ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর করার কিছু সহজ উপায়
প্রিয় পাঠক ব্রণ ত্বকের সৌন্দর্য ও উজ্জ্বলতাকে নষ্ট করে। এছাড়াও, ব্রণ চলে যায় ঠিকই কিন্তু রেখে যায় দাগ ও ক্ষত। এমনকি ত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্তও দেখা দেয় ব্রণের কারণে। এজন্যই বিশ্বব্যাপী কমবেশি সবার কাছেই ব্রণ একটি আতঙ্কের নাম। তাহলে কি ব্রণ থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই অবশ্যই আছে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা,যেকোনো ঋতুতেই ত্বক সুস্থ রাখতে প্রয়োজন সঠিক যত্নের। আলাদা আলাদা ত্বকের সমস্যাও থাকে আলাদা, যত্নের পদ্ধতিও আলাদা।যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক, তাঁদের যেন ভোগান্তি একটু বেশিই। তাঁরাই বোঝেন এর যন্ত্রণা কতটা। যতই সুন্দর করে মেকআপ করা হোক, কিছুক্ষণ পর মুখ আবার সেই তেলতেলে, চিটচিটে। রাস্তায় বেরোলেই মুখে ময়লা জমে একাকার। বাইরের ধুলা-ময়লা তৈলাক্ত ত্বকে আটকে গিয়ে দেখা দেয় নানা সমস্যা। এর মধ্যে ব্রণের সমস্যা সবচেয়ে বেশি।
আরো পড়ুনঃ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোন সানস্ক্রিন ভালো
ব্রণের দাগ দূর করার প্রথম উপায়
- কফি পাউডারঃ কফি পাউডার আমাদের মুখের মরা চামড়া দূর করে এবং ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
- মধুঃ মধুতে অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান রয়েছে, যা পিম্পলের ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে।
- এছাড়াও মধুতে ন্যাচারাল ব্লিচিং এজেন্ট রয়েছে, যা ব্রণের দাগ দূর করে।একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ কফি পাউডার এবং হাফ টেবিল চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে নিয়ে পরিষ্কার মুখে লাগিয়ে নিয়ে হবে। ১৫ মিনিট পর স্ক্রাবিং করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিয়ে হবে।
ব্রণের দাগ দূর করার দ্বিতীয় উপায়
- সুইট আমন্ড অয়েলঃ সুইট আমন্ড অয়েল স্কিনের ড্রাইনেস দূর করে এবং এতে প্রচুর পরিমানে ফ্যাটি এসিড রয়ছে যা, ব্রণের দাগ রিমুভ করতে সাহায্য করে।
- লেবুর রসঃ লেবুর রসে রয়েছে ভিটামিন ই। যা স্কিনের জন্যে খুবই উপকারি। এছাড়া এতে স্কিন লাইটেনিং এজেন্ট রয়েছে, যা ব্রণের দাগকে হালকা করতে সাহায্য করে।
- হাফ টেবিল চামচ সুইট আমন্ড অয়েল এবং লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে তা মুখের ত্বকে লাগিয়ে নিয়ে হবে। ৩০ মিনিট পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ব্রণের দাগ দূর করতে তৃতীয় উপায়
- চন্দন পাউডারঃ চন্দনে রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রোভাল, যা স্কিনকে স্মুদ করে এবং ব্রণের দাগ দূর করে। এটি স্কিনকে উজ্জ্বল করে তোলে। এছাড়াও এতে ন্যাচারাল অ্যাস্ট্রিজেন্ট রয়েছে।
- গোলাপজলঃ গোলাপজল ত্বকের পি এইচ লেভেলকে ব্যালেন্স করে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন ই, সি, বি3 এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
- একটি বাটিতে ১ চা চামচ চন্দন পাউডার, হাফ চা চামচ গোলাপজল মিশিয়ে নিন। আপনার স্কিন ড্রাই হলে গ্লিসারিন যোগ করতে পারেন। এই মিশ্রণটি ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন এবং ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণের দাগ দূর করার চতুর্থ উপায়
- টমেটোঃ টমেটো স্কিনের পিএইচ ব্যালেন্স করে। এটি স্কিন ড্যামেজ রিপেয়ার করে এবং ব্রণের দাগ দূর করে।
- লেবুর রসঃ এর উপাদান সম্পর্কে তো আগেই জেনেছেন।
- মধুঃ এর উপাদান সম্পর্কে তো আগেই জেনেছেন।
- একটি টমেটো নিয়ে এর পাল্প বের করে নিন। এর সাথে হাফ চা চামচ লেবুর রস এবং মধু যোগ করুন। এই মিশ্রণটি ব্রণের দাগের উপর লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন। সকালে ধুয়ে ফেলুন।
এক রাতে ব্রণ দূর করার সহজ উপায়
- এক রাতে ব্রণ কমাবে লেবুর রস ও দারুচিনিএক টেবিল চামচ লেবুর রস এবং এক চা-চামচ দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- মিশ্রণটি সারা রাত ব্রণে লাগিয়ে রাখুন। সকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আশা করা যায় ব্রণ কমে আসবে।
- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রণ দূর করতে চাইলে বরফের সাহায্য নিতে পারেন। নরম কাপড়ে বরফের টুকরো পেঁচিয়ে নিন। কাপড়টি আলতো করে ব্রণের ওপর রাখুন। ২০ সেকেন্ড রেখে সরিয়ে নিন। আবার রাখুন। এভাবে বেশ করেকবার করুন। ২৪ ঘণ্টায় দুইবার ট্রিটমেন্টটি করলে ব্রণ কমে আসবে।
- টি ট্রি অয়েলকে ব্রণের শত্রু বলা যায়। এটা দ্রুত ব্রণ কমিয়ে দেয়। ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক ফোঁটা টি-ট্রি অয়েল ব্রণের ওপর লাগিয়ে নিন। সকালে ঘুম থেকে জেগে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ব্রণ কমে গেছে।
- লেবুর রস মাখিয়ে রাতারাতি ব্রণ দূর করা যায়। সে জন্য একটি তুলার বল নিন। তাতে লেবুর রস মাখান। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে তুলাটি ব্রণের ওপরে কিছুক্ষণ রাখুন। সকালে সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
- ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং অ্যামিউনো অ্যাসিড রয়েছে। এই উপাদানগুলো ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করে তাড়াতাড়ি ব্রণ কমিয়ে দেয়। ডিমের সাদা অংশ ভালো করে ফেটিয়ে নিয়ে তা আঙুলের ডগার সাহায্যে ব্রণের ওপর লাগান। ৪-৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন।
৭ দিনে ব্রণ দূর করার উপায়
- লেবুর রস সরাসরি মুখের দাগযুক্ত অংশে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পরে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দিনে দুবার এমনটা করুন। পরবর্তি ৫-৭ দিনে ফারাকটা দেখতে পাবেন। এক চা চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখের কালো দাগের উপর লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। এর পর আর কিছু দেবেন না।
- এক চা চামচ পাতিলেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন এক চা চামচ টম্যাটোর রস। সেই মিশ্রণে যদি এক চা চামচ ওটমিল দিয়ে নিতে পারেন তাহলে আরও ভাল ফল মিলবে। মুখে দাগের অংশে এই মিশ্রণ লাগিয়ে মিনিট ১৫ পরে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দিনে দুবার এমনটা করলে দ্রুত ফল
- মিলবে। দেখবেন কতদ্রুত কালো দাগ দূর হয়।আসলে লেবুতে যে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে, তা ত্বকের পক্ষে খুবই উপকারী। এটি ত্বকের উপর একটি অদৃশ্য সুরক্ষাকবচ তৈরি করে। সেই সঙ্গে ব্রণ বা ফুসকুড়ির কারণ হিসেবে কাজ করে যেসব ব্যাকটেরিয়া, সেগুলিকেও মারে, এবং ত্বকের
- তৈলাক্তভাব দূর করে। তাহলে আর দেরি নয়। আজই শুরু করুন এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ঘরোয়া কৌশলগুলো। আর এক সপ্তাহে পেয়ে যান দাগমুক্ত মুখ। সেই সঙ্গে উজ্জ্বল ত্বকও।
তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায়
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে লেবু সবচেয়ে ভালো ঘরোয়া উপাদান, লেবুতে উপস্থিত সাইট্রিক অ্যাসিড তৈলাক্ত ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণ করার সাথে সাথে ত্বকের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে ত্বককে ব্রণ হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। মধুর অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হতে বাধা প্রমাণ করে, ত্বকের ময়েশ্চারাইজারের স্তর ঠিক রাখে ও ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে।
একটি সতেজ লেবু থেকে এক টেবিল চামচ রস নিয়ে সাথে সমপরিমাণ মধু নিয়ে একটি পাত্রে মেশান। দেখবেন এই দুই উপাদান মিলেমিশে বেশ গাঢ় লিকুইড আকার ধারণ করবে। এবার এই লিকুইড আপনার ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন।এই প্যাকটি ব্যবহার করার পর আপনার ত্বকে ব্রণ কমে আসবে।
ব্রণের দাগ হালকা হতে শুরু করবে এবং আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে। তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ প্রতিরোধে এই প্যাকটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন।দই ত্বক নরম ও নমনীয় রাখে আর বেসন ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে ত্বকের উজ্জলতা ধরে রাখে। এবং এই দুই উপাদান একসাথে হয়ে তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ সারাতে ভালো কাজ করে। দুই টেবিল চামচ বেসন ও এক টেবিল চামচ দই নিয়ে একটি পাত্রে চামচের সাহায্যে পেস্ট বানান।
- পেস্ট হয়ে আসলে এতে দুই ফোটা মধু ও এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে নিন।এবার প্যাকটি আপনার মুখে ও গলায় সুন্দর করে লাগিয়ে নিন এবং শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর এটি শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি হাতের সাহায্যে লাগিয়ে প্যাকটি ত্বক থেকে লুজ করে নিন। এবার হালকা ঘষে প্যাকটি মুখ থেকে ঝরিয়ে ফেলুন।
- এতে করে ত্বকের ডেড সেল উঠে আসার সাথে ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে আসবে। সবশেষে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ দিয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন।
ছেলেদের তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে করণীয়
বর্তমানে মেয়েদের সাথে সাথে ছেলেরাও রূপসচেতন হয়ে উঠেছে। সাধারণত মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বাসার বাইরে বেশি সময় থাকতে হয়। ফলে ধূলা-বালি, ময়লার বেশি সম্মুখীন হয়ে থাকেন ছেলেরা।এসবের ওপর ত্বক যদি হয় তৈলাক্ত, তাহলে সমস্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তৈলাক্ত ত্বক অন্য ত্বকের তুলনায় ময়লা বেশি ধরে বলে ব্ল্যাক হেডস, ব্রণের মতো সমস্যা সব সময় লেগেই থাকে।তাই তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে ছেলেদের জন্য থাকছে কিছু টিপস :প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে গরম পানি ও আলফা হাইড্রকসি এসিড-যুক্ত ফেস ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুতে হবে। আলফা হাইড্রকসি এসিড লোমকূপের তেল নিয়ন্ত্রণ করে।খাবার তালিকায় তেলের খাবার বাদ দিয়ে ফ্রেশ ফল ও সবজি যোগ
করুন। লেবু ও কিউয়ি বেশ উপকারী।
- দুধের ঘোলে তুলা ভিজিয়ে মুখে চেপে চেপে লাগান। ২ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।সপ্তাহে তিনবার এই ভাবে মুখের যত্ন নিলে চামড়া টাইট হবে।
- ডিমের সাদা অংশের সাথে মধু ও ময়দা মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। ভারি করে মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন। এই প্যাক মুখের অতিরিক্ত তেল শোষণ করবে।
- মুখে অকারণে হাত বা অন্য কিছু দিয়ে বেশি ঘষাঘষি করবেন না।
- বেশি ঘষাঘষিতে তৈলাক্ত ত্বক ঝুলে যেতে পারে।
- সপ্তাহে দুইবার স্ক্রাব করলে লোমকূপ অ্যাকটিভ হয়।
- সব সময় সাথে ওয়াইপ টিস্যু রাখুন। মুখের ময়লা পরিষ্কার করতে এই টিস্যু বেশ ভালো।
- যেহেতু ছেলেদের ত্বক শক্ত হয়ে থাকে, তাই যেকোনো সমস্যা দূর হতে একটু বেশি সময় নেবে। তাই বলে কিন্তু মুখের যত্ন নেওয়া বন্ধ করা যাবে না।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url