ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন কতদিন লাগে
প্রিয় পাঠক ই-পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো পুলিশ ভেরিফিকেশন। এটি নিশ্চিত করে যে আবেদনকারী সম্পর্কে সব তথ্য সঠিক এবং বৈধ।সাধারণত, আপনার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর পুলিশ আপনার ঠিকানায় গিয়ে সত্যতা যাচাই করে। তারা আপনার পরিচয় ও তথ্য যাচাই করে এবং যদি কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে আপনার ভেরিফিকেশন রিপোর্ট প্রেরণ করে।
ভূমিকা
যদি আপনি পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করেন বা পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন সেক্ষেত্রে এই লেখাটিতে দেওয়া তথ্যগুলো আপনার অনেক উপকারী হবে। পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন স্ট্যাটাস চেক করতে হলে নিচে দেওয়া পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন কী?
পুলিশ ভেরিফিকেশন হলো মূলত একটি যাচায়করন প্রক্রিয়া। আপনি পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করার সময়ে যেসব তথ্য দিয়েছেন সেসব তথ্য আসলেও সঠিক কিনা তা যাচায় করে থাকে পুলিশ।
আপনি পাসপোর্ট পাওয়ার যোগ্য কিনা সেটাও তারা খতিয়ে দেখে। অনেক সময় অনেক অপরাধী অপরাধ করে দেশ থেকে পালাতে চাই বা মামলার সাজা।
- এড়াতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে চাই, এমন লোকরা যাতে পাসপোর্ট না পায় সেদিকেও নজর রাখা পুলিশ ভেরিফিকেশনের অন্যতম একটি কারন।
- আপনার ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় আপনি যে থানার অধীনে সে থানার একজন এসআই আপনার কয়েকটি তথ্য যাচাই করে থাকে। যেমন –আবেদনকারীর জাতীয়তা ( অর্থাৎ বাংলাদেশের নাগরিক কিনা)
- স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা। আপনি যেসব ঠিকানা দিয়েছেন তা সঠিক কিনা , আপনি আসলেও সেসব ঠিকানায় থাকেন কিনা সেটা যাচায় করা হয়
- কর্মসংস্থান। পাসপোর্টের আবেদনে উল্লেখ করা কর্মসংস্থান সম্পর্কে যাচায় করা হয়।
- পারিবারিক অবস্থা
- আদালতে আপনার বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি মামলা আছে কি না।
- পূর্বে কোন মামলা থেকে থাকলে সেই মামলা খারিজ হয়েছে এই মর্মে তথ্যাদি যাচাই করে।
ই পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন কত সময় লাগতে পারে?
পাসপোর্ট করার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে ২/৪ দিন সময় লাগতে পারে। এটা স্বাভাবিক হিসাব। কিন্তু যদি দায়িত্ব প্রাপ্ত পুলিশ আপনার দেওয়া তথ্যে কোন ভুল পান কিংবা তিনি যাচায় প্রক্রিয়াতে কোথাও ত্রুটি দেখেন তাহলে ক্লিয়ারেন্স পেতে দেরি হতে পারে। আপনার নামে মামলা বা আইনি কোন ঝামেলা থাকলে সেক্ষেত্রেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে।
- ঝামেলা হলেও ১৫/২০ দিনের মধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেয়ে যাওয়ার কথা। যদি না আপনার আবেদনের বিপরীতে নেগেটিভ রিপোর্ট যায়।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে ৭দিন সময় রাখুন।
পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন কি কি লাগে?
পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন মূলত পুলিশের ই কাজ। আপনি আপনার পাসপোর্ট পেতে আবেদনে উল্লেখ করা তথ্য ভুল না ঠিক তা পুলিশ যাচায় করবে। এটা তাদের ই কাজ। আপনার এখানে তেমন কাজ নেই। তবে আপনার থেকে আইডি কার্ড/ নাগরিক সনদ ইত্যাদি কাগজ চাইতে পারে। সেসময় আপনার দায়িত্ব সেই কাগজ গুলো তাদের কাছে দেখাতে পারা।
আরো পড়ুনঃ আমেরিকা টুরিস্ট ভিসা খরচ ২০২৪ জেনে নিন
ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া
- আপনার স্থায়ী ঠিকানার স্থানীয় থানার একজন এসআই পাসপোর্ট আবেদনের ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যে আপনার মোবাইলে ফোন দিতে পারে। তিনি আপনার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করা এবং কিছু ক্ষেত্রে থানায় হাজির হতেও বলতে পারে। সাথে নিম্নোক্ত কাগজ গুলো সাথে রাখতে পারেন।পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর ফটোকপি ( থাকলে)
- নাগরিক সনদ
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- পূর্বে কোন মামলা থাকলে সেই মামলার খারিজ সম্পর্কিত নথি
- ডকুমেন্ট গুলো সাথে করে নিয়ে যাবেন। সমস্ত তথ্যের মেইন কপি এবং ফটোকপি সাথে নেওয়া ভালো, কারণ ফটোকপি থানায় জমা দিয়ে রেখে আসতে হতে পারে। সব দরকারি কাগজের একাধিক সেট কপি করে রাখতে পারেন যদি প্রয়োজন মনে করেন।
ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশনের আপনার দায়িত্বসঠিক তথ্য প্রদান করা
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা
- পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় সহযোগিতা করা
পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে টাকা দেওয়া লাগে কিনা?
- অন রেকর্ড উত্তর হলোঃ না টাকা দেওয়া লাগে না। এটা পুলিশের নিজের দায়িত্ব আপনার তথ্য যাচায় করে পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়া।
- অফ রেকর্ড উত্তরঃ টাকা দিলে কাজ সহজ হয়। একটু চা খাওয়ার জন্য কিছু টাকা দিলে তারা খুশি হয়ে আপনার কাজ সহজ করে দিতে পারে।
- চা খাওয়ার টাকা না দিলে আপনার ক্লিয়ারেন্স পাওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে!
- তবে আমরা বলবো শুরুতেই টাকা অফার না করা। বরং তাদের কাজ তাদের মত করে করতে দেওয়া। আপনার আবেদনে এবং কাগজে কোন ভুল না থাকে কোন আইনি ঝামেলা না থাকে তাহলে টাকা ছাড়াও আপনার ক্লিয়ারেন্স পেয়ে যাওয়ার কথা।এখন বাকিটা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া আপনার দায়িত্ব।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নেগেটিভ আসে কেন? নেগেটিভ আসলে করনীয় কি?
- ভুল ঠিকানা : আপনার দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে যদি পুলিশ দেখে আপনাকে কেউ চিনে না, আপনার দেওয়া ঠিকানা ভুল তাহলে নেগেটিভ আসতে পারে।
- বর্তমান ঠিকানা ভুল : আপনার দেওয়া বর্তমান ঠিকানায় পুলিশ আপনাকে খুঁজেনা পেলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আটকে যেতে পারে।
- মামলা: যদি আপনার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারী মামলা থাকে ক্লিয়ারেন্স নাও পেতে পারেন।
- এছাড়াও আবেদনে আপনার দেওয়া তথ্যের কোন এক বা একাধিক তথ্য ভুল হলে পুলিশ আপনার ক্লিয়ারেন্ট আটকে দিতে পারে।
- পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে পাসপোর্ট স্টাটা যাচাই করলে Enrolment Pending SB Police verification এর বদলে Sent for Rework লেখা আসবে তখন ধরে নিবেন আপনার পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নেগেটিভ।
নেগেটিভ আসলে করণীয়?
- পুলিশ রিপোর্ট কেন নেগেটিভ এসেছে তা উল্লেখ করা থাকে। আপনার রিপোর্ট কেনো নেগেটিভ সেই কারন খুঁজে বের করুন এবং কারনটি সঠিক ভাবে সমাধান করুন। সমাধান হলে সঠিক তথ্য এবং সঠিক ডকুমেন্ট সহ আবার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।
- আপনি যদি ভেরিফিকেশন এর জন্য পুনরায় আবেদন করতে চান তাহলে পাসপোর্টের সহকারী পরিচালক এর নিকট আপনাকে একটি দরখাস্ত দিতে হবে ।
- এবং দরখাস্তে আপনার পাসপোর্ট এর রেফারেন্স নাম্বার বা অ্যাপ্লিকেশন আইডি এবং আপনার জন্ম তারিখ, এবং আপনার বিস্তারিত তথ্যগুলো উল্লেখ করুন। আবেদনের একটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো।
বরাবর
সহকারী পরিচালক
বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস, ঢাকা ।
বিষয়ঃ ভুল সংশোধন পূর্বক পূণঃ পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রসঙ্গে।
জনাব
যথাযথ সম্মান এর সহিত বিনীত নিবেদন এই যে; আমিঃ ( আপনার নাম), পিতাঃ ( পিতার না) মাতাঃ ( মাতার নাম), গ্রামঃ ডাকঘরঃ থানাঃ জেলাঃ বরিশাল। পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ নাম্বার …….. / OID: xxxx….. জন্ম তারিখঃ।
ই পাসপোর্ট আবেদনে আমার ………………..ভুল হওয়ার কারনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নেগেটিভ আসে। নেগেটিভ আসার কারণগুলো আমি পর্যালোচনা করেছি এবং নিজের ভুল স্বীকার করে কারণগুলো সংশোধন করতে সক্ষম হয়েছি।
অতএব, এ প্রেক্ষিতে উক্ত আবেদনের………………. পূনঃ পুলিশ তদন্ত পাঠাতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিনীত
নাম
মোবাইল নাম্বার:
পাসপোর্ট এর পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পর্কিত প্রশ্ন
( গ্রাম, থানা, ইত্যাদি ঘরে আপনি আপনার পাসপোর্ট আবেদন অনুযায়ী তথ্য দিবেন।
বাংলাদেশে পাসপোর্ট আবেদনের প্রক্রিয়া
অনেকে আছেন এখনো পাসপোর্ট এর আবেদন করেননি কিন্তু পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পর্কে জানার জন্য এই পোস্ট পড়ছেন। তাদের অনেকে পাসপোর্ট করার ব্যাপারে আগ্রহি। আপনাদের জন্য সংক্ষেপে পাসপোর্ট আবেদন করার প্রক্রিয়া জানানো হলো।
ধাপ১.
- অনলাইনে আবেদন:প্রথমে, আপনাকে [https://www.epassport.gov.bd/](https://www.epassport.gov.bd/) ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
- অ্যাকাউন্ট তৈরির পরে, আপনি “Apply Online” বোতামে ক্লিক করে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- আবেদন ফর্ম পূরণ করার সময়, আপনাকে সঠিক এবং আপ-টু-ডেট তথ্য প্রদান করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
- আবেদন ফি অনলাইনে প্রদান করতে হবে।
ধাপ২.
- পুলিশ ভেরিফিকেশন:অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার পরে, আপনাকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য নির্ধারিত সময়ে এবং স্থানে উপস্থিত হতে হবে।
- পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময়, আপনাকে অবশ্যই আপনার মূল জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
ধাপ ৩.
- পাসপোর্ট ডেলিভারি:
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরে, আপনার পাসপোর্ট আপনার নির্ধারিত ঠিকানায় ডেলিভারি করা হবে।
- আপনি চাইলে, আপনি পাসপোর্ট অফিস থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে পারেন।
পাসপোর্ট করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- জন্ম সনদ
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (যদি থাকে)
- পেশাগত পরিচয়পত্র (যদি থাকে)
- পাসপোর্ট আকারের ২ কপি ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে)
- আবেদন ফি প্রদানের রসিদপাসপোর্টের আবেদন ফিনিয়মিত পাসপোর্ট (৫ বছরের জন্য): ৩,৫০০ টাকাআমৃত পাসপোর্ট (১০ বছরের জন্য): ৫,০০০ টাকা
উপসংহার
আশা করছি ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন কতদিন লাগে ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url