দোল পূর্ণিমা পূজার নিয়ম - দোল পূর্ণিমা কেন পালন করা হয়

প্রিয় পাঠক হিন্দু ধর্মে যেকোনও অনুষ্ঠানে তিথি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়। দোলের তিথি দেখেই বাঙালি গৃহস্থ বাড়িতে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। দোল পূর্ণিমা হিন্দুদের কাছে এক অত্যন্ত পবিত্র তিথি হওয়াতে, শাস্ত্র মতে এই তিথিতে বিশেষ কিছু নিয়ম-কার্য পালন করলে মানুষের আর্থিক, পরমাত্মিক এবং সাংসারিক শ্রীবৃদ্ধি লাভ সম্ভব হয়। বহু বাড়িতেই দোলের দিন শ্রীরাধাগোবিন্দের পুজো হয়।
দোল পূর্ণিমা পূজার নিয়ম - দোল পূর্ণিমা কেন পালন করা হয়

ভূমিকা

দোলের তিথি দেখেই বাঙালি গৃহস্থ বাড়িতে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। দোল পূর্ণিমা হিন্দুদের কাছে এক অত্যন্ত পবিত্র তিথি হওয়াতে, শাস্ত্র মতে এই তিথিতে বিশেষ কিছু নিয়ম-কার্য পালন করলে মানুষের আর্থিক, পরমাত্মিক এবং সাংসারিক শ্রীবৃদ্ধি লাভ সম্ভব হয়। বহু বাড়িতেই দোলের দিন শ্রীরাধাগোবিন্দের পুজো হয়। আবার শালগ্রাম শিলার পুজোও দেখা যায় এই দিন। পূর্ণিমার পুজো সকাল থেকেই চলে বাঙালি হিন্দু বাড়িতে। এই বিশেষ তিথিতে সমস্ত নিয়মকানুন মেনে গোপাল পূজা করলে ঈশ্বরের বিশেষ কৃপা লাভ করা যায়।

দোল পূর্ণিমা কি?

  1. দোল পূর্ণিমা পূজার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগে আপনাকে সর্বপ্রথমে দোল পূর্ণিমা কি? এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হবে। দোলযাত্রা একটি সনাতন হিন্দু উৎসব। হোলি উৎসব এর সঙ্গে দোলযাত্রা উৎসব টি সম্পর্কযুক্ত। 
  2. এটির উদ্ভাবন ভারতীয় উপমহাদেশে এবং সেখানে বেশি পালন করা হয় এই উৎসবটি। দক্ষিণ এশীয় প্রবাসীদের মধ্যে এশিয়ার উষ্ণতম অঞ্চল এবং পশ্চিমা বিশ্বের কিছু অংশে ছড়িয়ে পড়েছে এই উৎসব।
  3. দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তন গান সহকারে শোভাযাত্রা বের করা হয়। 
  4. এরপর ভক্তরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন। দোল উৎসবের ফাল্গুনী পূর্ণিমা কে দোল পূর্ণিমা বলা হয়। আশা করি দোল পূর্ণিমা কি এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

দোল পূর্ণিমা কেন পালন করা হয়

আমাদের মধ্যে অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী রয়েছে যারা দোল উৎসব পালন করে আসছে কিন্তু দোল পূর্ণিমা কেন পালন করা হয় এই বিষয় সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। তাই আপনাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে আমরা দোল পূর্ণিমা কেন পালন করা হয় এই বিষয়টি সম্পর্কে এখন জানবো এরপরে দোল পূর্ণিমা পূজার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব তো বন্ধুরা জেনেনিন দোল পূর্ণিমা কেন পালন করা হয়।

  • হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী চারটি যুগ সত্যযুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ, এবং কলিযুগ। বর্তমানে চলছে কলিযুগ। এর আগে দ্বাপর যুগ থেকে শ্রীকৃষ্ণ দোলযাত্রা বা দোল উৎসব চলে আসছে। 
  • দোল পূর্ণিমা সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব গুলোর মধ্যে অন্যতম। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে দোল উৎসব মহা ধুমধামের সাথে পালন করা হয়।
  • দোল উৎসব এর অপর নাম হল বসন্ত উৎসব। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোল উৎসব অনুষ্ঠান পালন করা হয়। দোল পূর্ণিমার দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবীর ও গুলাল সহকারে শ্রীরাধা ও অন্যান্য গোপীদের সাথে রং খেলায় মেতে ছিলেন।
  •  সেখান থেকে দোলযাত্রা উৎপত্তি হয়। ১৪৮৬ সালে দোল পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাই এই তিথিতেই দোল পূর্ণিমা পালন করা হয়।

দোল পূর্ণিমাকে গৌর পূর্ণিমা বলা হয় কেন ?

  1. কিন্তু সবাইকে অবাক করে তিনি বেছে নিলেন ইংরেজি ১৪৮৬ সালের ফাল্গুন মাসের এই পুর্নিমা তিথি তথা দোল পুর্নিমার এই পুন্য তিথিকে । আনন্দ উৎসবে এক নতুন মাত্রা যোগ করলেন । আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টি হচ্ছে ঐদিন সন্ধ্যায় মহাপ্রভুর আবির্ভাবের সময় হঠাৎ করে চন্দ্র গ্রহণ শুরু হয়ে যায় । 
  2. অর্থাৎ পূর্ণিমার মাঝে চন্দ্র গ্রহণ । যাকে বলা হয় eclipse of full moon যা জোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল একটি সন্ধিক্ষণ । শত বছরে এক দুইবার খুবই অল্প সময়ের জন্য এই সন্ধিক্ষণগুলো আসে তাই মহাপ্রভুর জন্মের এই সময়কে বলা হয় Auspicious সময় । 
  3. এই রহস্যময় সময়েই দিক বিদিক আলো করে উলুধ্বনি আর শঙ্খনাদের গর্জনে শচীমাতা আর জগন্নাথ মিশ্রের ঘরে আবির্ভূত হলেন শ্রীম্মন মহাপ্রভু দোলের আগের দিন খড়, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি জ্বালিয়ে উৎসবের অঙ্গ হিসেবে কেউ কেউ তাতেও মেতে ওঠেন ৷ 
  4. যা হোলিকাদহন বা নেড়াপোড়া নামে পরিচিত সাধারণ উত্তর ভারতে হোলি উৎসবটি বাংলার দোলযাত্রার পরদিন পালিত হয় । তবে কোনও কোনও বছর হোলি এবং দোল একই দিনে পড়তেও দেখা গিয়েছে ৷

দোল পূর্ণিমার দিন গোপাল পুজোর রীতি

শাস্ত্রমতে, মনে করা হয় এই তিথিতে বিশেষ কিছু নিয়ম পালন করলে সংসারের সার্বিক সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই দিনে বিশেষ কিছু নিয়ম পেলে গোপালের পুজো করলে ঈশ্বরের কৃপাদৃষ্টি বজায় থাকে। শাস্ত্র অনুযায়ী, এই দিনেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের সঙ্গে আবির খেলায় মেতে উঠেছিলেন। হিন্দু শাস্ত্র মতে, এই তিথি অত্যন্ত পবিত্র একটি তিথি।

তাই এই দিনে কিছু নিয়ম মেনে চললে ঈশ্বরের কৃপা দৃষ্টি সর্বদা বজায় থাকবে আপনার উপর। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে সংসারের সমৃদ্ধিও। জেনে নেওয়া যাক আজ ঠিক কোন নিয়মে পুজো সারবেন। পণ্ডিতরা বলছেন, আগের দিনেই বাড়ি-ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নিন। রান্না ঘরে মজুত রাখা খাবারের কৌট বা জায়গা কখনও একদম ফাঁকা করে রাখবেন না।

কিছু না কিছু ভরে রাখবেন। এই দিনে সকালে স্নান সেরে নিন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে বাড়ির প্রধান দরজার সামনে এক বালতি জল রেখে দিন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই দরজার সামনে সেই জল ঢেলে ধুয়ে দিন। স্নানের জলে একটা বা দুটো তুলসী পাতা দিয়ে স্নান করুন। স্নানের পর ইষ্ট দেবতার স্মরণ করে পুজো সেরে নিন।

গোপাল পুজো আপনি যেভাবে করেন সেই ভাবেই সারুন সঙ্গে শুধু উল্লিখিত নিয়মগুলো মেনে চলুন। এরপর ঠাকুরের পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম সেরে নিন। ফুল মিষ্টি দিয়ে পুজো সেরে নিন। এই দিনে খাদ্য শষ্য দান অত্যন্ত পুণ্যের বলে মনে করা হয়। দুঃস্থকে খাদ্য এবং বস্ত্র বা সামর্থ অনুযায়ী এই দিনে দান করলে সমস্ত পাপ বিনষ্ট হয়। সেই সঙ্গে মনের ইচ্ছাও পূরণ হয়।

দোল পূর্ণিমা পূজার নিয়ম

প্রিয় বন্ধুরা এখন আমরা আমাদের আর্টিকেল এর মূল আলোচনার বিষয় দোল পূর্ণিমা পূজার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। আমরা যারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী রয়েছে তারা অনেকেই দোল পূর্ণিমা পূজার নিয়ম সম্পর্কে জানিনা। দোল উৎসব হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব। তাই অবশ্যই আপনার দোল পূর্ণিমা পূজার নিয়ম সম্পর্কে জানা থাকা উচিত।
  • দোলের দিন ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠতে হবে এরপর ভালোভাবে স্নান করে নিতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে গঙ্গা পানি দিয়ে স্নান করতে হবে।
  • আপনি চাইলে বাড়িতে সত্যনারায়ণের ব্রত পালন করতে পারেন। তাতে আপনার জীবনের সমস্ত অন্ধকার কেটে সাফল্যের দেখা মিলতে পারে খুব তাড়াতাড়ি।
  • উপোস করে এরপরে পুজোর প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো যোগাড় করতে হবে নিজের হাতে।
  • বাড়ি অপরিষ্কার না থাকে এদিকে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। বাড়ি পরিষ্কার করার পর স্বস্তিক একে দিন।
  • দোল পূর্ণিমার দিন বাড়ীতে নিরামিষ খেতে হবে। এটা সবথেকে উত্তম কাজ।
  • দোল পূর্ণিমা পূজার সময় বাড়িতে থাকা দেবদেবীর পায়ে আবির দিতে ভুল করবেন না।
  • দোল পূর্ণিমার পূজা শেষ হওয়ার পরে পারলে বাড়ির আশেপাশে থাকা সকলকে প্রসাদ দিতে হবে।
  • আনন্দে মেতে উঠার সময় গোলাপি লাল হলুদ নীল রঙের ব্যবহার করতে হবে।
  • বাড়িতে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালাতে হবে।
  • দোল পূর্ণিমার দিন দরিদ্র মানুষ কে খালিহাতে ফেরাতে নেই।

দোলের আগে বাড়ি আনুন এই ৬ জিনিস, লক্ষ্মীর পা পড়বে বাড়িতে

  1. অনেকবার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জীবনে সাফল্য লাভ করা যায় না। এর পিছনে বাস্তু দোষ একটি কারণ হতে পারে। বাস্তু দোষ কাটিয়ে ওঠার জন্য দোলের আগে একটি সুন্দর তোরণ আনুন ও বাড়ির প্রবেশদ্বারে লাগান। এর প্রভাবে বাস্তু দোষ কাটিয়ে ওঠা যায়।
  2. বাড়ির উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে একটি অ্যাকোয়েরিয়াম রাখুন। এই দিকটিকে কুবেরের স্থান মনে করা হয়। এর ফলে পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধির বৃদ্ধি হবে। দোলের আগে অ্যাকোয়েরিয়াম বাড়ি এনে রাখলে অর্থ আগমনের পথ সুগম হবে।
  3. জ্যোতিষ এবং বাস্তু পরামর্শ মেনে দোলের আগে বাড়িতে বাঁশ গাছ লাগান। বাঁশ গাছ সৌভাগ্য বৃদ্ধি করে। এই গাছটি নেতিবাচক শক্তি দূর করে এবং পরিবারের সদস্যদের সুস্থ রাখে।
  4. বাড়িতে ক্রিস্টালের কচ্ছপ রাখাও অত্যন্ত শুভ। বাড়িতে কচ্ছপ রাখলে আর্থিক উন্নতি হয়। এর ফলে অঢেল ধন-সম্পত্তি লাভ করা যায়। পরিবারে ইতিবাচক শক্তির আগমন ঘটায় কচ্ছপ। ক্রিস্টাল ছাড়াও ধাতু বা স্ফটিকের কচ্ছপও এনে রাখতে পারেন। কচ্ছপের পিঠে কুবের যন্ত্র আঁকা থাকলে, তা আরও শুভ।
  5. বাড়িতে ড্রাগনের মূর্তি বা ছবি রাখাও শুভ। মনে করা হয়, এর ফলে পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ থাকেন। বাড়িতে ড্রাগনের ছবি লাগালে পরিবারের সদস্যরা কুনজর থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারে। পাশাপাশি পরিবারে লক্ষ্মীর বাস হয়।
  6. দোলের আগে বাড়িতে চিনা কয়েন অবশ্যই আনুন। ফেঙ্গ শুই অনুযায়ী লাল সুতোয় বাঁধা চিনা কয়েন প্রবেশদ্বারের হ্যান্ডেলে ঝোলালে পরিবারে সুখ-শান্তির আগমন হয়।

উপসংহার

আশা করছি দোল পূর্ণিমা পূজার নিয়ম - দোল পূর্ণিমা কেন পালন করা হয় নিয়ম ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url