মাথা ব্যথা কমানোর সেরা ১০ টি ওষুধের নাম
প্রিয় পাঠক মাথা ব্যথা হওয়ার জন্য অনেক কারণ আছে। কারণ অনুযায়ী মাথা ব্যথা সারানোর উপায়ও কিন্তু ভিন্ন একং ভিন্ন ঔষধ খেতে হয়। ২০০ এরও বেশী মাথা ব্যথার ধরণ রয়েছে। মাথা ব্যথার রোগীদের জিজ্ঞাসা করলে জানা যায় ওষুধ খেলে তাদের মাথা ব্যাথা ভালো হয়ে যায়। তাই মাথা ব্যাথার ওষুধের নাম জানা জরুরী নিচে সংক্ষেপে মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নামতালিকা রয়েছে।
ভূমিকা
সহজ করে বললে মাথা ব্যাথা হলো একটি রোগ। অন্যভাবে বলা যায়, মাথা ব্যথা হলো মাথা, মাথার ত্বক বা ঘাড়ে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা। বেশিরভাগ মাথা ব্যথা সাধারণত টেনশন, মাইগ্রেন বা এই দুটির সংমিশ্রণেও হতে পারে। মাথা ব্যথায় যারা ভুগেন তারা জানিয়েছেন যে, ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে তারা ভালো অনুভব করেন। মাথা ব্যাথা কোন রোগ নয়। এটি অন্য রোগের উপসর্গ মাত্র। মানুষের অনেকগুলো সাধারণ সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি মাথাব্যথার সমস্যা
মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের তালিকা
প্যারাসিটামল (Paracetamol)
- প্যারাসিটামল হলো সবচেয়ে সাধারণ এবং সহজলভ্য ঔষধ যা মাথা ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে এটি নাপা, ফাস্ট, নামের ব্র্যান্ডে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত মৃদু থেকে মাঝারি মাথা ব্যথার জন্য প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এবং খুব কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। প্যারাসিটামল শরীরের প্রোস্টাগ্লান্ডিনের উৎপাদন কমিয়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- ডোজ: সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০০-১০০০ মিলিগ্রাম প্রতি ৪-৬ ঘন্টায় নেয়া যেতে পারে, তবে ২৪ ঘণ্টায় ৪০০০ মিলিগ্রামের বেশি গ্রহণ করা উচিত নয়।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত প্যারাসিটামল গ্রহণ লিভারের ক্ষতি হতে পারে।
আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen)
- আইবুপ্রোফেন একটি নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAID), যা মৃদু থেকে মাঝারি মাথা ব্যথার জন্য কার্যকর। এটি প্রদাহ কমায় এবং ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ২০০-৪০০ মিলিগ্রাম প্রতি ৪-৬ ঘন্টায় নেয়া যেতে পারে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বেশি সময় ধরে বা অতিরিক্ত ডোজ গ্রহণ করলে পাকস্থলীর সমস্যা, আলসার এবং কিডনি সমস্যা হতে পারে।
ন্যাপ্রোক্সেন (Naproxen)
- ন্যাপ্রোক্সেন আরেকটি NSAID, যা দীর্ঘস্থায়ী মাথা ব্যথা বা মাইগ্রেনের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি প্রদাহ কমিয়ে মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২৫০-৫০০ মিলিগ্রাম প্রতি ৮-১২ ঘন্টায় নেয়া যেতে পারে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ন্যাপ্রোক্সেন গ্রহণে পাকস্থলীর সমস্যা, রক্তপাত এবং কিডনি সমস্যা হতে পারে।
এসিটামিনোফেন (Acetaminophen)
- এসিটামিনোফেন প্যারাসিটামলের একটি বিকল্প নাম। এটি মৃদু থেকে মাঝারি মাথা ব্যথার জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০০-১০০০ মিলিগ্রাম প্রতি ৪-৬ ঘন্টায় নেয়া যেতে পারে, তবে ২৪ ঘণ্টায় ৪০০০ মিলিগ্রামের বেশি গ্রহণ করা উচিত নয়।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত গ্রহণে লিভারের ক্ষতি করে।
অ্যাসপিরিন (Aspirin)
- অ্যাসপিরিন আরেকটি NSAID যা মৃদু থেকে মাঝারি মাথা ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে এটি ডিসপ্রিন নামে পাওয়া যায়। এটি প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা মুক্তি দেয় এবং রক্তের প্লেটলেটের ক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।
- ডোজ: সাধারণত ৩২৫-৬৫০ মিলিগ্রাম প্রতি ৪-৬ ঘন্টায় নেয়া যেতে পারে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: অ্যাসপিরিন গ্রহণের ফলে পাকস্থলীর সমস্যা, রক্তপাত এবং কিডনি সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সুমাট্রিপটান (Sumatriptan)
- সুমাট্রিপটান হলো একটি ট্রিপটান গ্রুপের ঔষধ, যা মাইগ্রেনের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর। এটি সেরোটোনিন রিসেপ্টরের সাথে কাজ করে মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ২৫-১০০ মিলিগ্রাম প্রতি ২৪ ঘন্টায় নেয়া যেতে পারে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:সুমাট্রিপটান গ্রহণের ফলেবমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা,উদ্বেগএবং পেশীর দুর্বলতা হতে পারে। এই ঔষধটি সাধারণত প্রেসক্রিপশন ভিত্তিক পাওয়া যায়, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযাযী গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
রিজাট্রিপটান (Rizatriptan)
- রিজাট্রিপটান আরেকটি ট্রিপটান গ্রুপের ঔষধ যা মাইগ্রেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সেরোটোনিন রিসেপ্টরের সাথে কাজ করে এবং মাইগ্রেনের ব্যথা কমায়।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫-১০ মিলিগ্রাম প্রতি ২ ঘন্টায় নেয়া যেতে পারে, তবে ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ৩০ মিলিগ্রাম নেয়া যেতে পারে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: রিজাট্রিপটান গ্রহণের ফলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, এবং মুখের শুষ্কতা হতে পারে। এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।
এর্গোটামিন (Ergotamine)
- এর্গোটামিন হলো একটি ঔষধ যা ক্লাস্টার হেডেক এবং মাইগ্রেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি রক্তনালীর সংকোচন করে ব্যথা কমাতে সাহায়তা করে।
- ডোজ: সাধারণত ১-২ মিলিগ্রাম প্রতি ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টায় নেয়া যেতে পারে, তবে ২৪ ঘণ্টায় ৬ মিলিগ্রামের বেশি নেয়া উচিত নয়।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: এর্গোটামিন গ্রহণের ফলে বমি, মাথা ঘোরা, এবং পাকস্থলীর সমস্যার ঝুঁকি থাকতে পারে। এটি বাংলাদেশে কম ব্যবহৃত হয় এবং আধুনিক চিকিৎসায় এটির চেয়ে ভালো বিকল্প পাওয়া যায়।
ডিক্লোফেনাক (Diclofenac)
- ডিক্লোফেনাক একটি NSAID যা মাথা ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।
- ডোজ: সাধারণত ৫০-১০০ মিলিগ্রাম প্রতি ৮-১২ ঘন্টায় নেয়া যেতে পারে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ডিক্লোফেনাক গ্রহণের ফলে পাকস্থলীর সমস্যা, কিডনি সমস্যা, এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি হতে পারে।
১০. কেটোরোলাক (Ketorolac)
- কেটোরোলাক একটি শক্তিশালী NSAID যা তীব্র মাথা ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি প্রদাহ কমিয়ে দ্রুত ব্যথা মুক্তি দেয় এরং আরাম ফিরিয়ে দেয়।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০-৩০ মিলিগ্রাম প্রতি ৬ ঘণ্টায় নেয়া যেতে পারে, তবে ৫ দিনের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কেটোরোলাক গ্রহণের ফলে পাকস্থলীর সমস্যা, রক্তপাত, এবং কিডনি সমস্যা হতে পারে বিশেষজ্ঞগণ ব্যবস্থা পত্রে উল্লেখ করেন।
উপসংহার
আশা করছি মাথা ব্যথা কমানোর সেরা ১০ টি ওষুধের নাম ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url