ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া বাংলা উচ্চারণ

প্রিয় পাঠক গোসল দৈনিন্দ কাজের অংশ সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য প্রতিদিনই গোসল করতে হয়। আবার হজ-ওমরার ইহরামের আগে এবং জুমার দিন গোসল করা আবশ্যক তাছাড়া কেউ ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হতে চাইলেও গোসল করতে হয় হাদিসে পাকে এসব কাজের আগে গোসল করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন তিনটি কারণ রয়েছে; যেসব অবস্থায় গোসল করা ফরজ।
ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া বাংলা উচ্চারণ
স্বামী-স্ত্রী সহবাসের পর গোসল না করে ঘুমিয়ে পড়লে যদি সেহরির সময় হয়ে যায় আর এ সময় গোসল করারও সময় না থাকে তবে গোসল না করে সেহরি খাওয়া যাবে কি? কিংবা গোসল না করে সেহরি খেলে রোজা হবে কি?

ভূমিকা

হ্যাঁ, সেহরি খাওয়া যেমন ফরজ নয় তেমনি সেহরি খাওয়ার জন্য পবিত্রতা ফরজ নয়। আর নামাজ আদায় করার জন্য পবিত্রতা ফরজকেউ যদি এমন অবস্থায় পড়েন যে, ফরজ গোসল করার সময় নেই; গোসল করতে গেলে সেহরি খাওয়ার সময় শেষ হয়ে যাবে; তবে গোসল না করে শুধু অজু করে বা হাত মুখ ধুয়ে আগে সেহরি খেয়ে নেবেন। পরে ফরজ গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করবেন।

গোসল ফরজ হয় যেসব কারণে

স্বপ্নদোষ হলে
  • স্বপ্নদোষ হলো ঘুম কিংবা জেগে থাকা অবস্থায় শারীরিক উত্তেজনার সঙ্গে বীর্যপাত হওয়া। যখন স্বপ্নদোষ হয় তখন ওই ব্যক্তির ওপর গোসল করা ফরজ। গোসল না করা পর্যন্ত সে অপবিত্র থাকবে।
  • তবে ঘুমে থাকা অবস্থায় উত্তেজনা অনুভব না হলেও গোসল ফরজ। কারণ অনেক সময় ঘুমে স্বপ্নদোষ হলে টের পাওয়া যায় না। ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর যদি কাপড়ে নাপাকির চিহ্ন দেখা যায় আর সেক্ষেত্রে স্বপ্ন দোষের কথা স্মরণ থাকুক আর না থাকুক এ অবস্থায়ও গোসল করা ফরজ। (হেদায়া)
স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করলে
  1. সহবাস করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর গোসল করা ফরজ। স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর গোপনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ সর্বনিম্ন সুপারি পরিমাণ অংশ প্রবেশ করালেই উভয়ের ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে। তাতে বীর্যপাত হোক আর না হোক; উভয়কে গোসল করতে হবে। (বুখারি ও মুসলিম)
  2. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি স্ত্রীর চার শাখার মাঝে বসে তার সাথে সঙ্গত হলে (সহবাস করলে), তার উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারি)
হায়েজ-নেফাস থেকে মুক্ত হলে
  • নারীদের মাসিক ঋতুস্রাব (হায়েজ) বন্ধ হলে এবং সন্তান প্রসব করার পর রক্ত (নেফাস) বন্ধ হলে পবিত্রতার নিয়তে গোসল করা ফরজ। যতদিন রক্ত বন্ধ না হবে ততদিন ওই নারী অপবিত্র থাকবে।
  • মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে নারী-পুরুষের যৌনমিলন, স্বপ্নদোষ বা যে কোনো উপায়ে বীর্যপাতের মাধ্যমে কিংবা হাফেজ-নেফাসের কারণে অপবিত্র হলে তাকে পবিত্রতা হওয়ার নির্দেশ দেন এভাবে
وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ
‘আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬)

গোসলের দোয়া

বাংলা উচ্চারণ : “নাওয়াইতুয়ান গোছলা লিরাফিল জানাবা-তি।”

ফরজ গোসলের আগে অপবিত্র অবস্থায় কি সেহরি খাওয়া যাবে

  1. পবিত্র রমজান মাস, এই মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সংযমের সঙ্গে ইবাদত করে থাকেন। এ জন্য এই মাসে পবিত্রতার বিষয়ে সবাই বেশ সতর্ক থাকেন।
  2. কিন্তু কখনো রাতে স্বপ্নদোষ বা সহবাসের কারণে গোসল ফরজ হয়ে যায়। এ অবস্থায় সেহরি খাওয়া যাবে কি না। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে নানা প্রশ্ন থাকে।
  3. রোজা রাখার উদ্দেশে শেষ রাতে ঊষা উদয়ের আগে যে পানাহার করা হয়, তা সেহরি হিসেবে পরিচিত। রোজা রাখার নিয়তে সেহরি খাওয়া সুন্নত। তবে স্বপ্নদোষ বা স্বামী-স্ত্রী সহবাসের পর গোসল করা ফরজ। এ ফরজ গোসল না করে যদি সেহরি খাওয়া হয় তাহলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে কি-না, তা নিয়ে অনেকের মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে।
  4. আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকাকেই রোজা বলা হয়। আপাতদৃষ্টিতে রোজা সহজ সরল একটি ধর্মীয় আচরণের বিষয়। কিন্তু এটি নিয়ে বেশকিছু ভুল ধারণা বিদ্যমান, যেগুলো নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তেমনই একটি হচ্ছে, ফরজ গোসলের আগে সেহরি খাওয়ার বিষয়টি নিয়ে।
  5. রমজান মাসে রোজা পালনের উদ্দেশ্যে সেহরি খাওয়া সুন্নত। ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী গোসল ফরজ হওয়ার পর খাওয়া-দাওয়া ও অন্যান্য কাজের আগে পবিত্র হয়ে নেয়া উত্তম। তবে জরুরি নয়। গোসল করা ছাড়াও খাওয়া যায়। কারণ সেহরি খাওয়ার জন্য পবিত্রতা ফরজ নয়, বরং সুন্নত।
  6. বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই বিষয়ে দুইভাবে বর্ণিত আছে, গোসল ফরজ হওয়ার পর খাওয়া-দাওয়া ও অন্যান্য কাজের পূর্বে পবিত্র হয়ে নেওয়া উত্তম। তবে জরুরি নয়। গোসল করা ছাড়াও খাওয়া যায়। তাই গোসল ফরজ অবস্থায় সেহরি খেতে পারবেন।
  7. ফকিহবিদদের মতে, যদি গোসল ফরজ হয়ে যায় তা সত্ত্বেও সেহরি খেয়ে রোজা রাখলে রোজা সহি হবে। তবে ফজরের ওয়াক্ত থাকতেই গোসল করে সময় মতো নামাজ আদায় করতে হবে।
  8. এই বিষয়ে মুসলিম শরিফের ২৫৯২ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, গোসল ফরজ হওয়া সত্ত্বেও বিনা ওজরে কোনো কারণ ছাড়া অপবিত্র অবস্থায় এক ওয়াক্ত নামাজের সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়া মারাত্মক গোনাহ।
  9. হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রমজান মাসে স্বপ্নদোষ ব্যতীতই অপবিত্র অবস্থায় রাসুল (সা.) সুবহে সাদিক অতিক্রম করতেন। অতঃপর তিনি গোসল করে রোজা রাখতেন।
ফরজ গোসলের নিয়ত
  • বাংলা উচ্চারণ : “নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফইল জানাবাতি।”
  • অর্থ : “আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি।”

ফরজ গোসলের নিয়ম

  • নিম্নে ফরজ গোসলের নিয়ম দেওয়া হলো –গোসলের দোয়া পড়া
  • তারপর গোসলের নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে দু হাত কব্জি পর্যন্ত ভালো করে ধৌত করতে হবে।
  • এরপর শরীরের কোন জায়গায় অপবিত্র বস্তু লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে।
  • তারপর অজু করতে হবে। গড়গড়ার সাথে কুলি করতে হবে, রোজাদার হলে গড়গড়া করা যাবে না। তিনবার কুলি করা সুন্নত
  • তারপর তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে
  • অজুর পর মাথায় এমনভাবে পানি ঢালতে হবে যেন চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছে যায়।
  • এরপর ডান কাঁধে পরে বাম কাঁধে পানি ঢেলে সমস্ত শরীর ধৌত করতে হবে যেন শরীরের কোন অংশ শুকনো না থাকে।
  • সর্বশেষে পা ধুতে হবে
  • এরপর সারা শরীর কোন কাপড় বা গামছা দিয়ে মুছে শুকনো কাপড় পড়তে হবে।

উপসংহার

আশা করছি ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া বাংলা উচ্চারণ ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url