জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে

প্রিয় পাঠক জমি খারিজ করার পদ্ধতি মোটেই কঠিন কোন কাজ নয়। আপনি চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনে নিজে নিজেই আপনার মালিকানা ভূক্ত জমির খারিজের কাজটি করে ফেলতে পারেন। অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি বেশ সহজ। যদি আপনি নিজের জমির খারিজটি নিজেই করতে চান সেই ক্ষেত্রে মাত্র ১১৭০ টাকা খরচ করেই আপনি আপনার জমির খারিজ করতে পারেন।
জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে

ভূমিকা

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন তার জমির খারিজ বা নাম জারি করে তখন তাকে একটি খতিয়ান সরবরাহ করা হয়। এই খতিয়ানকে সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণীও বলা হয়। কারণ এই খতিয়ানে সদ্য মালিকানাভুক্ত সম্পত্তি কোন জেলার, কোন থানার, কোন মৌজার, সম্পত্তির প্রকৃত মালিক কে, সম্পত্তির দাগ নাম্বার কত, সম্পত্তির খতিয়ান নাম্বার কত, সম্পত্তির পরিমাণ কত, খাজনা কত টাকা প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ থাকে অর্থাৎ একটি সম্পত্তির অধিকাংশ তথ্যই এই খতিয়ানের মধ্যে থাকে।

জমি খারিজ করতে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন নির্ধারিত আবেদনপত্র

  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) ফটোকপি
  • আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • জমির দলিলের (রেজিস্ট্রি, মোkabala ইত্যাদি) ফটোকপি
  • খতিয়ানের ফটোকপি
  • ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের রসিদের ফটোকপি
  • ওয়ারিশান সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • বন্টননামা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • মূল্য নির্ধারণ কর্তৃপক্ষের (VDC/DB/RA) কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের challan (যদি প্রযোজ্য হয়)
  • আইনজীবীর ক্ষেত্রে, আইনজীবীর ভিসিটিং কার্ড ও ক্ষমতাপত্রের ফটোকপি
অতিরিক্ত কাগজপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  1. যৌথ মালিকানাধীন জমি খারিজের ক্ষেত্রে, সকল সহমালিকের সম্মতিপত্র
  2. দানের মাধ্যমে জমি খারিজের ক্ষেত্রে, দানপত্র
  3. উত্তরাধিকারসূত্রে জমি খারিজের ক্ষেত্রে, উত্তরাধিকার সনদ

জমি খারিজ করতে কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া

  • উপক্ত সকল কাগজপত্র সাবধানে সংগ্রহ করুন।
  • নির্ধারিত আবেদনপত্র পূরণ করে তাতে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি লিখুন।
  • সকল কাগজপত্রের সাথে আবেদনপত্র সংযুক্ত করে জেলা/উপজেলা ভূমি অফিসে জমা দিন।
  • আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে, জমি খারিজের জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করুন।
  • নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, জমি খারিজের দলিল (মোkabala) সংগ্রহ করুন।
  • জমি খারিজের আবেদন করার পূর্বে, জমির দলিল ও খতিয়ানের সকল তথ্য যাচাই করে নিন।
  • আবেদনপত্রে সকল তথ্য সঠিকভাবে লিখুন।
  • প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সাবধানে সংগ্রহ করে আবেদনের সাথে জমা দিন।
  • নির্ধারিত ফি দিতে ভুলবেন না।
  • আবেদন যাচাই-বাছাই ও দলিল প্রস্তুতিতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। ধৈর্য ধরুন।আপনার এলাকার জেলা/উপজেলা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করুন।
  • https://banglarbhumi.gov.in/
  • এই ওয়েবসাইটে জমি খারিজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। এছাড়াও, আপনি অনলাইনে আবেদন করতে পারেন এবং জমি খারিজের বিভিন্ন ধাপের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে পারেন।
  • https://play.google.com/store/apps/details?id=com.mobile.banglarbhumi&hl=en_US
  • “Banglarbhumi” নামে একটি অ্যাপ রয়েছে যা আপনাকে আপনার জমির তথ্য অনলাইনে পরীক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।

এস এ খতিয়ান

  1. এস এ খতিয়ান এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে (State Acquisition Survey)।জমি খারিজ করার ক্ষেত্রে এস এ খতিয়ান অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৯৫০ সালের দিকে এস এ খতিয়ানের প্রচলন শুরু হয়,তখন সরকারি কর্মকর্তাগণ মাঠে না গিয়ে অফিসে বসে এস এ খতিয়ানের সকল কার্যাবলী সম্পন্ন করেন।
  2. এস এ খতিয়ান এমন একটি খতিয়ান যেটি হাতে লিখিত হয়ে থাকে এবং এটির কোন প্রিন্ট কপি হয় না। এটি সাধারণত একটিমাত্র পৃষ্ঠায় লিখিত হয়ে থাকে একের অধিক পৃষ্ঠা ব্যবহার করা গ্রহণযোগ্য নয়। এস এ খতিয়ান ৬২ খতিয়ান অথবা টেবিল খতিয়ান নামেও পরিচিত।

আর এস খতিয়ান

  • যদিও সিএস খতিয়ান জমি খারিজের অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে সিএস খতিয়ানের আবির্ভূত হওয়ার ৫০ বছর পর আরএস খতিয়ানের আবির্ভূত হয়েছিল।
  • আর এস খতিয়ানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে (Revisional Survey)। আর এস খতিয়ান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ খতিয়ান জমির ক্রয়কারী অথবা বিক্রয়কারীকে এর উপর নির্ভর হওয়াটা অত্যাবশ্যক।
  • আমাদের জন্মভূমি স্বাধীন হবার পূর্বে আর এস খতিয়ানের ব্যবহার অথবা প্রচলন একদমই ছিল না। আমাদের দেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর আর এস খতিয়ানের ব্যবহার অথবা প্রচলন শুরু হয় যার জন্য এই খতিয়ান কে বাংলাদেশ খতিয়ান হিসেবেও বিবেচিত করা হয়ে থাকে।
  • আর এস খতিয়ানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে একটি মাত্র পৃষ্ঠায় খতিয়ান করা হয় এবং লম্বালম্বি দাগ টানা থাকে।
  • বায়া দলিলের ফটোকপি: বায়া দলিল বলতে বোঝায় যার কাছ থেকে জমিটি ক্রয় করা হবে সেই ব্যক্তির দলিল। বায়া দলিল পর্যন্তই যে সীমাবদ্ধ বিষয়টি একদম এরকম নয়,বায়া দলিল ছাড়াও জমির পূর্বের সকল দলিল প্রয়োজন হতে পারে। যদিও সর্বক্ষেত্রে জমি খারিজে বায়া দলিল প্রয়োজন হয় না যদি প্রয়োজন হয় তবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ওয়ারিশান সনদ : ওয়ারিশান সনদপত্র এমন একটি প্রত্যয়ন পত্র যা এলাকার পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রদান করা হয়।
  • সাধারণত পরিবারের কোন ব্যক্তি মারা গেলে সে ব্যক্তির কাছ থেকে পরিবারের সদস্যদের যেটুকু সম্পদ পাওয়ার কথা ছিল অনেক সময় দেখা যায় পরিবারের সদস্যরা তারা তাদের প্রাপ্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে এক্ষেত্রে ওয়ারিশান সনদপত্র বিরাট ভূমিকা পালন করে।
  • ওয়ারিশান সনদপত্র এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যার মাধ্যমে পরিবারের কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তার কাছ থেকে যদি কোন সদস্য জমি প্রাপ্য থাকে তাহলে ওয়ারিশান সনদপত্রের মাধ্যমে তার প্রাপ্য সম্পদ সে সহজেই পেয়ে যেতে পারে। সুতরাং জমি খারিজে ওয়ারিশান সনদপত্রের বিকল্প নেই এর গুরুত্ব অপরিসীম এবং অতুলনীয়।
জমি উন্নয়ন কর পরিশোধের কপি:
  1. যেকোনো সম্পত্তি অর্জনের পর সরকারকে কর প্রদান করতে হয়। জমি খারিজ করার জন্য কর প্রদানের রেকর্ড অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যা যা জমি উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা পালন করে।

জমি খারিজের খরচ কত?

  • জমি খারিজের খরচ সাধারণত জমির ধরণ, আয়তন এবং এলাকা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। তবে স্থানীয় ভূমি অফিসে জমা দেওয়ার জন্য কিছু সরকারি ফি নির্ধারিত থাকে। খারিজের জন্য খাজনা পরিশোধ, দাখিলা প্রক্রিয়া, এবং অন্যান্য ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
  •  প্রায়শই খারিজ করতে ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা খরচ হতে পারে, তবে এটি জমির অবস্থান ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ওপর নির্ভর করে।

জমি খারিজ করতে কত সময় লাগে?

জমি খারিজের প্রক্রিয়া সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়, তবে জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ থাকলে এটি আরও বেশি সময় নিতে পারে। জমির তথ্য যাচাই, পরিদর্শন, এবং কর পরিশোধের তথ্য যাচাইয়ের জন্য এই সময়ের প্রয়োজন হয়। তাড়াতাড়ি খারিজ সম্পন্ন করতে হলে সব কাগজপত্র সঠিক এবং সম্পূর্ণ হওয়া আবশ্যক।

জমি খারিজ না করলে কী কী সমস্যা হতে পারে?

জমি খারিজ না করলে সরকারি রেকর্ডে জমির মালিকানা পরিবর্তন নিবন্ধিত হয় না, যা ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা তৈরি করতে পারে। জমি খারিজ না করা থাকলে নতুন মালিক জমির মালিকানা দাবি করতে পারবেন না। এটি জমির বিক্রয়, স্থানান্তর, বা ভবিষ্যতে জমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমস্যার কারণ হতে পারে।

জমি খারিজ না করার প্রভাব
  1. ভবিষ্যতে জমি বিক্রয় বা স্থানান্তর করতে সমস্যায় পড়তে পারেন।
  2. জমির মালিকানা প্রমাণে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
  3. জমি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হলেও মালিকানা বৈধ না হতে পারে।
জমি খারিজ করতে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং কীভাবে এড়ানো যায়?
  • জমি খারিজের সময় কিছু সাধারণ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন:অপ্রতুল কাগজপত্র: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দেওয়া।
  • কর বকেয়া থাকা: জমির কর পরিশোধ করা না হলে খারিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না।
  • জমি সংক্রান্ত বিরোধ: মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকলে খারিজ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে।
সমস্যা এড়ানোর জন্য টিপস:
  1. সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিন।
  2. জমির খাজনা ও কর পরিশোধের প্রমাণপত্র জমা দিন।
  3. জমির মালিকানা নিয়ে কোনো বিরোধ থাকলে আগে তা সমাধান করুন।

উপসংহার

আশা করছি জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url