈরি হওয়া কালচে ভাব দূর হবে।
বেসন এর ফেসপ্যাক
- ৫ চা চামচ বেসনের সাথে এক চা চামচ হলুদ গুঁড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। ২০ মিনিট মুখে ভালো করে লাগিয়ে রেখে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে ত্বক ফর্সা হবে।
আখরোট দই, ও তিসির ফেসপ্যাক
- পরিমাণ মতো পানিতে ভেজানো বাদাম এবং আখরোট একসাথে ব্লেন্ড করে নিয়ে তার মধ্যে কিছুটা পরিমাণ দই এবং তিসি দিয়ে দিন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত রেখে দিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ত্বক ফর্সা হবে।
অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার
- অ্যালোভেরা জেল থেকে তৈরি লোশন ও ক্রিম প্রতিদিন ঘুমানোর আগে মুখে এপ্লাই করে ঘুমাতে হবে। পরের দিন সকালে মুখ ধুয়ে ফেললে পরিবর্তনটা নিজের চোখেই দেখতে পাবেন।
চালের গুড়োর ফেস প্যাক
- কাঁচা চাল ব্লেন্ড করে তার সাথে পরিমাণ মতো কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি ঘন ফেসপ্যাক তৈরি করুন। ৩০ মিনিট মুখে রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে ত্বক পরিপূর্ণভাবে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাবে।
চন্দন গুড়োর ফেস প্যাক
- চন্দন গুড়ো এর সাথে কিছুটা পরিমাণ কাঁচা দুধ একসাথে মিশিয়ে মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে আশা করি আপনার মুখে কিছুদিনের মধ্যে হাসি ফুটবে।
টমেটো ও লেবুর রস
- টমেটো পিউরি এর সাথে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে ত্বকে লাগাতে হবে। মিশ্রণটি চাইলে গলায় এবং ঘাড়ে লাগানো যেতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করবেন না।
আরো পড়ুনঃ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোন সানস্ক্রিন ভালো
ফর্সা হওয়ার ক্রিম
মুখ ফর্সা করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়, যা ত্বকের মেলানিন উৎপাদন হ্রাস করে উজ্জ্বলতা আনতে সাহায্য করতে পারে। তবে ক্রিম ব্যবহারের আগে এর উপাদান, কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি। নিচে কিছু জনপ্রিয় ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম এবং এর উপাদানগুলোর নাম দেওয়া হলো
মুখ ফর্সা করার জন্য ক্রিম এবং উপাদান
- ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি (Fair & Lovely)
- উপাদান: ভিটামিন বি৩, গ্লিসারিন
- কার্যকারিতা: ত্বক উজ্জ্বল করা এবং ত্বকের দাগ দূর করা।ল্যাকমে পারফেক্ট রেডিয়েন্স (Lakme Perfect Radiance)
- উপাদান: মাইক্রোক্রিস্টাল এবং ভিটামিন বি৩
- কার্যকারিতা: ত্বক উজ্জ্বল করা এবং কালো দাগ হ্রাস করা।লোরিয়াল হোয়াইট পারফেক্ট (L’Oreal White Perfect)
- উপাদান: মেলানিন ব্লকার এবং ভিটামিন সি
- কার্যকারিতা: ত্বক উজ্জ্বল করা এবং মেলানিন হ্রাস করা।ওলে হোয়াইট রেডিয়েন্স (Olay White Radiance)
- উপাদান: নিয়াসিনামাইড এবং হায়ালুরনিক অ্যাসিড
- কার্যকারিতা: ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা এবং উজ্জ্বলতা বাড়ানো।পন্ডস হোয়াইট বিউটি (Pond’s White Beauty)
- উপাদান: জেনো-হোয়াইট এবং ভিটামিন ই
- কার্যকারিতা: ত্বকের কালচে ভাব দূর করা এবং উজ্জ্বলতা আনা।
- আমাদের ভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে আপনারা ফর্সা হওয়ার ওষুধ সমন্ধে ও বাংলাদেশের সবচেয়ে কার্যকারী স্কিন ক্রিম ও লোশন সমন্ধে জেনে নিতে পারেন।
ব্যবহার করার আগে কিছু সতর্কতা
- ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন: ক্রিম ব্যবহারের আগে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- প্যাচ টেস্ট করুন: নতুন ক্রিম ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিন।
- সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন : ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করার সময় সানস্ক্রিন প্রয়োগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ত্বক সূর্যের আলোতে বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়তে পারে।
- উপাদান যাচাই করুন : ক্রিমে ক্ষতিকর রাসায়নিক যেমন পারাবেন, স্টেরয়েড বা হাইড্রোকুইনন থাকলে তা এড়িয়ে চলুন।
মুখ ফর্সা হওয়ার উপায়
- মুখ ফর্সা করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। চলুন আরো বিস্তারিতভাবে মুখ ফর্সা করার উপায় সমূহ জেনে নেওয়া যাক:
শসার রস ও মধু
- অর্ধেক পরিমান শসা থেকে রস বের করে তার সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা এই ফেসপ্যাকে লেবু ব্যবহার করতে পারেন।
কলা ব্যবহার করুন
- ত্বকে নিয়মিত পাকা কলা চটকে ৫ মিনিট করে লাগিয়ে রেখে কিছুটা সময় ম্যাসাজ করুন। যেকোনো ত্বকেই এটি নিয়মিত ব্যবহার করা যায়। এটি ব্যবহারে ত্বক নিজের উজ্জ্বলতা মেলে ধরে।
আলুর রস এর ব্যবহার
- আলু একটি ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়ে তার থেকে রস বের করে নিন। দিনে একবার থেকে দুই বার আলুর রস ব্যবহারে ত্বকের কালচে ভাব নিমিষেই দূর হয় এবং ত্বক ফর্সা হয়।
পেঁপে ও ডিমের ফেসপ্যাক
- ৩ চামচ পেপের রস, ২ চামচ দই, ৪ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর সাথে সামান্য পরিমাণ অলিভ অয়েল এবং একটি ডিমের সাদা অংশ যোগ করুন। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে ফ্রিজে দুই ঘন্টার জন্য রেস্টে রাখুন। পরবর্তীতে ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
দুধ, লেবুর রস ও হলুদের গুড়ার ফেসপ্যাক
- ৩ চামচ দুধ, ২ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ মধু ও পরিমাণমতো হলুদ গুঁড়া নিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। চাইলে এর সাথে কাঁচা দুধ মেশাতে পারেন। এই ফেসপ্যাক টি মুখে ব্যবহারের পর মুখ উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুলে সবথেকে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
বিট পালং এর ব্যবহার
- ৪ চা চামচ বেসন এর সাথে ২ চা চামচ হলুদের গুঁড়ো মধ্যে বিট পালং ব্লেন্ড করে তার রস মিশিয়ে নিন। মোটামুটি ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ত্বক স্থায়ীভাবে ফর্সা হবে।
স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সা করার উপায়
- ত্বকের বিভিন্ন ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে ত্বক চটজলদি পরিষ্কার হয় এবং উজ্জ্বলতা মেলে ধরে। কিন্তু স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সা করার আরো বিভিন্ন উপায় রয়েছে। স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সা করার উপায় গুলো হলো:পরিমিত পরিমাণে সুষম খাবার খেতে হবে,
- ডায়েট চার্ট এ প্রতিদিন ডিম, দুধ, সবুজ শাকসবজি, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ, পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন রাখুন,
- প্রতিদিন কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন,
- প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চার লিটার পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন,
- নিয়মিত ড্রাইভিং, জগিং, সাইক্লিং, সোয়ামিং এর মত ব্যায়াম করলে ত্বক দ্রুত ফর্সা হয়।
কি কি খাবার খেলে ত্বক ফর্সা হয়
- উঃ গ্রিন টি, গাজর, বাদাম, কলা, টমেটো এবং ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ খেলে ত্বক ফর্সা হয়। এছাড়া খাবার তালিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক সবজি রাখুন।
হলুদ খেলে কি গায়ের রং ফর্সা হয়?
- উঃ হলুদের বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গায়ের রং ফর্সা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হলুদ এর সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক কয়েকদিনের মধ্যেই ফর্সা হয়।
কি দিলে তাড়াতাড়ি ফর্সা হওয়া যায়?
- উঃ গ্রিন টি, গাজর, বাদাম, কলা, টমেটো এবং ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ খেলে দ্রুত ফর্সা হওয়া যায়।
উপসংহার
আশা করছি স্থায়ীভাবে মুখ ফর্সা হওয়ার ঘরোয়া উপায় ও ক্রিম ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url