জিলহজ্জ মাসে চুল নখ কাটার বিধানগুলো
প্রিয় পাঠক যে ব্যক্তি কোরবানি করতে ইচ্ছুক তার জন্য বিধান হচ্ছে- তিনি যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে নিজের চুল, নখ ও চামড়ার কোন অংশ কাটবেন না যতক্ষণ না তিনি কোরবানি সম্পন্ন করেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন তোমরা যখন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখ এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করার সংকল্প রাখে তখন সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।
ভূমিকা
মহান আল্লাহ এতটাই দয়ালু যে তিনি ধনী-গরিব সবার জন্যই কোরবানির সওয়াব লাভের সুব্যবস্থা রেখেছেন।রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার আগ থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।যদি কেউ সে অনুযায়ী আমল করে, তবে সেও কোরবানির পূর্ণ বরকত অর্জন করতে পারবে। তা হলো, জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানির আগ পর্যন্ত নিজের নখ, চুল, গোঁফ, নাভির নিচের পশম ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকা। এটি মুস্তাহাব আমল।
জিলহজ্জ মাসে চুল নখ কাটার বিধান
আমরা জানি যে জিলহজ্জ মাস হলো হিজরী বছরের সর্বশেষ মাস এবং হিজরী বছরের চারটি মাস আল্লাহ তায়ালার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো জিলহজ্জ মাস। জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল আজহা পালন করা হয়। জিলহজ্জ মাসের প্রথম থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের আমল রয়েছে।
এই আমল গুলো করা অনেক ফজিলতপূর্ণ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্বের মধ্যে অন্যতম হলো হজ্জ যা জিলহজ্জ মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আমরা অনেকেই জিলহজ্জ মাসে চুল নখ কাটার বিধান সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা রাখি না। একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে এবং যে ব্যক্তি কোরবানি দিবে আল্লাহতালার নামে তার জন্য জিলহজ্জ মাসে চুল নখ কাটার বিধান সম্পর্কে জানা জরুরি।
- আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, "যে ব্যক্তি জিলহজ্জ মাসে কুরবানী করবে তাহলে সে যেন তার শরীরের পশম এবং নখ না কাটে কুরবানী করা পর্যন্ত।
- " অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহতালার নামে কোরবানি করার নিয়ত করে থাকে তাহলে তিনি জিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠা থেকে শুরু করে কোরবানি করা পর্যন্ত হাতের নখ, মাথার চুল অথবা শরীরের পশম কাটা যাবে না।
- অনেকেই মনে করে এই বিধানটি রোজার সাথে সংযুক্ত কিন্তু এটি শুধুমাত্র কোরবানির সাথে সম্পর্কযুক্ত রোজার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। আমরা অনেকেই মনে করে থাকি এই বিধানটি সবার জন্য কিন্তু এমনটা নয়। এই বিধান শুধুমাত্র যারা আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার জন্য কোরবানির নিয়ত করেছেন অথবা কোরবানি করবেন তাদের জন্য।
- যে ব্যাক্তি আল্লাহ তায়ালার নামে কুরবানী করবেন তার জন্য এই বিধান প্রযোজ্য। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য এই বিধানটি আবশ্যক নয়।
- আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় যে এই কাজটি গুরুত্বপূর্ণ এতে কোন সন্দেহ নেই। সুতরাং আপনারা যারা কোরবানি করার নিয়ম করেছেন তারা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখলে কুরবানী করা পর্যন্ত চুল নখ কাটা থেকে বিরত থাকুন।
কুরবানি ঈদের আগে কি চুল ও নখ কাটা যাবে
- আমরা ইতিমধ্যে কুরবানি ঈদের আগে কি চুল ও নখ কাটা যাবে কিনা এই সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছি। যেহেতু জিলহজ্জ মাসে চুল নখ কাটার বিধান সম্পর্কে জানা হয়েছে। কুরবানী ঈদ হলো ইসলাম ধর্মের খুবই গুরুত্বপূর্ণ আচার অনুষ্ঠান।
- এই ঈদে আল্লাহ তালাকে খুশি করার জন্য আমাদের মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আঃ এর সুন্নত কুরবানী করা হয়।
- কুরবানি ঈদের আগে কি চুল ও নখ কাটা যাবে কিনা এর কিছু বিধান রয়েছে। একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই এই বিধানগুলো মেনে চলা উচিত। কারণ আমাদের প্রিয় নবী আমাদেরকে যার নিষেধ করেছে আমাদের সে সকল কাছ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং যেগুলো আদেশ করেছে সেগুলো করতে হবে।
- যে ব্যক্তি কুরবানী দিবে তার জন্য জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে কুরবানী করার আগে পর্যন্ত শরীরের পশম, চুল ও নখ ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব।
- বিভিন্ন হাদিসে এসেছে যেমন হযরত উম্মে সালামাহ রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইরশাদ করেন, "যখন প্রথম দশক অর্থাৎ জিলহজ মাসের শুরু হয় এবং তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা রাখে, সে যেন তার চুল ও শরীরের কোন অংশ স্পর্শ না করে।"{মুসলিম শরীফঃ ১৯৭৭}
- অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, "যে ব্যাক্তি জিলহজের নতুন চাঁদ দেখেছে এবং কুরবানীর নিয়ত করেছে সে যেন নিজের চুল ও নখ না কাটে।"
- {তিরমিজি শরীফঃ ১৫২৩} যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কোরবানি করার নিয়ত করে সাধারণত তার জন্য এই বিধানটি করা হয়েছে। উপরের হাদিস থেকে কুরবানি ঈদের আগে কি চুল ও নখ কাটা যাবে? বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।
আরো পড়ুনঃ কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম ও দোয়া
জিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে চুল ও নখ কাটা কি মাকরুহ
- একজন মুসলিম হিসেবে জিলহজ মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে কমবেশি আমাদের সকলের জানা আছে। আল্লাহ তায়ালার কাছে হিজরী মাসের চারটি মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো জিলহজ মাস।
- জিলহজ মাসের ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ্জ সম্পন্ন হয় এবং কুরবানীর ঈদ পালন করা হয়ে থাকে।
- যারা কোরবানি করার নিয়ত করে সাধারণত তাদের মধ্যে অনেকে জিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে চুল ও নখ কাটা কি মাকরুহ? এ বিষয়ে প্রশ্ন করে থাকে।
- যেহেতু বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে জিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে চুল ও নখ কাটা কি মাকরুহ? জানতে হবে।
- যিনি কুরবানী দিবেন তার জন্য জিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে চুল নখ না কাটা মুছতে হবে এবং কাটা মাকরুহ নয়। উপরে আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের প্রিয় নবী এ ব্যাপারে কি বলে গিয়েছেন অর্থাৎ জিলহজ্জ মাসে চুল নখ কাটার বিধান দিয়েছেন এ বিষয়ে সম্পর্কে জেনেছি।
- যে ব্যক্তি কোরবানি করবেন তাকে জিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে শরীরের যেকোন পশম এবং মাথার চুল এছাড়া হাতের নখ কাটা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তাই একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রিয় নবীর নির্দেশনা গুলো অবশ্যই মানা উচিত।
জিলহজ্জ মাসের ফজিলত সমূহ
- জিলহজ্জ মাসের অন্যতম একটি পরিচয় হলো এই মাসে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হজ্জ পালন করা হয়। আমরা জানি যে হজ পালনের জন্য সর্বোত্তম তিনটি মাসকে বিবেচনা করা হয় সেগুলো হল শাওয়াল জিলকদ এবং জিলহজ্জ। এর মধ্যে প্রধান মাস হলো জিলহজ্জ। জিলহজ মাসের অনেকগুলো ফজিলত রয়েছে।
- আমরা জানি যে আল্লাহতালার কাছে চারটি মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং এই চারটি মাস অনেক ফজিলত রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো জিলহজ্জ মাস। জিলহজ মাসের বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনে হজের মূল কার্যক্রম গুলো সম্পন্ন করা হয়।
- আল্লাহ তা'আলা বলেন, "হজ্জ সম্পাদন সুবেদিত মাসসমূহে। অথবা যে কেউ এই মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে তার জন্য হজের সময়ে অশালীন, অন্যায় আচরণ ও কলহবিবাদ বিধেয় নয়। তোমরা উত্তম কাজে যা কিছু করো, আল্লাহ তা জানেন এবং তোমরা পথের ব্যবস্থা করবে, আত্ম সংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধিসম্পন্ন ব্যক্তিরা তোমরা আমাকে ভয় কর।"{সূরা বাকারাঃ ১৯৭}
- আল্লাহতালা আরো বলেন, " প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২, যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে। যেদিন আল্লাহ তায়ালা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদা পূর্ণ। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।"{ সুরা তাওবাহঃ ৩৬}
উপসংহার
আশা করছি জিলহজ্জ মাসে চুল নখ কাটার বিধানগুলো ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url