ভূমিকম্প কী, কেন হয় এবং আমাদের করণীয়

প্রিয় পাঠক ভূমিকম্প অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো একটি দুর্যোগ হলেও এর পূর্বাভাস করা কঠিন। স্বাভাবিক অবস্থা থেকে এটি হঠাৎ অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ আতঙ্কিত হয়। এতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ে। বাংলাদেশে অবশ্য বড় ভূমিকম্প তেমন একটা হয়নি। হতাহতের সংখ্যাও বেশি নয়। তবে হতাহতের কারণ ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হওয়া এ জন্য দরকার সচেতন হওয়া।
ভূমিকম্প কী, কেন হয় এবং আমাদের করণীয়

ভূমিকা

বিশেষ করে ভূমিকম্পে দালানকোঠার নিচে পড়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। পরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ না করলে, প্রয়োজনীয় বিল্ডিং কোড মেনে না চললে কী ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। এছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন নিরাপদভাবে স্থাপনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হবেন না। নিজেকে শান্ত রাখুন। বাড়ির বাইরে থাকলে ঘরে প্রবেশ করবেন না।

ভূমিকম্প কী

  • ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূ অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন ভূমি কম্পন হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনই ভূমিকম্পন। 
  • হঠাৎ যদি ঘরের কোনো জিনিস দুলতে শুরু করে—যেমন, দেয়ালঘড়ি, টাঙানো ছবি বা খাটসহ অন্য যেকোন আসবাব—বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে। সহজ কথায় পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই ভূমিকম্প।
  • সারা পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে—প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প। 
  • ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ভূমিকম্প কেন হয়

  1. ভূ-অভ্যন্তরে স্থিত গ্যাস যখন ভূ-পৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর উপরের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। 
  2. তখনই ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের অনুভব হয় যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে—ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতি জনিত কারণে।

ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়লে করণীয়

  • ধূলাবালি থেকে বাঁচার জন্য আগেই সাথে রুমাল বা তোয়ালে বা চাদরের ব্যবস্থা করে রাখুন। ম্যাচ জ্বালাবেন না। দালান ধ্বসে পড়লে গ্যাস লিক হয়ে থাকতে পারে।
  • চিৎকার করে ডাকাডাকি শেষ উপায় হিসেবে বিবেচনা করুন। কারণ, চিৎকারের সময় মুখে ক্ষতিকারক ধূলাবালি ঢুকে যেতে পারে। পাইপে বা ওয়ালে বাড়ি দিয়ে বা মুখে শিস বাজিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে পারেন। তবে ভালো হয় সাথে যদি একটি রেফারির বাঁশি বা হুইসেল থাকে, তার প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন আগেই।
  • বাড়ির তাক, আলমারি ইত্যাদির উপর জিনিস রাখা উচিত নয়। ভূমিকম্পের সময় এগুলো পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে।
  • বাইরে বের হবার সময় অনেকেই ওপর হতে কোনো কিছু পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে থাকেন। এটা এড়াতে মাথার ওপর শক্ত বোর্ড বা ট্রে জাতীয় কিছু ধরে রাখুন। এতে ওপর থেকে কিছু পড়লেও আপনার মাথায় আঘাত লাগবে না। বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় ভূমিকম্প হলে বালিশটি মাথার নীচ হতে মাথার ওপরে আনুন।
  • সিনেমা হল, অডিটোরিয়াম, ডিপার্টমেন্ট স্টোর, রেলস্টেশন বা এয়ারপোর্টের মতো পাবলিক প্লেসে থাকলে সেখানে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের পরামর্শ অনুসরণ করুন।
  • ভূমিকম্পের সময় আপনি যদি গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকেন তাহলে ধীরে ধীরে আপনার গাড়িটি রাস্তার বামপাশে পার্ক করুন। কোনো অবস্থাতেই ভূমিকম্পের সময় গাড়ি চালাবেন না।
  • ভূমিকম্পের সময় আপনার গাড়িটি পাহাড়ী এলাকায় থাকলে ভূমিধ্বস এবং গড়িয়ে পড়া পাথরের আঘাত এড়াতে নিরাপদ স্থানে গাড়িটি পার্ক করুন।
  • ভূমিকম্প এলাকা হতে নিরাপদ এলাকায় সরে যাবার জন্য গাড়ি ব্যবহার করার চেয়ে পায়ে হাঁটা অনেক নিরাপদ।
ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব
  1. ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব সাধারণত কয়েক সেকেন্ড হয়ে থাকে। কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হয়ে যেতে পারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। ভূমিকম্পের মাত্রা অনুযায়ী ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। 
  2. ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয় তার নাম রিখটার স্কেল। রিখটার স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। এই স্কেলে মাত্রা ৫-এর বেশি হওয়া মানেই ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা। 
  3. ভূমিকম্প এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে এর মাত্রা ১০ থেকে ৩২ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা—৫ - ৫.৯৯ মাঝারি, ৬ - ৬.৯৯ তীব্র, ৭ - ৭.৯৯ ভয়াবহ এবং ৮-এর উপর অত্যন্ত ভয়াবহ।

ভূমিকম্পের সময় কী করবেন

  • ভূমিকম্প হচ্ছে টের পেলে বা খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা ও উন্মুক্ত স্থানে আশ্রয় নিন।
  • উঁচু ভবনে থাকলে এবং বের হতে না পারলে জানালা বা দেয়ালের পাশে অবস্থান না নিয়ে শক্ত কোনো বীম, টেবিলের নিচে অবস্থান নিন।
  • হতবিহ্বল না হয়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন।
  • বহুতল ভবনে একই জায়গায় অনেক মানুষ একসঙ্গে না থেকে ভাগ হয়ে আশ্রয় নিন।
  • আপনার মুঠোফোনে ফায়ার সাভির্স এবং দরকারি মোবাইল নম্বরগুলো আগাম সতর্কতা হিসেবে আগেই রেখে দিন। বিপদের সময় আপনার কাজে লাগবে।
  • দ্রুত নামার জন্য ভবন থেকে লাফিয়ে পড়বেন না।
  • ভূমিকম্পের সময় সম্ভব হলে মাথার ওপর শক্তকরে বালিশ অথবা অন্য কোনো শক্ত বস্তু [কাঠবোর্ড, নরম কাপড় চোপড়ের কুণ্ডলি] ধরে রাখুন।
  • গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে অবস্থান নিন।
  • উচু ভবন থেকে দ্রুত নামার জন্য লিফট ব্যবহার করবেন না।
  • ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি খোলা জায়গায় থামিয়ে গাড়িতেই থাকুন।
  • একবার ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যাকে ‘আফটার শক’ বলে। নিজেকে বিপদমুক্ত ভাবতে অন্তত একঘণ্টা সময় নিন।

ভূমিকম্পের পরে করণীয়

  1. ঘর যদি তেমন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাহলে ভূমিকম্পের পরে ঘরে ফিরুন। গ্যাস লাইন লিক হয়েছে কিনা তা না জেনে গ্যাসের চুলা জ্বালাবেন না। সতর্কবার্তা শুনুন, আরও ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা। ধ্বংসাবশেষে খালি পায়ে বা সাধারণ কোনো জুতা পরে হাঁটবেন না।
  2. বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা নিরাপদ না থাকলে বাড়িতে থাকবেন না। মোমবাতির পরিবর্তে ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করুন। বৈদ্যুতিক সুইচ অন করার আগে বিদ্যুৎ অফিসে ফেঅন কের জেনে নিন। কেননা বিদ্যুৎ বিস্ফোরণ হতে পারে। আপনার প্রিয়জনকে জানান আপনি নিরাপদ আছেন।

উপসংহার

আশা করছি ভূমিকম্প কী, কেন হয় এবং আমাদের করণীয়ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url