যে কারণে রিজিকের বরকত চলে যায়

প্রিয় পাঠক রিজিক মহান আল্লাহর অন্যতম নেয়ামত গুনাহের কারণে আল্লাহ তাআলা বান্দার রিজিক কমিয়ে দেন রিজিকে বরকত আসার জন্য মুমিনের তাকওয়া অবলম্বন অত্যন্ত জরুরি। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অভাব-অনটন ও দারিদ্র্যতা চাপিয়ে দেন। এর প্রকৃত কারণ কী পাপের কারণে মানুষের রিজিক সংকুচিত হয়ে যায় এবং মানব জীবন বরকতশূন্য হয়ে পড়ে।
ছেলেদের ত্বক উজ্জ্বল করার ঘরোয়া উপায়
গুনাহের কারণে মুমিন বান্দাকে অনেক সময় দুনিয়ায় শাস্তি ভোগ করতে হয়, যার ফলে তার ওপর বড় বিপদাপদ, অভাব-অনটন, অসুস্থতা ইত্যাদি চেপে বসতে পারে।

ভূমিকা

প্রিয়নবী (স.)-এর হাদিসে এ ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।

যেসব কারণে আয়-রোজগারে বরকত কমে যায়

বরকত মহান আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত বিষয়। এটা অর্জন করতে হয় বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে। মালে, সম্পদে বরকত দিলে অল্পও অনেক হয়, আর বরকত না হলে কাঁড়ি কাঁড়ি সম্পদ দিয়েও অভাব দূর হয় না। যেসব কাজে সম্পদের বরকত নষ্ট হয়

পাপাচারে লিপ্ত হওয়া

পাপাচারে লিপ্ত হলে জীবিকায় বরকত চলে যায়। এ বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ইমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত; তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর বরকত (কল্যাণ ও প্রাচুর্য) উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল, সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের শাস্তি দিয়েছি।

প্রতারণা ও ধোঁকা দেওয়া

মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করলে এবং তাদের ধোঁকা দিলে সম্পদের বরকত চলে যায়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের এখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন কিংবা বাতিলের)। যদি তারা সত্য বলে এবং (পণ্যের) অবস্থা ব্যক্ত করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে।
  1. আর যদি মিথ্যা বলে এবং (পণ্যের) দোষ গোপন করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়।

সুদের আদান-প্রদান

সম্পদ বাড়ানোর জন্য মানুষ সুদ গ্রহণ করে। অথচ সুদের আদান-প্রদানে জীবিকার বরকত দূর হয়ে যায়। মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিঃশেষ করেন ও সদকায় প্রবৃদ্ধি দান করেন...।

নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় না করা

আল্লাহতায়ালা তার অশেষ নিয়ামত দ্বারা আমাদের ঘিরে রেখেছেন। রিজিক তার অন্যতম নিয়ামত। এসব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে বরকত ও কল্যাণ লাভ করা যায় না। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তা হলে আমি অবশ্যই তোমাদের বেশি বেশি করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (মনে রেখো) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর

কৃপণতা করা

কৃপণতা মানুষকে পাপাচারে লিপ্ত করে, যা ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে।
  • তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন তারা তা-ই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে।

প্রাপ্ত রিজিক ও তাকদিরে সন্তুষ্ট না থাকা

মহান আল্লাহ বান্দাদের জন্য রিজিক বণ্টন করে দিয়েছেন। মানুষ আল্লাহপ্রদত্ত রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট থাকলে তার জীবিকায় বরকত লাভ হয়। পক্ষান্তরে, ওই রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট না হলে জীবিকার বরকত চলে যায়। এ বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বান্দাকে প্রদত্ত জিনিসের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন।

আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তাতে যদি সে সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন এবং তাকে বৃদ্ধি করে দেন। আর যদি সন্তুষ্ট না থাকে তাহলে তাতে বরকত দেন না।

অপচয় ও অপব্যয়

বাজে কাজে ও অপ্রয়োজনে খরচ অপব্যয়। এটা মানুষের নিন্দনীয় স্বভাব, যার কারণে তার মধ্যে চৌর্যবৃত্তি, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ, উৎকোচ গ্রহণ ইত্যাদি দুশ্চরিত্র স্বভাব বিস্তার করে। এ জন্য ইসলাম এগুলো নিষিদ্ধ করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা খাও ও পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।

অন্যায় পথে সম্পদ অর্জন করা

হারাম উপায়ে সম্পদ অর্জন করলে তার বরকত দূরীভূত হয়ে যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে, তাকে বরকত দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি অসংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে, সে এমন ব্যক্তির মতো যে আহার করে, কিন্তু তৃপ্ত হয় না।

জাকাত না দেওয়া

জাকাত আদায় ফরজ। জানা সত্ত্বেও অনেকে তা আদায় করে না। ফলে ইহকালীন ও পরকালীন আজাব-গজব আপতিত হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না, তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভূপৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত, তাহলে আর কখনো বৃষ্টি হতো না।

অধিক কসম খাওয়া

  • সাধারণত মানুষ নিজের কথাকে অন্যের কাছে বিশ্বস্ত করে তোলার জন্য কসম খেয়ে থাকে। প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে অধিক কসম খাওয়া উচিত নয়। মিথ্যা কসম খাওয়া বড় ধরনের পাপ, যার কারণে সম্পদের বরকত চলে যায়। 
  • হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ে অধিক কসম করা থেকে সাবধান থেকো। কেননা নিশ্চয়ই তাতে (মিথ্যা কসমে) বিক্রি বেশি হয় কিন্তু পরে (বরকত) ধ্বংস করে।

উপসংহার

আশা করছি যে কারণে রিজিকের বরকত চলে যায় ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url