সকল ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকায় সুপার ফুড বলা হয় ডিমকে। এছাড়াও ডিমে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান।সব বয়সের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিম অত্যন্ত কার্যকর। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় গড়নে ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকর। কেননা ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
ভূমিকা
আমাদের দেহের একটি অতি প্রয়োজনিয় উপাদান হলো প্রোটিন। আর প্রোটিনের খুব ভালো একটি উৎস হলো ডিম। ডিমে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন পাওয়া যায়। ডিমে থাকা প্রোটিন আমাদের দেহের হাড়কে শক্ত এবং মজবুত করে। ডিমে থাকা প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ভালো রাখে।
ডিমের উপকারিতা কি কি-কেন ডিম খাবেন?
দেহের শক্তি যোগায় ডিম
- আমাদের প্রতিদিনের জীবন যাত্রায়, কাজ কর্মে আমাদের শক্তির প্রয়োজন আছে। ডিমে থাকা পুষ্টিগুন আমাদের দেহের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। এজন্য ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকে প্রতিদিন সকালে একটি করে ডিম খাওয়ার জন্য।
প্রোটিনের উৎস হিসাবে ডিম
- আমাদের দেহের প্রোটিনের অভাব দূর করতে ডিমের অবদান বিশেষ। ডিমের মধ্যে থাকা প্রোটিন আমাদের ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করে, আমাদের হাড় মজবুত করে। এছাড়াও দেহের শক্তি যোগাতে ডিমের অবদান অন্যতম।
শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে
- অনেকের ধারনা যে ডিম খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন যার মধ্যে কোন প্রকার ফ্যাট নেই। আমরা আমরা জানি যে ফ্যাটের কারনেই মানুষ বেশি মোটা হয়ে থাকে বা ফ্যাট যুক্ত খাবার খেলে। তাই আপনি নির্ভয়ে ডিম খেতে পারেন নিয়মিত।
হাড় শক্ত ও মজবুত করে
- ডিম হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিম খেলে হাড়ের ব্যাথা দূর হয়। এছাড়াও ডিমের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুন হাড়কে শক্তিশালী ও মজবুত করে।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াত সাহায্য করে
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া এখন অনেকের দৃষ্টিশক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে। ডিমের মধ্যে থাকা উপাদান দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যাদের দৃষ্টিশক্তি বা চোখের সমস্যা আছে তারা ডিম খেতে পারেন নিয়মিত।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- ক্যান্সার একটি মরণ ব্যাধি। ডিমের মধ্যে থাকা ভিটামিন, লিউটিন নামক উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়াও নতুন কোষ গঠনে ভূমিকা রাখে।
হার্ড ভালো রাখে ডিম
- আমাদের শরীরে হার্ড একটি গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ। হার্ড ভালো রাখা আমাদের সকলের জন্য জরুরী। ডিম খেলে হার্ডে রক্ত জমাট বাধে না এবং শরীরে রক্ত স্বাভাবিক রাখে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন রাখে
- আমাদের শরীরে ভালো এবং খারাপ এই দুই ধরনের কোলেস্টেরল আছে। ডিম খেলে ডিম আমাদের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমান কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্র বৃদ্ধি করে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন রাখে।
ত্বক ও মস্তিষ্ক ভালো রাখে
- ত্বক এবং মস্তিষ্ক ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে ডিম। প্রতিনিয়ত ডিম খেলে মস্তিস্ক ভালো, সুস্থ এবং সবল থাকে। একেই ভাবে ডিমের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুন ত্বক ভালো রাখে। তাই প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়ার অভ্যাস করুন।
গর্ভাবস্থায় ডিমের ভুমিকা
- গর্ভাবস্থায় মহিলাদের সঠিক পুষ্টির খুবই প্রয়োজন। আর এই অবস্থায় পুষ্টি যোগাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে ডিম। শিশু জন্মের পরে মাকে সুস্থ রাখতে এবং মাতৃ দুগ্ধকে পুষ্টিতে পরিপূর্ণ রাখতে সাহায্য করে ডিম।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডিমের ভূমিকা রয়েছে। ডিমের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় যার ফলে আমরা কম অসুস্থ হই। তাই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডিম খাওয়া উচিত।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
- ডিম বিভিন্ন প্রজাতির প্রানীর হয়। তেমনি কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা আছে। বাজারে প্রায় সব জায়গাতেই কোয়েল পাখির ডিম পাওয়া যায়। কোয়েল পাখির ডিম আকারে ছোট কিন্তু এর অনেক গুন আছে। চলুন জেনে নেই কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা কি কি?
- কোয়েল পাখির ডিম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়, দৃষ্টি ভালো রাখতে সাহায্য করে, শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে কাজ করে ইত্যাদি।
মাছের ডিমের উপকারিতা
- প্রতিটা জিনিসের কিছু না কিছু আলাদা উপকারিতা থাকেই। সাধারনত ডিমের উপকারিতা তো আছেই যা আমরা ইতোমধ্যে জানলাম। তেমনি মাছের ডিমের মধ্যে কিছু কিছু উপকারিতা আছে। চলুন জেনে নেই মাছের ডিমের উপকারিতা গুলো।
- মাছের ডিমে থাকা উপাদানঃ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, চোখ ভালো রাখে, রক্ত পরিষ্কার করে ও হিমোগ্লোবিন বাড়ায়, হাড় শক্ত করে এবং দাঁত মজবুত করে, রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আরো পড়ুনঃ ছাগলের দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা
মুরগির ডিমের উপকারিতা
- দেশি মুরগির ডিম ও ফার্মের মুরগির ডিমে খুব ব্যবধান নেই। মুরগির ডিমের উপকারিতা অনেক। ডিমকে একটি ভিটামিন ক্যাপসল বলেও ধরা হয়। সাধারতন ডিমের উপকারিতা সবগুলোর একই। এখন জেনে নেই মুরগির ডিমের উপকারিতা।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কোলেস্টেরল বাড়ায়, দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, চোখের জন্য উপকারী এছাড়াও উপরে যে সকল উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার সকল বিষয় মুরগির ডিমের মধ্যে আছে।
হাসের ডিমের উপকারিতা
- পুষ্টি গুনাগুণ বিবেচনা করলে হাঁসের ডিম ও মুরগির ডিম প্রায় একই। তবে হাসের ডিমে তুলনামূলক ভাবে পুষ্টি কিছুটা বেশি। একটি হাসের ডিমে ১৮১ কিলো-ক্যালরি, ১৩.৫ গ্রাম প্রোটিন, ১৩.৭ গ্রাম ফ্যাট, ৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩ মিলি গ্রাম লোহা, ২৬৯ গ্রাম মাইক্রোগ্রাম থাকে।
- হাঁসের ডিমের উপকারিতা কথা বলতে গেলে মুরগির ডিমে আর হাসের ডিমের উপকারিতা একই। ডিমের সকল উপকারিতা আছে হাঁসের ডিমেও একই উপকারিতা আছে।
কাচা ডিমের উপকারিতা কি?
- একথা সত্যি যে রান্না করে ডিম খেলে ডিমের মধ্যে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান কিছুটা নষ্ট হয়। কাঁচা ডিমে ভিটামিন বি (বি৬ এবং ফোলেট), ভিটামিন ই, খনিজ পুষ্টি উপাদান চোলিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লুটেইন এবং জেএক্সানথিন একটু বেশিই থাকে।
- কিন্তু প্রোটিনের বেলায় রান্না করা ডিমই বেশি উপকারি আছে।
- একটি কাঁচা ডিম আমাদের দেহে মাত্র ৩ গ্রাম হজমযোগ্য প্রোটিন পাওয়া যায়; অন্যদিকে একটি রান্না করা ডিমে পাওয়া যায় ৬ গ্রাম।
- কাঁচা ডিমে ভিটামিন বি ৬ পাবেন .০৮৫ মাইক্রোগ্রাম, চোলিন পাবেন ১৪৬.৯ মিলিগ্রাম। অন্যদিকে রান্না করা ডিমে ভিটামিন বি থাকে ০.৭২ মাইক্রোগ্রাম, চোলিন থাকে ১১৭ মিলিগ্রাম।
খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খেলে কি হয়?
- প্রোটিনের ঘাটতি দূর করে, চুল পড়া হ্রাস করে, এনার্জি বৃদ্ধি করে। এনার্জি বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সকালে খালি পেটে ডিম সেদ্ধ খাওয়া খুবই উপকারী। তাই প্রতিদিন খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খাওয়া শুরু করতে পারেন।
- খালি পেটে বা ভরা পেতে দুই ভাবেই ডিমের উপকারিতা আছে। সিদ্ধ ডিমে থাকে ৭৮ ক্যালরি, ৫ গ্রাম ফ্যাট, ২ গ্রাম সম্পৃত্ত ফ্যাট, ১৮৭ মিলিগ্রাম কোলেস্টরল, ৬২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম সুগার ও ৬ গ্রাম প্রোটিন। ডিম খেলে যে সকল উপকারিতা পাবেন সিদ্ধ ডিম খেলে সেই একই রকম উপকারিতা পাবেন।
প্রতিদিন ডিম খেলে কি হয়?
- সুস্থ মানুষদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে সমস্যা হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ৩০০ গ্রাম কোলেস্টেরল গ্রহন করতে পারেন সেক্ষেত্রে প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে কিছুই হবে না।
- কিন্তু মধ্য বয়স পরে আমাদের ৩টি ডিম খাওয়া উত্তম বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবুও মন খুঁতখুঁত থাকলে কুসুম বাদ দিয়ে ডিম খেতে পারেন।
ডিমের অপকারিতা
- প্রতিটা খাবারের যেমন ভাল কিছু দিক আছে তেমনি তার খারাপ দিকও আছে। ডিমের ক্ষেত্রেও ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে। অতি মাত্রায় ডিম খেলে আপনার ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত ডিম খেলে ওজন বেড়ে যায়। ডিম বেশি খেলে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও ডিমের কুসুম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
- তবে তুলনা মূলক ভাবে হিসাব করলে ডিমের তেমন কোন অপকারিতাই নেই। নিয়ম মেনে ডিম খেলে আমাদের অপকারের চেয়ে উপকারি বেশি পাওয়া যায়।
উপসংহার
আশা করছি সকল ডিমের উপকারিতা ও অপকারিত ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url