ঘরোয়া ভাবে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

প্রিয় পাঠক ডায়াবেটিস একটি মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়’ছে সারা বিশ্বে, এবং বাংলাদেশে’র মতো উন্নয়নশীল দেশে এটি একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হ’য়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সঠিক যত্ন, খাদ্যাভ্যাস এবং লাইফস্টাইল পরিবর্ত’ন করে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রা’খা সম্ভব। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জানব, কীভাবে ঘরোয়া টিপস ব্যবহার করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
ঘরোয়া ভাবে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ভূমিকা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো নিয়মিত শরীর-চর্চা। হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা বা যোগ-ব্যায়াম করতে পারেন। এটি আপনার শরীরের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে এবং ব্লাড-সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অপরিহার্য। আপনা’কে হাই কার্বোহাইড্রেট এবং চিনি’যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। এর পরিবর্তে সুষম খাবার গ্রহ’ণ করুন।

ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস বর্তমান বিশ্বের নীরব ঘাতক নামে পরিচিত একটি রোগ, সাধারনত শরীরে গ্লূকোজ (শরীরের প্রধান শর্করা) এর তারতম্যের কারণে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। আমাদের শরীরে ইনসুলিন নামক এক হরমোন রক্তে গ্লূকোজ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। ইনসুলিন অগ্ন্যাশয়( পাকস্থলির পিছনে অবস্থিত অঙ্গ) থেকে উৎপন্ন হয় গ্লূকোজ আমাদের দেহের প্রধান জ্বালানী হিসেবে কাজ করে থাকে।

আমাদের দেহ দৈনন্দিন খাবার থেকেই সাধারণত গ্লূকোজ সংগ্রহ করে। এই গ্লূকোজ ব্যবহারের জন্য দেহের ইনসুলিন এর প্রয়োজন। কিন্তু ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে স্বভাবতই ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না নতুবা ইনসুলিন ঠিকঠাক কাজ করে না। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মারাত্তক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে যেমন বিভিন্ন প্রধান অঙ্গের হার্ট, কিডনী, চোখ, নার্ভ ক্ষতিসাধন।

ডায়াবেটিসের ধরন

গবেষণা থেকে তথ্য মতে ডায়াবেটিস এর অনেক প্রকার ভেদ থাকলেও বর্তমান বিশ্বের আঙ্গিকে ডায়াবেটিস কে প্রধান দুই ভাগে বিভক্ত করা হয় (টাইপ-১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস)। এছাড়াও প্রিডায়াবেটিক ডায়াবেটিস , জেস্টেশনাল ডায়াবেটিক ডায়াবেটিস( গর্ভকালীন ডায়াবেটিক) ঊল্লেখ যোগ্য।

টাইপ–১ ডায়াবেটিস
  1. টাইপ-১ ডায়াবেইস ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস নামে অধিক পরিচিত, যা সাধারনত অটোইমুঊন কন্ডিশন।যখন আমাদের শরীরের নিজস্ব এন্টিবডি অগ্ন্যাশয় কে আক্রমন করে ঠিক তখনি টাইপ-১ ডায়াবেটিস কন্ডিশন টি দেখা দেয়। অগ্ন্যাশয় তখন ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং ইনসুলিন উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পরে।
  2. এছাড়াও আমাদের জীন ( বংশগতির নিয়ন্ত্রক) এই ধরনের ডায়াবেটিস এর জন্য দায়ী। এইধরনের ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে শরীরে গ্লূকোজ মাত্রা অনেক বেশী থাকে। অন্যান্য ডায়াবেটিস এর তুলনায় এটি কম লক্ষণীয় এবং প্রতিরোধ যোগ্য নয়। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের এই ধরনটি সাধারনত শিশু( জুভেনাইল) এবং যুবক( ইয়াং এডাল্ট) দের মধ্যে দেখা গেলেও যে কোন বয়সে হতে পারে।
টাইপ–২ ডায়াবেটিস
  • টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর এই ধরন টি সাধারনত সব থেকে বেশী লক্ষণীয়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে আমাদের শরীর যথেষ্ট পরিমানে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না নতুবা ইনসুলিন তৈরি করলেও তা সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হয়। ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত ৯৫ ভাগ রোগী টাইপ ২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত।
  • অতিরিক্ত অলসতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন টাইপ-২ ডায়াবেটিসের এই ধরনটির প্রধান কারণ হিসেবে গণ্য। প্রতিরোধ যোগ্য ডায়াবেটিস এর এই ধরন টি সাধারনত মধ্য বয়স্ক এবং বয়স্ক লোকদের মাঝেই বেশি দেখা যায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস এডাল্ট অনসেট ডায়াবেটিস এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত।

প্রি ডায়াবেটিস

টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর প্রাক্কালে প্রিডায়াবেটিসের এই ধরন টি সাধারনত দেখা যায়। যখন রক্তে গ্লূকোজ এর মাত্রা স্বাভাবিক( ১০০ মিগ্রা/ডেলি, ফাস্টিং) এর তুলনায় বেশি কিন্তু তা টাইপ ২ ডায়াবেটিস নির্দেশ করে না তখন আমরা প্রিডায়াবেটিস বলে থাকি।

জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস

গর্ভকালীন সময় ইনসুলিন রেজিস্টেন্স সাধারনত জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের এই ধরনটির জন্য দায়ী। সাধারনত গরভকালীন সময়ের মাঝে অথবা শেষের দিকে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস দেখা যায়। শতকরা ২ থেকে ১০ ভাগ গর্ভধারণের সয়য় জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের এই ধরনটি ধরা পড়ে এবং শিশুর জন্মের পর তা আর দেখা যায় না। ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে করনীয়

কিন্তু ১০% মহিলা যারা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয় তারা কিছু সপ্তাহ অথবা বছর নাগাদ টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকিতে থাকে।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ

  1. ঘন ঘন প্রসাব, সাধারনত রাতে সবচেয়ে বেশি
  2. অতিরিক্ত তৃষ্ণার্ত
  3. অকারনে ওজন কমে যাওয়া
  4. ক্ষুধা বৃদ্ধি
  5. চোখে ঝাপসা দেখা
  6. হাত ও পায়ের অনুভূতি কমে যাওয়া
  7. ক্লান্ত অনুভব করা
  8. ত্বক শুষ্ক অনুভব করা
  9. ঘা দেরিতে শুখানো
  10. অতিরিক্ত রোগাক্রান্ত হওয়া , ইত্যাদি।
এছাড়াও টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, পেট ব্যাথা ইত্যাদি লক্ষণীয়।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি

পরিবারে পিতা মাতার ডায়াবেটিস থাকলে তা সন্তানের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও অতিরিক্ত ওজন, অলসতা, পোলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (মহিলাদের ক্ষেত্রে) ,অতিরিক্ত রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক , ৪৫ বছর অথবা তার বেশী বয়স্ক ব্যক্তি, ধূমপানে আসক্ত, মদপানে আসক্ত, শারীরিক ও মানসিক চাপ, অগ্ন্যাশয় ।

এ ক্ষত, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, ইত্যাদি সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

ডায়াবেটিসের জটিলতা

কারডিয়োভাস্কুলার ডিজিজ, নার্ভ ডেমেজ (নিউরোপ্যাথি), কিডনি ডিজিজ নেফ্রোপ্যাথি,রেটিনোপ্যাথি, চর্মরোগ, ইরেক্টাইল ডিস্ফাংশন, বধিরতা, ডিপ্রেশন, দাঁতের সমস্যা ইত্যাদি জটিলতা ডায়াবেটিস আমাদের জীবনে বয়ে আনে।

ডায়াবেটিস কমানোর জন্য করনীয়

  1. অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলুন যা আপনার ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য কারী শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলা ডায়াবেটিস অনেকাংশেই কমিয়ে আনে।
  2. শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ান যা আপনার ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্যকারী শরীর চর্চা আমাদের ওজন কমাতে, রক্তে গ্লূকোজ এর মাত্রা কমাতে এবং ইনসুলিন এর প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  3. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন যা আপনার ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্যকারীঃ তেল জাতীয় খাবার পরিহার করুন, শাক সবজি , মাছ, ফল বেশি রাখুন আপনার খাদ্য তালিকায়। উদ্ভিদ জাতীয় খাদ্য ভিটামিন, খনিজ ও শর্করার ঊত্তম উৎস। ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ খাবার, আঁশ যুক্ত খাবার ডায়াবেটিস কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  4. ডায়াবেটিস কমাতে যে সকল খাদ্য খাওয়া বারন বোতল জাতীয় পানীয়, তরমুজ, প্রক্রিয়া জাত চিনি, পাকা আম, পেঁপে, আনারস, ক্যান্ড ফিশ, সাদা রুটি, আলু, ফ্রিজিং ফুড ইত্যাদি ডায়াবেটিস কমানোর জন্য খাওয়া বারন।
  5. ডায়াবেটিস কমাতে ধূমপান ও মদপান পরিত্যাগ করুন ধূমপান ও মদপান ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, এটি ইনসুলিন রেজিস্টেন্সে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই ডায়াবেটিস কমাতে ধুমপান ও মদপান ত্যাগ করুন যত দ্রুত সম্ভব।
  6. মানসিক চাপ কমান অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক চাপ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, তাই মানসিক চাপ কমানো কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিছু রিলাক্সেশন পদ্ধতি এ ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে যেমনঃ মেডিটেশন, গান শোনা, পছন্দের কাজ করা ইত্যাদি

উপসংহার

আশা করছি ঘরোয়া ভাবে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url