মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ - মুখের দুর্গন্ধ দুর করার উপায়
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো মুখে দুর্গন্ধ মানুষের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাগুলির মধ্যে একটি। কখনও কখনও দুর্গন্ধ সৃষ্টির কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু আপনি যদি এর কারণের সঙ্গে পরিচিত হন তখন দেখবেন এটি নিরাময় করা খুবই সহজ। এছাড়াও মুখের গন্ধ আপনাকে নিজের সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতন করতে পারে।
ভূমিকা
মুখের দুর্গন্ধের কারণে কথা বলতে লজ্জা লাগছে? অনেককে এমন অবস্থায় অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়। এমন একটি সমস্যা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে আপনার ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও। মুখে দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবার ও জীবাণুর কারণে। তবে মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার পেছনে মুখের ভেতরে বা দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব ছাড়াও আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে লিভারের সমস্যা থাকলে।
করণীয়
অ্যালকোহল অবশ্যই বর্জন করতে হবে। আবার রাতের খাবার গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে। যেসব খাবার লালার প্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে সেগুলো খাওয়া ঠিক নয়। যেমন, কফি বা ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় রাতের বেলায় পান করলে প্রস্রাব বেশি হবে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাবে। মৃদু ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হতে পারে। ফলে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হবে এবং মর্নিং ব্রেথ দেখা দিবে।
মুখে লালার পরিমাণ কমে যাওয়া
লালার উৎপাদন এবং প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্ম এবং বংশবৃদ্ধি হয়ে থাকে। রাতের বেলায় দীর্ঘ সময় আমরা ঘুমন্ত অবস্থায় মুখ বন্ধ করে থাকি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই লালার প্রবাহ কমে যায় এবং মুখ শুষ্ক হয়ে যায়।
সুগারের মাত্রা বেশি হলে
রাতে রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি হলে শুষ্ক মুখ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত সুগারের ক্ষেত্রে কিডনি আর কাজ করতে পারে না। তাই অতিরিক্ত সুগার প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়। ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। ডিহাইড্রেশন হলে শুষ্ক মুখ দেখা দিবে। শুষ্ক মুখের কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করে মর্নিং ব্রেথ দেখা দিতে পারে।
মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে
রাতে মুখ দিয়ে শ্বাস নিলেও মুখ শুষ্ক হয়ে যায়। নাকে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে অথবা মুখ খোলা রেখে ঘুমালে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয়। ক্রমাগত দুশ্চিন্তা, ক্যানসার চিকিৎসার সময় কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি গ্রহণ করলে শুষ্ক মুখ হতে পারে। আর শুষ্ক মুখ হলেই আপনার মর্নিং ব্রেথ দেখা দিতে পারে।
এগুলো ছাড়া ক্রনিক সাইনোসাইটিস, এসিড রিফ্লাক্স বা এসিড উদ্গিরণ, লালাগ্রন্থির রোগ এবং অন্যান্য কিছু রোগের কারণে মর্নিং ব্রেথ হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধু মর্নিং ব্রেথ নয় বরং সারা দিনই মুখে দুর্গন্ধ হয় অনেকের।
দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার উপায়
মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ অপরিচ্ছন্নতা। প্রত্যেকের মুখেই প্রচুর জীবাণু রয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে এই জীবাণুগুলো থেকেই হতে পারে সংক্রমণ আর তা থেকে দুর্গন্ধ। দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে দিন দুই বেলা ব্রাশ করা আবশ্যক। প্রতিবারের জন্য সময় বরাদ্দ রাখুন দুই মিনিট।
ব্রাশ করার নিয়ম
জীবাণুরোধী টুথপেস্ট বেছে নিন। সকালে ও রাতে খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করতে হবে। মৃদু চাপ দিয়ে ব্রাশ করুন। অতিরিক্ত চাপ দিয়ে ব্রাশ করা উচিত নয়। এ ছাড়া দুপুরে বা অন্যান্য বেলায় খাবার খাওয়ার পর মুখ ভালোভাবে কুলকুচি করে ফেলুন। জীবাণুরোধী মাউথওয়াশ ব্যবহার করা ভালো। কর্মক্ষেত্রে কিংবা ব্যাগে একটি মাউথওয়াশের বোতল রাখুন।
দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার পরিষ্কার করতে ডেন্টাল ফ্লসের সাহায্য নিন, দিনে অন্তত একবার দাঁতের ফাঁক থেকে এসব ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। সারা দিনে একবার জিবও পরিষ্কার করে ফেলুন। কিছু কিছু টুথব্রাশের সঙ্গে জিব পরিষ্কার করার বিশেষ ব্যবস্থা থাকে।তিন মাসের বেশি কোনো টুথব্রাশই ব্যবহার করবেন না নকল দাঁত ব্যবহার করলে সেটিও নিয়মমাফিক পরিষ্কার করতে হবে।
রাতে খুলে রাখতে হবে। দাঁত বা মাড়ির কোনো সমস্যা থাকলে দন্তচিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এমনকি কোনো সমস্যা আপনি নিজে বুঝতে না পারলেও বছরে একবার দাঁত পরীক্ষা করিয়ে নিন। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে, তাই রোজা কিংবা নির্জলা উপবাসের মতো ধর্মীয় নিয়ম পালনের সময় মুখের পরিচ্ছন্নতার প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে।
খাবার সচেতনতা
পেঁয়াজ, রসুন এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার বা পানীয়র কারণে মুখে গন্ধ হতে পারে। এসব কম খাওয়াই ভালো। পানি পান করুন পর্যাপ্ত। মুখ শুষ্ক হতে দেবেন না। কফি, কোমল পানীয় এবং অ্যালকোহল কিন্তু মুখের শুষ্কতার জন্য দায়ী। শুষ্কতা এড়াতে চুইংগাম কাজে দেবে। তবে চিনিহীন চুইংগাম বেছে নেওয়া ভালো। ধূমপানের ফলে মুখ থেকে ভীষণ গন্ধ ছড়ায়।
ধূমপানের পর লজেন্স বা চুইংগাম খেয়ে এ ধরনের গন্ধ দূর করার প্রয়াসও কিন্তু খুব একটা কার্যকর হয় না। কিছু রোগ এবং কিছু ওষুধের কারণেও মুখ থেকে গন্ধ আসতে পারে। ফুসফুস বা শ্বাসনালির সংক্রমণ এসব রোগের মধ্যে অন্যতম। মুখের দুর্গন্ধ কোনোভাবেই না কমলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।যখন আপনি খাবার চিবিয়ে খান।
তখন আপনি যা খান তা আপনার দাঁতের মধ্যে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যখন দীর্ঘ সময় ধরে সেই খাবার আটকে থাকে, তখন এটি জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়। যা পরে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। রসুন, পিঁয়াজ এবং কিছু মশলা মানুষের মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে যা মানুষের মুখে অনেকক্ষণ ধরে থাকে।
তামাকজাত দ্রব্য
ধূমপান যারা করে এবং মুখে তামাক রাখে যারা, তাদের মাড়ির রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। যা মুখের দুর্গন্ধের দিকে নিয়ে যায়। তাই এদের মধ্যে যারা দুর্গন্ধ দূর করার উপায় খুঁজছে, তারা ভাজা মৌরি চিবানোর চেষ্টা করতে পারে। এটা খাবারের পর হজমের জন্য উপকারী হওয়ার পাশাপাশি মুখের দুর্গন্ধ মোকাবেলার জন্যও উপকারী।
দ্রুত মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কিছু উপায় নিচে দেয়া হলো
লবঙ্গ-
- রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ, যা মুখে গন্ধ তৈরি করা ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। ১-২টা লবঙ্গ নিয়ে চুষতে থাকুন। অল্প সময়ের মধ্যেই দেখবেন গন্ধ একেবারে চলে গেছে।
লেবুর রস
- মুখের গন্ধের কারণে যদি জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে, তাহলে নিয়মিত লেবুর রস পান ভুলবেন না যেন। কারণ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে লেবুর অন্দরে থাকা অ্যাসিটিক কনটেন্ট, মুখ গহ্বরে বাসা বেঁধে থাকা জীবাণুদের মেরে ফেলে।
নারিকেল তেল
- এই তেলে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান নিমেষে গন্ধ সৃষ্টি করা ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। ফলে মুখের গন্ধ দূর হতে সময় লাগে না।
এলাচ- ২-৩টি
- এলাচ নিয়ে মুখে ফেলে দিন। অল্প সময়ের মধ্যেই দেখবেন গন্ধ একেবারে দূরে পালাবে।
- মেথি বীজ- এক চামচ মেথি বীজ নিয়ে পরিমাণ মতো জলের সঙ্গে মিশিয়ে সেই জলটাকে ফোটান। তারপর বীজগুলিকে ছেঁকে নিয়ে সেই জল চায়ের মতো পান করুন। কয়েকদিন এমনটা করলে দেখবেন মুখের গন্ধ কমে গেছে।
দারচিনি
- মুখের ভিতরে তৈরি হওয়া জীবাণু মেরে ফলতে দারচিনির কোনো বিকল্প নেই। তাই মুখ থেকে গন্ধ বেরলেই এক চামচ দারচিনির পাউডারের সঙ্গে পরিমাণ মতো জল মিশিয়ে গরম করে নিন। তারপর সেই জল ছেঁকে নিয়ে মুখ ধোন। দেখবেন গন্ধ চলে যাবে।
উপসংহার
আশা করছি মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ - মুখের দুর্গন্ধ দুর করার উপায় ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url