শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম - শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রিয় পাঠক শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে মেরাজ’ বলা হয়। শবে মেরাজ কথাটিআরবি থেকে এসেছে।ইসলামে শবে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এই রাতেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। এ রাতেই সালাত বা নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয় এবং প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ আদায়ের বিধান আসে।
শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম - শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

ভূমিকা

শবে মেরাজ উপলক্ষে শরিয়তে নির্দিষ্ট কোনো আমলের কথা উল্লেখ নেই। তবে এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটান। বিশেষত, এ উপলক্ষে বিভিন্ন মসজিদে ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিল আয়োজন করা হয়। কেউ কেউ নফল রোজা পালন করেন এবং তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করেন।

শবে মেরাজ নামাজ কত রাকাত

বর্তমান সময়ে আধুনিকতার জন্য আমরা অনেকেই শবে মেরাজের ইতিহাস ভুলতে চলেছি। তাই আমরা অনেকেই জানিনা শবে মেরাজের নামাজ কয় রাকাত করে পড়তে হয়। তাই আপনাদের জন্য বিস্তারিতভাবে আজকের পোস্টে তুলে ধরেছি শবে মেরাজের নামাজ কত রাকাত। শবে মেরাজের নামাজ নফল নামাজ হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত।
  • তাই দু রাকাত করে নফল নামাজ আকারে যে যতো খুশি ততো বেশী আমল করতে পারে। সর্বনিম্ন ১২ রাকাত পড়তে হবে, ২ রাকাত করে সর্বমোট ১২। আপনারা চাইলে আরো বেশি বেশি নফল নামাজ পড়তে পারেন।
  • বিশেষ দ্রষ্টব্য: এশার নামাজের বিতর নামাজ শবে মেরাজের নামাজের শেষে পড়তে হবে।

শবে মেরাজের নামাজের নিয়ত

  1. যারা শবে মেরাজের নামাজ পড়বেন বা ওই রাত্রিতে আমল করবেন ভাবছেন। তাদের জন্য লাইলাতুল মেরাজের নামাজের নিয়ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকের পোস্টে উল্লেখ করেছি শবে মেরাজের নামাজের নিয়ত। মনে মনে বাংলা নিয়ত সবচাইতে ভালো।
  2. আরবি নিয়তঃ নাওয়াইতুআন উছাল্লিয়া লিল্লাহে তা’আলা রাক’আতায় ছালাতি লাইলাতিল মে’রাজ মুতাওইয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু একবার।
  3. বাংলা নিয়তঃ কিবলামুখী হইয়া ২ রাকাত লাইলাতুল মেরাজের নফল নামাজ পড়তেছি আল্লাহু আকবার

শবে মেরাজের রোজা কয়টি

  • আমরা আমাদের সমাজে তাকালে দেখতে পাই অনেক চাচি মামি খালা শবে মেরাজের রোজা রাখার জন্য বসে আছে। অনেক সময় তারা জিজ্ঞাসা করে শবে মেরাজে কয়টি রোজা রাখতে হবে। তাই নিচে তুলে ধরা হয়েছে শবে মেরাজের রোজা কয়টি।
  • সাধারণত সব চন্দ্র মাসের ১৪ বা ১৫ তারিখে রোজা রাখা বিশেষ ফজিলত পূর্ণ। সোমবার ও বৃহসপতিবার রোজা রাখা সুন্নত। সেই হিসেবে আমরা রজব মাস এর ১৪ বা ১৫ তারিখে রোজা রাখতে পারি। 
  • কিন্তু শবে মেরাজকে উপলক্ষে কোন রোজা রাখা যাবে না। সুতরাং শবে মেরাজের রোজা কয়টি বা শবে মেরাজের রোজা কত তারিখে এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া যাবে না ।
  • শবে মেরাজের রোজা কয়টি এটা যদি পাঠকের মূল প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাহলে উত্তর হবে এমন যে রজব মাস জুড়ে দশটা রোজা রাখার কথা অনেক হাদীস শরীফে আছে। সুতরাং আমরা চন্দ্র মাসের ৩, ১৪, ১৫, ২০ এই তারিখগুলোতে রোজা রাখতে পারি।

শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম

  1. শবে মেরাজ আমরা পেয়েছি নবীজির কারণে। কারণ নবীজি আরবি ক্যালেন্ডার এর রজব মাসের ২৬ তারিখ আসমানে গমন করেন। সেখানে আল্লাহ-তালার সাথে দেখা করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আল্লাহর কাছ থেকে হুকুম হিসেবে নবীজি পান। তারপর থেকে সকল মুসলিম নর-নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে।
  2. তাই সেই রাত্রি কে স্মরণ করে অনেকেই শবে মেরাজের নামাজ পড়ে থাকে। নিচে আমরা তুলে ধরেছি কিভাবে শবে মেরাজের নামাজ আদায় করতে হবে। নিয়ম গুলো দেখুন:২ রাকাত করে নামাজ আদায় করবেন
  3. ৪ রাকাত পর পর মোনাজাত করতে পারেন
  4. বেশি বেশি জিকির করবেন
  5. নামাজের নিয়ত উপরে দেওয়া হয়েছে
  6. সর্বনিম্ন ১২ রাকাত নামাজ আদায় করবেন।
  7. এশার বিতর নামায সবার পরে পড়বেন।

শবে মেরাজের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়

  • শবে মেরাজের নামাজের জন্য কোন নির্দিষ্ট সূরা নেই। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো সূরা পড়তে পারেন। তবে, কিছু সূরা আছে যেগুলো শবে মেরাজের নামাজের জন্য বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
  • এই সূরাগুলো হল:সূরা কাফিরুন: এই সূরায় কুফর ও শিরকের বিরুদ্ধে বক্তব্য রয়েছে।
  • সূরা ইখলাস: এই সূরায় আল্লাহর একত্বের বর্ণনা রয়েছে।
  • সূরা ফালাক: এই সূরায় সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া হয়েছে।
  • সূরা নাস: এই সূরায় মানুষের অন্তরে ওসওয়াসা ঢোকানো শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া হয়েছে।
  • এছাড়াও, আপনি নিম্নলিখিত সূরাগুলোও পড়তে পারেন:সূরা ইয়া সিন: এই সূরায় কিয়ামতের বর্ণনা রয়েছে।
  • সূরা আল-মুলক: এই সূরায় আল্লাহর রাজত্বের বর্ণনা রয়েছে।
  • সূরা আন-নাহল: এই সূরায় আল্লাহর সৃষ্টির বিস্ময়কর দিকগুলোর বর্ণনা রয়েছে।
  • সূরা আর-রহমান: এই সূরায় আল্লাহর রহমতের বর্ণনা রয়েছে।
  • শবে মেরাজের নামাজ ১২ রাকাআত নফল নামাজ। প্রতি দুই রাকাআতের পর সালাম ফেরাতে হবে। প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য কোন সূরা পড়তে হবে। নামাজের পর দোয়া করা উচিত।

শবে মেরাজের নামাজের ফজিলত

শবে মেরাজের নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করা যায়।এই নামাজের মাধ্যমে পাপ-মোচন লাভ করা যায়।এই নামাজের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা লাভ করা যায়।শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোনো আমলের কথা শরীয়তে উল্লেখ করা হয়নি। তারপরও এ রাতে ধর্মপ্রাণ মানুষ বিশেষ ইবাদত বন্দেগিতে লিপ্ত থাকতে পছন্দ করেন।

বিশেষত এ রাতকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মসজিদে কিংবা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রথা বহুদিন যাবত্ চলে আসছে। অনেকে এ উপলক্ষে নফল রোজা রাখেন। তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করেন।তবে অন্যান্য দিনের মতো এ রাতেও নফল ইবাদত করতে কোনো বাধা নেই। তাছাড়া রজব মাস আমলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস।

এই মাস থেকে মহানবী (স.) রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন। উম্মে সালমা (রা.) বলেন, নবী করিম (স.) রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘যখন রজব মাস আসত, তা আমরা নবীজি (স.)-এর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম।’

নফল নামাজ-রোজা যেকোনো রাতে করতে নিষেধ নেই, বরং উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই এ রাতের নির্দিষ্ট কোনো আমলের কথা না বলা হলেও কেউ আল্লাহপ্রেমে রাতের নামাজ-তেলাওয়াতে মশগুল হলে অসংখ্য সওয়াবের অধিকারী হবেন ইনশাল্লাহ।

উপসংহার

আশা করছি শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম - শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url