শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক অনেকেই শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কীভাবে পড়তে হবে জানতে চান। সাধারণত শবে বরাতের নামাজ নফল। তাই এই নামাজ আর অন্য নামাজের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। এই রাত্রির নামাজে ভিন্ন কোনো পদ্ধতি মহানবী (সা.) অবলম্বন করেননি। স্বাভাবিক নিয়মে দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী আপনি যতটুকু পারেন পড়তে পারেন।
শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম
শবে বরাতে নফল নামাজ পড়া উত্তম। তবে এই রাতে নফল নামাজ পড়ার আলাদা কোনো নিয়ম বা নিয়ত নেই। অন্যান্য নফল নামাজ যেভাবে পড়া হয়, এ দিন রাতেও যেভাবে স্বাভাবিক নিয়মে নফল নামাজ পড়তে হবে। আলাদা করে কোনো নিয়ত করতে হবে না

ভূমিকা

কেউ এ রাতে নফল নামাজ পড়ার আলাদা কোনো নিয়ম বা নিয়ত সাব্যস্ত করলে তা বিদয়াত বলে গণ্য হবে। কারণ, শবে বরাতে নামাজ পড়ার কোনো নিয়ম বর্ণনা করেননি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসল্লাম বর্ণনা করেননি, সাহাবিরা পালন করেননি এমন কোনো বিষয়ে ইবাদত বা নির্দিষ্ট করে আমল তৈরি করলে তা বিদয়াতের অন্তর্ভুক্ত। বিদয়াত আবিষ্কারকদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আল্লাহর রাসূল

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম

  • এ নামাজ আদায়ের নিয়ম অন্যান্য নফল নামাজের ন্যায়, অর্থাৎ অন্যান্য নফল নামাজ যে রূপ দুই রাকাত কিংবা চার রাকাত করে পড়া যায় (তবে উত্তম দুই দুই করে পড়া) শবে বরাতের নামাজ ও ঠিক তাই। তবে পার্থক্য শুধু নিয়তের ক্ষেত্রে, নিয়াতের সময় শুধু শবে বরাতের নামাজের নিয়ত করবে। (শবে বরাতের নিয়ত আরবি বাংলা আমরা নিম্নে উল্লেখ করব)।
  • আল্লামা আশরাফ আলী থানভী রাঃ এর পূর্ণাঙ্গ নামাজ শিক্ষা নামক কিতাবে লিখেন, শবে বরাতের রাতে দু দু’রাকাত করে যত বেশি সম্ভব নামাজ আদায় করবে। এই নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার পড়ে সূরা ৩ বার, ১০ বার, ২১ বার, ২৭ বার, ৩৩ বার, কিংবা ৫০ বার পর্যন্ত পড়া যায়।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত

এ রাত্রিতে নফল নামাজ আদায়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট রাকআত সংখ্যা কিংবা নামাজ আদায়ের কোন নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন নেই। অন্যান্য নফল নামাজের ন্যায় যত রাকআত সম্ভব নামাজ আদায় করবে। শবে বরাতের নামাজের নিয়তের ব্যাপারেও কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই। আরবীতে নিয়্যাত করাও জরুরী নয় এক সালামে দুই রাকআত কিংবা এক সালামে ।

চার রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব নামাজ আদায় করবে।যদি দুই দুই রাকআত করে নামাজ আদায় করবে বলে ইচেছ হয় তাহলে বাংলায় এভাবে নিয়্যাত করবে যেঃআমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য দুই রাকআত নফল নামায আদায় করার নিয়্যাত করলাম- আল্লাহু আকবার। এতেই নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে। 

এরপরেও অনেকে শবে বরাতের নামাজের নিয়ত আরবিতে এবং বাংলা উচ্চারণ তালাশ করে থাকেন তাদের জন্য নিম্নে দেওয়া হলঃ
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত আরবিঃ

نَوَيُتْ اَنْ اصَّلي لِلهِ تَعَالَى رَكْعَتيْ صَلّاه ليله البراءه سَنُّهُ رَسول اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا الى جهَه اَلْكَعْبه الشَّريفُه اللَّهُ اكَّبِرْ

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণঃ
  • নাওয়াতুআন উসল্লিয়া লিল্লাহি তা”য়ালা রকাতাই সলাতি লাইলাতিল বারায়াতি সুন্নাতু রসুলিল্লাহি তা”য়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা”বাতিশ শারিফাতি “আল্লাহু আকবর”
  • শবে বরাতের নামাজের নিয়ত বাংলাঃ
  • আমি ক্যাবলামুখী হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দু’রাকাত শবে বরাতের নামাজ আদায় করছি “আল্লাহু আকবার”
  • চার রাকাতের ক্ষেত্রে দুই এর জায়গায় চার বললেই চার রাকাত নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে।

শবে বরাতের আমল

এ রাত্রিতে যতদূর সম্ভব জাগ্রত থেকে নফল নামাজ আদায় করা, যিকির করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, তাওবা করা, দরুদ শরীফ পাঠ করা, তাহাজ্জুদ নামাজ ও সালাতুত তাসবীহ নামাজ আদায় করা, কবর যিয়ারত করা, ফকীর মিসকিনকে দান খয়রাত করা, আল্লাহ পাকের রহমত লাভের জন্যে অত্যন্ত বিনীতভাবে মুনাজাত করা এবং পরদিন রোজা রাখা ভাল। 

তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, সারারাত নফল নামাজ আদায়ের কারণে যেন ফজরের নামাজ কাজা না হয়। কারণ ফজরের নামাজ ফরজ, আর এ রাত্রিতে জাগ্রত থেকে নামাজ আদায় করা নফল। নফল কখনো ফরজের সমতুল্য হবে না।এ রাত্রিতে বেশী বেশী করে আল্লাহ পাকের দরবারে কান্নাকাটি করবে এবং অতীত গুনাহ থেকে তাওবা করবে। 

উল্লিখিত বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়, আল্লাহ তায়ালা এ রাত্রে তার অসংখ্য সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু যাদের কে তিনি ক্ষমা করবেন না তারা হলোঃ মুশরিক, বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যাকারী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী, পায়ের নীচের গিরা ঢেকে কাপড় পরিধানকারী, ও পিতামাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপায়ী, যাদুকর, গণক, বাদক।

কিন্তু এরপরও আশা করা যায়, অন্তর থেকে তাওবা করলে আল্লাহ পাক হয়তো ক্ষমা করে দিবেন। কারণ আল্লাহ পাক হলেন অফুরন্ত ক্ষমাশীল এবং দয়ার সাগর । কিন্তু হক্কুল ইবাদ অর্থাৎ মানুষের অধিকার খর্ব করার অপরাধ, কাউকে কষ্ট দেয়া হলে, কারো হক নষ্ট করা হলে, অন্যের ঋণ পরিশোধ করা না হলে তা আল্লাহ পাক ক্ষমা করবেন না, যতক্ষণ না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে।

শবে বরাতের দোয়া

এর রজনীতে বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিজের অতীতের গুনাহের জন্য লজ্জিত হয়ে কান্নাকাটি করে মাফ চাওয়া। এবং আল্লাহ পাকের ক্ষমা পেতে তিনি আমাদেরকে যে সমস্ত দোয়া শিখিয়েছেন সেগুলো বেশি বেশি করে পাঠ করা। সেরকম কিছু শবে বরাতের দোয়া সমূহ নিম্নে দেয়া হলোঃ

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা”ফু আন্নি।

اللهم انت عفو تحب العفو فاعفو عني يا غفور يا غفور

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আন্তা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা”ফু আন্নি ইয়া গফুরু ইয়া গফুরু

উপসংহার

আশা করছি শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url