রোজা রাখা অবস্থায় মাসিক হলে রোজা হবে কি

প্রিয় পাঠক মাসিক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা জানতে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন আমরা আজকের এই পোস্টে মাসিক অবস্থায় মহিলাদের নামাজ রোজার বিধান কি, পিরিয়ডের কত দিন পর রোজা রাখা যাবে, অনিয়মিত মাসিক হলে রোজা হবে কি এবং রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
রোজা রাখা অবস্থায় মাসিক হলে রোজা হবে কি

ভূমিকা

যেমন অনেক সময় দেখা যায় রমজান মাসে মাসিক হয়। এই সময় আমরা রোজা রাখতে পারি না এই অবস্থায় আমাদের কি করা উচিত? এই বিষয়ে হাদিস কি বলে আমরা প্রত্যেকে জানি যে মাসুক অবস্থায় অথবা পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নামাজ পড়া যায় না সাথেই রোজাও রাখা যায় না তবে এই বিষয়টুকু কতটুকু যৌক্তিক? এই পোস্টে আমরা মাসিক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পিরিয়ডের কত দিন পর রোজা রাখা যাবে

  1. রমজান মাস পবিত্রতার মাস এই মাসে আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক বেশি ইবাদত বন্দেগী করে নিজের ভুলগুলোর ক্ষমা চেয়ে থাকি। আমাদের অনেকেরই পিরিয়ড সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেও লজ্জা পায়। এই জন্য পিরিয়ড হলে কতদিন পর্যন্ত নামাজ রোজা থেকে বিরত থাকতে হয়।
  2. সেই সম্পর্কে বেশিরভাগ মেয়েরাই জানে না শরীয়তের পরিভাষায় পিরিয়ডকে হায়েয বলে। পিরিয়ডের সময়সীমা সর্বনিম্ন ৩ দিন ৩ রাত এবং সর্বাধিক দশ দিন দশ রাত এই সময় গুলো নামাজ পড়া নিষে। নামাজ পুরোপুরি মাফ হয়ে যায় এবং পরে কাজা নামাজও পড়তে হয় না কিন্তু রোজার সাময়িকভাবে বাদ হয় এবং পরে রোজাগুলো কাজা তুলতে হবে।
  3. এছাড়াও ওয়াক্তের নামাজ এখনো আদায় করেননি কিন্তু নামাজ পড়ার সময় এখনো আছে এই অবস্থায় পিরিয়ড শুরু হলে সেই ওয়াক্তের নামাজ মাফ হয়ে যাবে নামাজের শেষ ওয়াক্তে পিরিয়ড হয়েছে কিন্তু এখনো যদি নামাজ না পড়ে থাকেন তাহলে সেটা কাজা করতে হবে না।যদি কারো 10 দিনের কম স্রাব হয় এবং এমন সময় গিয়ে পিরিয়ড শেষ হয় যে খুব তাড়াতাড়ি ফরজ গোসল করে নেওয়ার পর একবার আল্লাহু আকবার বলে সেই ওয়াক্তে নামাজ পড়তে হবে।
  4. এমন অবস্থায় নামাজ শুরু করার পর ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলেও নামাজ শেষ করতে হবে তবে ফরজের ওয়াক্ত যদি হয় নামাজ শুরু করার পর সূর্য উদিত হয়ে যায় তবে সে নামাজ কাজা করতে হবে। ( হেদায়া)আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ' তারা তোমাকে নারীদের ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তুমি বলে দাও সেটা হচ্ছে কষ্টের দায়ক বস্তু।'( সুরা বাকারা: ২২২)

রোজা অবস্থায় মাসিক হলে করণীয়

  • আমাদের মধ্যে অনেকেরই রোজা অবস্থায় মাসিক হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই কারণ কেউ যদি রোজা থাকে এবং সেই রোজা অবস্থায় যদি তার পিরিয়ড হয়ে যায় তখন সে কি করবে এই ভাবনায় পড়ে যায়। রমজান মাসে সিয়ামরত অবস্থায় কারো যদি ঋতুস্রাব শুরু হয় তাহলে রোজা ছেড়ে দিবে আর রোজার সঙ্গে যাতে মিলে না যায় তাই উচিত হচ্ছে গোপনে পানাহার করা।
  • কেননা এই অবস্থায় রোজা রাখা হারাম আর হারামের সঙ্গে মিলে যায় এমন যেকোনো কাজ করা কেউ অনেক ফুকাহারা নাজায়েজ বলেছেন। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে যাতে কোন রোজাদারের সামনে প্রকাশে পানাহার না করা হয়।অবশ্যই রমজানে দিনের বেলায় যদি কোন নারীর হায়েয/ মাসিক বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি পবিত্র হয়ে যায়।
  • তাহলে তিনি ওই দিনের অবশিষ্ট সময়ের জন্য তার পানাহার থেকে বিরত থাকা জরুরী পরে ছুটে যাওয়া রোজার সঙ্গে শেষের দিনের রোজাও কাজ করতে হবে। নারী পিরিয়ডের ঋতুস্রাবে সময়সীমা ৬ বা ৭ দিন হয় কিন্তু মাঝেমধ্যে এই সময় সময় বৃদ্ধি হয়ে 8 থেকে 10 দিন বা এর বেশিও হয়ে গেলে তা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাকে নামাজ আদায় ও রোজা রাখতে পারবে না।
  • রোজা পালনকারী নারী যদি সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগেও পিরিয়ড দেখা দেয় তাহলে তার ওই দিনের রোজা বাতিল হয়ে যাবে পরে রোজাটি কাজা করতে হবে। যদি রমজান মাসের রাতে সুবহে সাদিক হওয়ার সামান্য আগেও কোন নারীর পমাসিক থেকে পবিত্র হন তবে তার ওপর রোজা পালন করা আবশ্যক।
  • কারণ তিনি রোজা পালনের সক্ষমদের অন্তর্ভুক্ত। তার রোজা পালন এখন কোন অন্তরায় না থাকায় রোজা পালন ওয়াজিব।তিনি পবিত্র হবার গোসল সুবহে সাদিকের পর করলেও রোজা শুদ্ধ হবে। যেমন গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তিস সাদিকের পর গোসল করলে তার রোজা শুদ্ধ হয়।

রোজা রাখা অবস্থায় মাসিক হলে রোজা হবে কি

  1. যদি কোন মহিলার রোজা রাখা অবস্থায় মাসিক হলে রোজা হবে কি ? উত্তর : না। কোন মেয়ে রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে সেই রোজা রাখতে পারবে না সেই দিন থেকে যতদিন পর্যন্ত হায়েজ বা মাসিক চলবে ততদিন পর্যন্ত সেই রোজা, নামাজ, কোরআন পড়তে পারবে না। মাসিক শুরু হওয়া থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত খাবার খাওয়া জায়েজ কিন্তু সেটা অন্যদের সামনে খাওয়া যাবে না তবে পরে সেগুলো রোজা কাজা আদায় করতে হবে।
  2. মাসিক চলাকালীন সময় মেয়েদের রোজা রাখার জায়েজ নয়, প্রত্যেক নারীরা প্রতি মাসে পিরিয়ড বা মাসিক হয় এটি ছয় থেকে সাত দিন স্থায়ী হয় অনেক সময় আবার কারো নয় থেকে ১১ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় সে ক্ষেত্রে পাক পবিত্র না হওয়া অব্দি নামাজ রোজা আদায় করা যাবে না। পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ সেহুতু পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং পবিত্র হওয়ার পরেই সেই রোজাগুলো কাজা আদায় করতে হবে।
  3. মহিলাদের রোজা সময় রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক পিরিয়ড হলে রোজা রাখা যাবে না এই সময় খাওয়া-দাওয়া করা যাবে। কিন্তু অন্য রোজ তার ব্যক্তির সামনে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না গোপনে পানাহার করতে হবে যদি দিনের বেলায় পিরিয়ড বন্ধ হয়। তাহলে বাকি দিন রোজাদারের মতো সকল প্রকার খাওয়া-দাওয়া ও সঙ্গম করা যাবে না এটা ওয়াজিব।

মেয়েদের মাসিক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি

  1. মেয়েদের মাসিক অবস্থায় রোজা যাবে কি রাখা যাবে কিনা সে সম্পর্কে অনেক মেয়ে জানতে চান। যারা জানেন না যে মেয়েদের মাসিক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা সেই সম্পর্কে আজকে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করব।মাসিকের সময় রোজা রাখতে পারে না নারীরা অনেক সময় দেখা যায় এ বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়েও নারীরা জানে না।
  2. তবে কাজা রোজা গুলো পরবর্তী সময়ে তুলে নিতে হবে নারীরা পিরিয়ডের ৬ থেকে ৭ দিন হয় এর মাঝের মধ্যে অনেকের সময়সীমা বৃদ্ধি পেতে পারে কারো এগারো দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে এর পরে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে এবং পবিত্র হওয়ার পরে বাকি রোজাগুলো করতে হবে এবং কাজা রোজাও তুলে নিতে হবে।
  3. কিন্তু মাসিক হওয়া অবস্থায় কখনোই রোজা পালন করা যাবে না এই রোজা হবে না। পিরিয়ডের রক্ত থাকাকালীন নারী আপন অবস্থায় থাকবে তারপর ভালো হয়ে গেলে গোসল করে নামাজ-র রোজা আদায় করতে পারবে।পিরিয়ডের সময় রোজা

নফল রোজা
  • নফল রোজা হলেও এর কাজাও নফল যদি রমজানের দিনে মধ্যভাগে ভিডিও থেকে পবিত্র হওয়া যায় তবে দিনের শুরুতে রোজা পালনের প্রতিবন্ধকতা থাকায় ওই দিনের বাকি অংশ রোজা পালন করা সহি হবে না।
সুবহে সাদিক
  • যদি রমজান মাসের রাতে সুবহে সাদিক হওয়ার সামান্য আগেও না কোন নারীর ভিডিও থেকে পবিত্র হন তবে তার ওপর রোজা পালন করা আবচক কারণ তিনি রোজা পালনের সক্ষমদের অন্তর্ভুক্ত তার রোজা পালনের কোন অন্তরা না থাকায় রোজা পালন করা ওয়াজিব।
পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজা:
  1. এখন আধুনিক যুগে এসে ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রাখে সাময়িকভাবে এবং কোন নারী যদি ওষুধের রোজা করতে চান তাহলে তার রোজা হয়ে যাবে।তবে প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো অনেক সময় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয় ।তাই আল্লাহ স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী চলা এবং ওষুধ গ্রহণ না করাই ভালো।
স্তন্যদানকারী বা অন্তঃসত্ত্বা নারীর রোজা:
  1. যে স্তন্যদানকারী কিংবা অন্তত নারীর রোজার কারণে নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করে তিনি রোজা ছেড়ে দিতে পারবেন। আনাস বিন মালেক আল কাবি (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন, ' আল্লাহও মুসাফিরদের সালাত অর্ধেক করেছেন আর গর্ভবতী স্তন্যদানকারীনি ও মুসাফির থেকে রোজা শিথিল করেছেন। '(আবু দাউদ :২৪০৮)
বাদপড়া রোজার কাজা
  • হায়েজ ও নিফাসহেতু যে কয়দিন রোজা বাদ পড়বে সে দিনগুলোর কাজা ওয়াজিব কারণ আল্লাহ তাআলা রোজা সম্পর্কিত দীর্ঘ আলোচনায় রমজান সঙ্গত কারণে বাদ পড়ার রোজা প্রসঙ্গে বলেন,' তবে অন্যদিনে এগুলো গণনা করে নেবে।'(সূরা আল বাকারা:১৮৪)এছাড়া স্তনদান কিংবা অন্তঃসত্তা জনিত কারণে বাদ পড়া রোজা গুলো স্বাভাবিক সময়ে এসবের কাজা করে নিতে হবে।

উপসংহার

আশা করছি রোজা রাখা অবস্থায় মাসিক হলে রোজা হবে কি ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url