টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার

প্রিয় পাঠক টাইফয়েড জ্বর হলে এই জ্বর সারাক্ষণ থাকে, এইটা এমন নয় যে, সকালে আসবে বিকালে চলে যাবে, বরং এইটা একটা ধারাবাহিক সময় ব্যাপি থাকে।জ্বর সাধারণত ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। খাবার রুচি থাকেনা। মাইল্ড তথা সামান্য পরিমান মাথা ব্যাথা থাকে। জ্বরের আগে পরে ডায়েরিয়া হতে পারে। জ্বরের ৫-৬ দিন পরে শরীরে গোলাপী বর্ণের দাগ দেখা দিতে পারে।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার

ভূমিকা

উপরোক্ত লক্ষন থাকলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ মত প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়া, জ্বর বেশি হলে প্যারাসিটামল জাতীয় সাপজিটরি নেওয়া।এন্টিবায়োটিক সেফিক্সিম এজিথ্রোমাইসিন সেফট্রিয়াক্সন ইত্যাদি।টাইফয়েড জ্বর হচ্ছে এক প্রকার পানি বাহিত বা দূষিত খাবার অথবা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ছড়ানো একটি রোগ নিচে টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে।

টাইফয়েড কী?

টাইফয়েড একটি সংক্রামক জীবাণুঘটিত (ব্যাকটেরিয়া ঘটিত) অসুখ যা সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে। এই অসুখটা প্রাক-বর্ষা, বর্ষা এবং বর্ষাশেষেই সাধারণত বেশি মাত্রায় ছড়ায়। মল এবং মৌখিক (ওরাল) পথের মাধ্যমে টাইফয়েডের সংক্রমণ ঘটে। সেজন্য, টাইফয়েডের জীবাণু সংক্রমণ নিশ্চিত করতে মল পরীক্ষা করা হয়। টাইফয়েডের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক্সের ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসা সঠিক ভাবে না হলে আভ্যন্তরীণ রক্তপাত, পচন বা সেপসিস অথবা বিরল ক্ষেত্রগুলিতে রোগীর মৃত্যু অব্ধি হয় ।

টাইফয়েড জ্বর কী?

টাইফয়েড এবং প্যারাটাইফয়েড জ্বর একত্রে আন্ত্রিক জ্বর হিসাবে পরিচিত। এটি একটি অত্যন্ত পরিচিত সংক্রামক অসুখ যা সালমোনেলা এন্টেরিকা (Salmonella Enterica)-র টাইফি, প্যারাটাইফি A, B, এবং C নামক বিভিন্ন প্রজাতির দ্বারা ঘটে। প্রথমদিকে এটা পাচনতন্ত্রকে আক্রান্ত করে, কিন্তু যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয়, এই অবস্থা আরও গুরুতর দিকে চলে যেতে পারে এবং জীবাণুগুলি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। যদি সময়মত চিকিৎসা না করা যায়, এটা গুরুতর জটিলতার দিকে চলে যেতে পারে যা মারাত্মক আকার নেয়৷

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণগুলি কী কী

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণগুলি অনেকাংশেই আর পাঁচটি জ্বরের মতই তবে বেশ কিছু উপসর্গ আছে যেগুলিকে একেবারেই অবহেলা করা উচিত নয়।প্রবল জ্বর । তাপমাত্রা ১০২°- ১০৪° ফারেনহাইটের মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
  1. পেট ব্যথা
  2. পেট খারাপ
  3. কাশি
  4. ক্ষুধামান্দ্য
  5. কোষ্ঠকাঠিন্য
  6. প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে। সেক্ষেত্রে তখন আরও বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন —মানসিক অবসাদ
  7. মস্তিষ্কের বিভ্রান্তি বা বিভ্রম
  8. নাক দিয়ে রক্ত পড়া
  9. মনোযোগে ঘাটতি
  10. বুক এবং তলপেটে লাল ফুসকুড়ি
  11. প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে টাইফয়েড সংক্রমণের উপসর্গগুলি অপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়।

টাইফয়েড জ্বরের কারণ ও ছড়ানোর মাধ্যম

টাইফয়েড একটি পানিবাহিত মারাত্মক রোগ যা দুই ধরনের জীবাণুর সংক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। ১,সালমোনেলা টাইফি এবং ২,সালমোনেলা প্যারাটাইফি’। সালমোনেলা টাইফির সংক্রমণে যে জ্বর হয় তাকে টাইফয়েড জ্বর বা ‘এন্টারিক ফিভার’ বলে। আর যদি জ্বর সালমোনেলা প্যারাটাইফির নামক জীবাণুর কারণে হয় তখন তাকে প্যারা টাইফয়েড জ্বর বলে।

প্রধানত দূষিত পানি ও খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই এই জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি উদাসীনতার কারণেও এটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়াও টাইফয়েড জ্বর হতে আরোগ্য লাভ করেছেন কিন্তু এই ব্যাকটেরিয়া বহন করছেন এমন কিছু সংখ্যক ব্যক্তিও এই রোগের বাহক হতে পারে।

যেভাবেই এই জীবাণু শরীরে শরীরে প্রবেশ করুক না ঢুকার পর তা বৃহদান্ত্রকে আক্রমণ করে। এছাড়া এই ব্যাকটেরিয়া শরীরের পিত্তথলিতে জমা থাকে এবং উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই কেবল আক্রমণ করে।

টাইফয়েডের ঝুঁকি কাদের বেশি

যেকোন বয়সেই টাইফয়েড হতে পারে, তবে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শরীরে জীবাণু প্রবেশ করলেই টাইফয়েড হবে এমন কোন কথা নাই কারণ দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে অনেক সময়ই জীবাণু দেহে সংক্রমণ করতে পারেনা। তবে কম রোগপ্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি যেমন এইচআইভি পজিটিভ ও এইডস রোগীরা ।

সহজেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হতে পারে। যেসব এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি সেসব জায়গায় ভ্রমণ করলেও এ রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

টাইফয়েডের চিকিৎসা কী

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টাইফয়েড জ্বর সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কোর্সের মাধ্যমে সফলভাবে চিকিৎসা করা যায়। সংক্রামিত ব্যক্তির বাড়িতেও চিকিৎসা নিতে পারেন, যদি তার মধ্যে গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়।বেশিরভাগ টাইফয়েড জ্বরের রোগীদের ৭-১৪ দিনের জন্য নির্ধারিত ওষুধ খেতে হয়। অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ২-৩ দিনের মধ্যে লক্ষণগুলো কমতে শুরু করে।

এক্ষেত্রে রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম কনিতে হবে, প্রচুর পানি পান করতে হবে, সঠিকভাবে খেতে হবে, নিয়মিত খাবার খেতে হবে ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে হবে।

টাইফয়েড প্রতিরোধে করণীয়

  • টাইফয়েড প্রতিরোধ করতে চাইলে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে আপনাকে। প্রথমেই নিশ্চিত করুন যে আপনার খাবার পানি নিরাপদ।
  • এরপর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন যেমন- ঘন ঘন আপনার হাত ধোয়া, কাঁচা ফল ও সবজি এড়িয়ে চলা, দূষিত স্থান থেকে দূরে থাকা ও বাসস্থানের চারপাশে স্যানিটেশন উন্নত করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো টাইফয়েডের টিকা গ্রহণ করুন।

যেসব খাবার খাওয়া উচিত

  • পানিসমৃদ্ধ খাবার:ডাবের পানি, লেবুর রস, এবং ওআরএস (ORS)
  • ফ্রুট জুস (চিনি ছাড়া) এবং হালকা সবজি বা মুরগির স্যুপ
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন
  • সহজপাচ্য শর্করা:সাদা ভাত, পোলাও, ওটমিল
  • সেদ্ধ আলু এবং মিষ্টি আলু
  • সহজে হজমযোগ্য খাবার:সাদা চাল
  • ওটস
  • তরল খাবার যেমন স্যুপ, জুস
  • পাকা কলা
  • আপেলসস
  • প্রোটিন:সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশ, চর্বিহীন মাংস (সেদ্ধ মুরগি বা মাছ)
  • মাছ (হালকাভাবে রান্না করা)
  • লো-ফ্যাট দই, দুধ, এবং পনির (যদি কোন অস্বস্তি না হয়)
  • ফল এবং সবজি:কলা, আপেল, পেঁপে, এবং তরমুজ
  • সিদ্ধ সবজি যেমন গাজর, কুমড়া, এবং বিটরুট
  • পোড়ানো বা সেদ্ধ খাবার:পাতলা খিচুড়ি, পোলাও, এবং পাউরুটি

যেসব খাবার খাওয়া যাবেনা

  1. মশলাযুক্ত এবং ভাজা খাবার:ভাজা খাবার, ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার
  2. অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার এবং ফাস্ট ফুড
  3. তেলযুক্ত মাছ
  4. প্রক্রিয়াজাত খাবার:প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, ক্যানড খাবার, এবং প্রিজারভেটিভ সমৃদ্ধ খাবার
  5. অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার
  6. কাঁচা সবজি এবং ফল:কাঁচা সবজি এবং কিছু কঠিন ফল (যা হজমে সমস্যা করতে পারে)
  7. বিশেষ করে রাস্তা বা বাজারের কাটা ফল
  8. অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন:অ্যালকোহলিক পানীয় এবং চা, কফি, সোডা জাতীয় ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়
  9. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার:উচ্চ ফাইবারযুক্ত শাকসবজি যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, এবং ব্রকলি

কিভাবে টাইফয়েড জ্বর সনাক্তকরণ করা হয়

পরীক্ষা নিরীক্ষার পর কেবল চিকিৎসকগণ বলতে পারবেন যে কারও টাইফয়েড জ্বর হয়েছে কিনা। টাইফয়েড দ্রুত সনাক্ত করার জন্য ব্লাড কালচার নামক রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। যদি নমুনায় স্যালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায় তাহলে প্রকার ভেদে টাইফয়েড ও প্যারা- টাইফয়েড পার্থক্য করা হয়।

এছাড়া জ্বর হওয়ার ২য় সপ্তাহে “উইডাল টেস্ট” নামে এক ধরনের ননস্পেসিফিক ব্লাড টেস্ট করতে হয় যাতে টাইটার দেখে টাইফয়েড নির্ধারণ করা হয়।

উপসংহার

আশা করছি টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার ধারনা পেয়েছেনএই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url