ভাল স্ত্রী হওয়ার উপায়
প্রিয় পাঠক ভাল স্ত্রী হওয়ার উপায় আসলে আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে জীবন গতিশীল হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুকের জন্যে বাড়ছে পরিচিত মণ্ডল। বাড়ছে অপ্রয়োজনীয় সম্পর্ক। বাড়ছে নেতিবাচক আবেগ ও অনুভূতি। যা অন্যান্য সর্ম্পকগুলোর পাশাপাশি টানাপোড়েন সৃষ্টি করছে বৈবাহিক সম্পর্কেও ভাল স্ত্রী হওয়ার উপায় সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
দাম্পত্য জীবন সুখময় হয়ে ওঠে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্মান ও সহমর্মিতার উপর নির্ভর করে। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, ভালবাসা ও সহানুভূতি যত গভীর হয়, দুজনের বন্ধনটাও যেন তত দৃঢ় হতে থাকে। আর যখনই এই সম্পর্কে বিশ্বাস ও ভালবাসার বদলে অনুপ্রবেশ করে অবিশ্বাস ও সন্দেহ তখনই দুজনের মধ্যে বাড়তে থাকে দুরত্ব। যার ফলাফল দাম্পত্য কলহ, নির্যাতন এবং অবশেষে পারিবারিক ভাঙন।
আরো পড়ুনঃ ভাল স্বামী হওয়ার উপায়
ভাল স্ত্রী হওয়ার উপায়
- দাম্পত্য জীবন সুখী হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম কাজ হলো আল্লাহ মহানের কাছে দোয়া করা- স্ত্রীর প্রথম কর্তব্য হলো দোয়া করা। আসলে আমাদের জীবনের সকল ভালো বিষয়গুলোই হচ্ছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। সুতরাং আল্লাহকে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আল্লাহই পারেন আমাদের দুনিয়ার বৈবাহিক জীবনে সফলতা দান করতে। এজন্য একজন স্ত্রীকে অবশ্যই আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করতে হবে- হে আল্লাহ! আপনি আমাদের বৈবাহিক জীবনকে উত্তম রূপে যাপন করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদেরকে জান্নাত দান করুন।
- স্বামীর কথা শোনা এবং তার আনুগত্য করা- স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর আনুগত্য করা। কেননা স্বামীই হচ্ছে ঘরের কর্তা সুতরাং তাকে তার প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার দেওয়াই হচ্ছে একজন আদর্শ স্ত্রীর কর্তব্য।
- স্বামীকে সব সময় খুশি রাখার চেষ্টা করা- স্বামীকে সব সময় খুশি রাখা। হাদিসের ভাষ্য হলো- স্বামীই হচ্ছে স্ত্রীর জান্নাতের চাবি। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, ‘কোন নারী যদি এমন অবস্থায় মারা যায় যে তার স্বামী তার ওপর সন্তুষ্ট তাহলে সে জান্নাতে যাবে’। সুতরাং একজন আদর্শ স্ত্রীর সব সময়ের কামনা হবে স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা।
- ঝগড়া এবং সব ধরনের রাগারাগি করা থেকে বিরত থাকা- কারণ ছোট একটি রাগারাগি হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্বের কারণ। হয়তো স্ত্রীর কোনো দোষ নেই, এমনকি স্ত্রী কোনো দোষ করেনি। তবুও স্ত্রীর উচিত হবে, সরি বলে পরিস্থিতিকে অনুকূলে নিয়ে আসা। নিজেদের মাঝের কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ না করা। কেননা প্রতিবাদ করলেই মূলত দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতির সূচনাতেই যদি স্ত্রী বলে সরি..। আসো আমরা মিলে যাই। তাহলে কখনো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্ব হবে না।
- স্বামীকে তার ভালো কাজের জন্য ধন্যবাদ জানানো- একজন আদর্শ স্ত্রী যখন স্বামীকে তার ভালো কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাবে তখন স্বামী খুশি হবেন। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। আমাদের সমাজের যে সকল নারীরা এমন করেন না তাদের বৈবাহিক জীবন খুব একটা ভালো হয় না।
- স্বামীর সাথে আড্ডা দেওয়া- এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ পুরুষদের স্বাভাবিক স্বভাব হচ্ছে তারা হৃদয়গ্রাহী ও হাস্যোজ্জ্বল নারীদের পছন্দ করে। আমাদের নবী (সা.) একটি হাদিসে বলেছেন, ‘হে জাবের! তুমি এমন নারীকে বিবাহ করো যে তোমাকে আনন্দ দেবে এবং তুমিও তাকে আনন্দ দেবে’।
- নিজে সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল থাকুন- অনেক আগে থেকেই নারীরা ঘরে গয়না পরতো ও সাজসজ্জা করে থাকতো। পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘তোমার কাছে যেই ধরণের গয়না আছে তুমি তা পরো এবং সুন্দর সুন্দর পোশাক পরিধান করো তোমার স্বামীর জন্য’। সুতরাং একজন আদর্শ নারীর কর্তব্য হবে এই আর্দশকে অনুসরণ করা।
- হুর আল-আইনের (জান্নাতি নারী) বৈশিষ্ট্যগুলি পর্যালোচনা করুন এবং তাদের অনুকরণ করার চেষ্টা করুন- কেননা কুরআন ও হাদিসে জান্নাতি নারীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে সেই বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করার চেষ্টা করুন।
- স্বামী কাজ থেকে ঘরে ফিরলে তার যত্ন নিন- ধরুন আপনার স্বামী এখন অফিস শেষে বাসায় ফিরবে সুতরাং আপনি আপনাদের বাসাটাকে সুন্দরভাবে পরিষ্কার করে রাখুন, নিজে ভালো কাপড় পরিধান করুন এবং সন্তানদের ভালো কাপড় পরিধান করান। এমনটাই একজন পুরুষের কাম্য। আর এর মাধ্যমেই মূলত স্বামী ও স্ত্রীর বৈবাহিক জীবনে সুখ ও শান্তি বৃদ্ধি পায়।
- স্বামীর হৃদয় জয় করার জন্য আপনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। আল্লাহ আপনাকে সকল প্রকার সৌন্দর্য দান করেছেন। আপনি আপনার এই সকল সৌন্দর্যকে ব্যবহার করে আপনার স্বামীর হৃদয়কে জয় করুন।
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ভালো রাখার উপায়
একসঙ্গে খাবার খান:
- বিয়ের অনেক দিন হয়ে গেলেও আপনি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে বসে একসঙ্গে খাবার খান। প্রয়োজনে ডিজিটাল ডিভাইসগুলোকে দূরে রেখে খাবার সারতে পারেন। আপনার শিশু থাকলে তাদের আগে খায়িয়ে পরে আপনি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে খাবার খেতে পারেন।আমাদের ব্যস্ত সময়সূচির কারণে, আমরা প্রায় সময়েই আমাদের সঙ্গীর সখ্যতা উপভোগ করতে পারি না। কিন্তু একসঙ্গে খাবার খেলে এটি দূর হতে পারে অনেকটাই। ফলে আপনাদের মাঝে ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনাও কমে আসবে।
অপরকে দোষারোপ না করা:
- কোথায় এত খরচ হচ্ছে বা কোন কাজ করা দরকার তা নিয়ে চাপে থাকলে এবং হতাশা বোধ থেকে অনেকে সঙ্গীকে দোষারোপ করে থাকেন। এই কাজটি না করে কীভাবে শ্রদ্ধা ও সুরক্ষিত উপায়ে আপনার অনুভূতি এবং প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করা যায় সেটি শিখতে হবে। এর জন্য কিছুটা শান্ত সময় নিয়ে বসে আপনার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করুন। আপনি কেন মন খারাপ করছেন এবং কীভাবে আপনি ভালো বোধ করবেন, সেটি নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে বসে অলোচনা করুন। এতে দাম্পত্য জীবনের ঝামেলা কমে আসবে।
একে অপরের খুব বেশি খুত ধরা:
- সম্পর্কের মাঝে আপনি যত বেশি সমালোচনা করবেন, আপনার সম্পর্ক থেকে তত দ্রুত সুখ কমে আসবে। সম্পর্কের মাঝে আপনি নেতিবাচক সুরে যোগাযোগ করলে আপনার সম্পর্কের বিকাশও নেতিবাচক হবে। তাই একে অপরের খুত না ধরে সঙ্গীকে উৎসাহমূলকভাবে কথা বলতে পারেন। বেশি করে আপনার সঙ্গীর প্রশংসা করুন, এটি সম্পর্ককে ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
সম্পর্কের অগ্রাধিকার প্রথমে রাখা:
- আপনার সম্পর্কটি আপনার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই এটির যত্নে প্রয়োজন আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগ। আপনার জীবনে ক্যারিয়ার, শখ বা বন্ধুদের অবশ্যই গুরুত্ব থাকবে। কিন্তু সব কিছুর পরে যদি আপনি আপনার সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেন, তবে সে সম্পর্কটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। তাই আপনার সঙ্গীকে মর্যাদার সঙ্গে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখুন প্রথমেই। এতে আপনার দাম্পত্য জীবন হবে সুখের।
সন্তুষ্ট থাকুন:
- নিজে যা চান, তা স্বামী দিতে না পারলে হতাশ হবেন না। জীবনসঙ্গীর সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করুন। অনেক স্ত্রী স্বামী কী দিতে পারল না তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে থাকেন। অনেক সময়ে নিজের বান্ধবীদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। যার ফলে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হতে থাকে। স্বামীকে খুশি রাখার জন্য অল্পতে সন্তুষ্ট থাকা স্ত্রীর জন্য উত্তম। স্বামী যে জিনিস উপহার হিসেবে দেবেন সেটি নিয়ে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট থাকা দাম্পত্য সম্পর্কের সুস্থতার ক্ষেত্রে বাঞ্ছনীয়।
বন্ধুদের সঙ্গে বা পরিবারে আপনার সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলা:
- আপনার সম্পর্ক জীবনের ভালো-খারাপ বা কুরুচিপূর্ণ দিক নিয়ে বাইরে আলোচনা করবেন না। সম্পর্কের মাঝে কোনো ঝামেলা আসলে সে বিষয়ে বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে কথা না বলে নিজেরা সরাসরি আলোচনা করে সমাধান করুন। এতে আপনাদের মাঝে হওয়া ঝামেলা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।
উপসংহার
আশা করছি ভাল স্ত্রী হওয়ার উপায় ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url