পহেলা বৈশাখ এর ১০ টি বাক্য ও পহেলা বৈশাখ এর কবিতা
প্রিয় পাঠক পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে এটি জাতীয় উৎসব হওয়ায় এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন লোক উৎসব হিসেবে পরিচিত। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের শুরু হয়েছিল পুরান ঢাকার মুসলিম মাহিফরাস সম্প্রদায়ের হাতে ধরে। ১৪ই এপ্রিল বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ উৎযাপন করা হয় এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ১৫ই এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উৎযাপন করা হয়।
ভূমিকা
বাংলা বছরের প্রথম দিন হলো হলো পহেলা বৈশাখ। বাঙ্গালী জাতীরর ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন হলো বাংলা নববর্ষ। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলা নববর্ষ হিসেবে দিন-টি বিশেষভাবে উৎযাপন করা হয়। সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখের প্রচলন শুরু হয়েছিল। পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালন করা হয়।
পহেলা বৈশাখ মানে কি?
পহেলা বৈশাখ বা পয়লা বৈশাখ মানে হলো বাংলা পঞ্জিকার প্রথম দিন অর্থাৎ বৈশাখ মাসের ১ তারিখ। এই দিনটি বাংলা নববর্ষ নামে বাঙ্গালীদের কাছে পরিচিত। এই দিনটি সকল বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন।
পহেলা বৈশাখের ইতিহাস ও উৎপত্তি
পহেলা বৈশাখের ইতিহাস মুঘল সম্রাট আকবরের সময় থেকে শুরু হয়। আকবর বাংলা সনের প্রচলন করেন যাতে কৃষকদের কাছ থেকে কর সংগ্রহ সহজ হয়। কৃষি অর্থনীতি ও কর ব্যবস্থা সহজ করার জন্য এই সন প্রবর্তন করা হয়। – বাংলার নববর্ষ পালনের ঐতিহ্য মুঘল আমল থেকেই চলে আসছে। এই সময় কৃষকদের কাছ থেকে জমির কর আদায়ের নতুন বছরের শুরুতে কর পরিশোধের প্রথা ছিল।
পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য
- পহেলা বৈশাখ বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন।
- পহেলা বৈশাখ প্রতি বছর 14 বা 15 এপ্রিল পালিত হয়।
- এটি বাংলাদেশে কৃষি মৌসুমের সূচনা করে।
- পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে একটি সরকারি ছুটির দিন।
- মানুষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা এবং ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে।
- ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন পান্তা ভাত (গাঁজানো ভাত) এবং ইলিশ মাছ এই দিনে উপভোগ করা হয়।
- লোকেরা ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পোশাক পরে, মহিলারা শাড়ি পরে এবং পুরুষরা পাঞ্জাবি পরে।
- দিনটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা এবং রাস্তার প্যারেড দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
- পহেলা বৈশাখ হল মানুষের একত্রিত হওয়ার, শুভেচ্ছা বিনিময় করার এবং একে অপরের সমৃদ্ধি কামনা করার একটি সময়।
- পহেলা বৈশাখ উদযাপন বাঙালির সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে ।
পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০ক্যাপশন
- পহেলা বৈশাখ হল বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন এবং বাংলা নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়।
- পহেলা বৈশাখ সাধারণত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে এপ্রিল 14 বা 15 তারিখে পড়ে।
- পহেলা বৈশাখ উদযাপন বাঙালি সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত এবং বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে অত্যন্ত উৎসাহের সাথে পালন করা হয়।
- পহেলা বৈশাখ হল আনন্দ, নবায়ন এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের সময়। এটি কৃষি কার্যক্রমের সূচনাকে চিহ্নিত করে এবং সামনের একটি সমৃদ্ধ বছরের জন্য আশীর্বাদ চাওয়ার উপলক্ষ হিসেবে দেখা হয়।
- দিনটি "পহেলা বৈশাখের শুভ কমনা" নামে পরিচিত নববর্ষকে স্বাগত জানানোর ঐতিহ্যবাহী আচার দিয়ে শুরু হয়, যেখানে লোকেরা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায় এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
- প্রাণবন্ত শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং "বৈশাখী মেলা" নামে পরিচিত মেলার মাধ্যমে রাস্তাগুলি জীবন্ত হয়ে ওঠে। লোকেরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে, মহিলারা রঙিন শাড়ি পরে এবং পুরুষরা সাদা কুর্তা-পাজামা বা পাঞ্জাবি পরে।
- পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে আইকনিক প্রতীক হল "মঙ্গল শোভাযাত্রা", একটি শোভাযাত্রা যা বাংলাদেশে সংঘটিত হয়, রঙিন মুখোশ, ভাসমান এবং ঐতিহ্যবাহী শিল্পের ফর্মগুলি প্রদর্শন করে, যা স্থিতিস্থাপকতা এবং ঐক্যের চেতনাকে নির্দেশ করে।
- ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত, বিশেষ করে বিখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "রবীন্দ্রসংগীত" এর সুমধুর সুর, উদযাপনের জন্য পার্ক এবং পাবলিক স্পেসগুলিতে যখন লোকেরা জড়ো হয় তখন বাতাস ভরে যায়।
- পহেলা বৈশাখের সময় বিশেষ ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করা হয় এবং পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে উপভোগ করা হয়। জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবারের মধ্যে রয়েছে পান্তা ভাত (গাঁজানো ভাত), ইলিশ মাছ, শোরশে ইলিশ (সরিষার তরকারিতে রান্না করা ইলিশ মাছ), এবং বিভিন্ন মিষ্টি খাবার যেমন রসগুল্লা এবং মিষ্টি দোই।
- পহেলা বৈশাখ শুধুমাত্র বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সারা বিশ্বের বাঙালি সম্প্রদায়ের দ্বারাও উদযাপিত হয়। এটি একটি সাংস্কৃতিক বন্ধন হিসেবে কাজ করে, বাঙ্গালী বংশোদ্ভূত লোকেদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং পরিচয় ও আত্মীয়তার বোধকে লালন করে।
বৈশাখী মেলা সম্পর্কে ১০টি বাক্য
- বৈশাখী মেলা হলো আমাদের দেশের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক মেলা।
- বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
- বৈশাখী মেলা মূলত গ্রামীন জনগোষ্ঠীর একত্রে মিলে আনন্দে মেতে ওঠার এক উপলক্ষ।
- মেলার জন্য কোন খোলা মাঠ, বড় কোন গাছের নিচ বা নদীর তীর ইত্যাদি স্থান বেছে নেয়া হয়।
- মেলায় নানা ধরনের জিনিসপত্র বিশেষ করে কুটির শিল্পজাত জিনিসপত্রের প্রচুর আমদানি হয়।
- বৈশাখী মেলার আশেপাশের এলাকার বহু মানুষের সমাগম ঘটে।
- কোন কোন মেলায় নাগরদোলায় চড়ার ব্যবস্থাও থাকে।
- মেলায় নানা রকমের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। যা অন্য সময় পাওয়া যায় না।
- বৈশাখী মেলায় যেসব জিনিসপত্র পাওয়া যায় তার সঙ্গে বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য জড়িত।
- বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ বৈশাখী মেলা আমাদের গর্ব।
পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে কিছু কবিতা
বৈশাখে অনলসম বসন্তের খরা।
তরুতল নাহি মোর করিকে পসরা
পায় পোড়ে খরতর রবির কিরণ।
শিরে দিতে নাহি আঁটে খুঞ্চার বসন
নিযুক্ত করিল বিধি সবার কাপড়।
অভাগী ফুল্লরা পরে হরিণের দুড়
পদ পোড়ে খরতর রবির কিরণ।
শিরে দিতে নাহি আঁটে অঙ্গের বসন
বৈশাখ হৈল আগো মোর বড় বিষ।
মাংস নাহি খায় সর্ব্ব লোকে নিরামিষ’
‘ভূতরূপে সিন্ধুজনে গড়ায়ে পড়িল
বৎসর কালের ঢেউ, ঢেউর গমনে
নিত্যগামী রথ চক্র নীরবে ঘুরিল
আবার আয়ুর পথে হৃদয় কাননে
কত শত আশা লতা শুকায়ে মরিল
হায়রে কব তা কারে, কবিতা কেমনে
কি সাহসে আবার তা রোপিব যতনে
সে বীজ, যে বীজ ভূতে বিভল হইল।’
‘বৈশাখের কালো ঘোড়া উঠে এলো। বন্দর, শহর
পার হয়ে সেই ঘোড়া যাবে দূর কোকাফ মুলুকে,
অথবা চলার তালে ছুটে যাবে কেবলি সম্মুখে
প্রচণ্ড আঘাতে পায়ে পিষে যাবে অরণ্য, প্রান্তর।’
সামনে আসছে বৈশাখ মাস
কয়েকটা দিন পর,
আম কাঁঠালের পাকা গন্ধে,
মুখরিত হবে ঘর।
কৃষক সবাই ব্যস্ত থাকবে
নিজ নিজ কাজে,
পাকা ধান তুলবে ঘরে
সেই অভিপ্রায় জাগে।
মহাজন ঘরের দেনা পাওনা
মিটিয়ে দেবে সব,
বৈশাখ এসেছে বৈশাখ এসেছে
সবার মুখেই রব।
পুরাতন যত দুঃখ গাঁথা
মুছে ফেলে দাও,
এসো হে বৈশাখ এসো হে বৈশাখ
সেই গান সবাই গাও।
নতুনকে করো বরণ
পুরাতন সব ভুলে,
সেই বাসনাই রেখে দাও
মনের মধ্যে তুলে।
নির্মম বাতাসে ঝড়ের গান
বিকাল টা এলোমেলো
পূর্ব পশ্চিমে হাহাকার
উত্তর দক্ষিণে বিদ্রোহ।
বুকের ভেতর চৈত্রের পোড়া দাগ
বৈশাখ এসে ভিজিয়ে দিয়ে জাক
একটা সময় পার হয়ে যায়
এলোমেলো উদাসীন বিশাখা অন্তরে।
তান্ডব চলছে অলিন্দে অলিন্দে
কেউ তো অনূভব করে না
জ্বলে উঠলো করতলে বুনোঘাস
বৈশাখ এলো বন্দনায় ।
হাতে হাত গ্ৰীষম এলো
ঝড় যেন নূতন ধুমকেতু
জ্বলছে ঈশান কোণে
অন্তরে নদীতে দীর্ঘশ্বাস।
পালাবদলের দাঁড় বেয়ে চলে
চুপ করে আছে প্রিয় কথা
কবি আমি দেখছি অশনি নামা
ঝড় উঠেছে উঠোনে নির্মম ।
হাসি খুশি ঝরুক নববর্ষে
হাতে হাত রেখে বললাম
এই বৃষ্টিতে ভিজে জ্বলে ওঠা
বৈশাখী ভালোবাসা হ্নদয়ে।
রাত পোহালে আসবে তুমি,
কাঙ্ক্ষিত সেই নববর্ষ।
তোমাকে জানাই আমর,
হৃদয় ভরা স্বাগত।
সব অতিত ভুলে গিয়ে
হাসি মাখা থাক মুখে।
নয়ন ভরা খোয়াব নিয়ে,
এগিয়ে চলো সম্মুখে।
সাদা কালো দিন ছেড়ে,
এসেছে রঙ্গিন দিন।
আগামীর দিন গুলি হোক,
নব বধুর ন্যায় মলিন।
আকাশের নীল রঙ,
ধবল কালো মেঘ মিলে।
হয়ে গেছে একাকার,
সেজেছে আপন মনে।
ফুটেছে নতুন ফুল,
যৌবন ফিরে পেয়েছে নদী।
কাল বৈশাখী ঝড়ে,
কাঁচা আমের ছড়াছড়ি।
নদীতে ভাসছে হংসমিথুন,
স্রোতে খেলছে হেলেদুলে।
বৈশাখের দোল লাগিয়ে,
পঙ্খিরা পাখা মেলে।
উপসংহার
আশা করছি পহেলা বৈশাখ এর ১০ টি বাক্য ও পহেলা বৈশাখ এর কবিতা ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url