অ্যালার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক অ্যালার্জি এখন খুবই পরিচির ও সাধারণ একটি সমস্যা। প্রতিটি পরিবারেই কেউ না কেউ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত।এক এক জনের অ্যালার্জির ধরন এক এক মতো।কারো চোখে,কারো ফুসফুসে(কাসি হয়),কারো স্কিনে। পরিবেশ ও বিভিন্ন খাবার থেকে অ্যালার্জি হয়ে থাকে।কারও দুধে এলার্জি, কারও বিশেষ কোন সবজি কিংবা ফলে, আবারও কারও ধুলোবালিতে অ্যালার্জি হয়,
ভূমিকা
আমাদের শরীর সব সময়ই ক্ষতিকর বস্তুকে (পরজীবী, ছত্রাক, ভাইরাস, এবং ব্যাকটেরিয়া) প্রতিরোধের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করে। কখনও কখনও আমাদের শরীর সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন অনেক ধরনের বস্তুকেও ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে অ্যালার্জি বলা হয়।
এলার্জি কেন হয়?
এলার্জি হলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া যা সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন কিছু জিনিসকে ক্ষতিকর ভেবে আক্রমণ করে। এই জিনিসগুলিকে অ্যালার্জেন বলা হয়।
এলার্জির হওয়ার প্রধান কিছু কারণ
- জিনগত: এলার্জির ঝুঁকি অনেকাংশে জিনগত। যদি আপনার পরিবারে এলার্জি থাকে, তাহলে আপনারও এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিকাশ: শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনও বিকশিত হচ্ছে এবং এটি কিছু পদার্থকে ভুল করে ক্ষতিকর বলে মনে করতে পারে। এর ফলে শিশুদের মধ্যে এলার্জি বেশি দেখা যায়।
- পরিবেশগত কারণ: আমাদের পরিবেশে এলার্জেনের সংস্পর্শে আসার ফলে এলার্জি হতে পারে। ধুলো, পরাগ, পোষা প্রাণীর পশম, ছত্রাক, এবং কিছু খাবার এলার্জির সাধারণ কারণ।
- ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ: ধূমপান, দূষণ, এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এলার্জির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে
গরুর দুধ:
- এটি শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাদ্য অ্যালার্জি, তবে প্রাপ্তবয়স্কদেরও এটি হতে পারে। গরুর দুধের প্রোটিন, যেমন ক্যাসিন এবং ল্যাকটোজ, অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী।
চিনাবাদাম:
- চিনাবাদাম এবং অন্যান্য বাদাম (যেমন কাজু, বাদাম এবং আখরোট) খাদ্য অ্যালার্জির জন্য খুবই সাধারণ কারণ। বাদামের প্রোটিনগুলি অত্যন্ত অ্যালার্জেনিক হতে পারে এবং এমনকি ত্বকের সংস্পর্শে এলেও প্রতিক্রিয়া ট্রিগার করতে পারে।
ডিম:
- ডিমের সাদা অংশ এবং কুসুম উভয়ই অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী হতে পারে। ডিমের অ্যালার্জি শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই বয়সের সাথে সাথে এটি চলে যায়।
শেলফিশ:
- চিংড়ি, কাঁকড়া, স্ক্যালপ এবং লবস্টার সহ শেলফিশ খাদ্য অ্যালার্জির জন্য একটি সাধারণ কারণ। শেলফিশের প্রোটিনগুলি খুবই স্থিতিশীল এবং রান্নার পরেও অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া ট্রিগার করতে পারে।
- মাছ: স্যামন, টুনা এবং ম্যাকারেল সহ মাছ খাদ্য অ্যালার্জির জন্য আরেকটি সাধারণ কারণ। মাছের প্রোটিনগুলিও খুবই স্থিতিশীল এবং রান্নার পরেও অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া ট্রিগার করতে পারে।
বাদাম:
- বাদাম, আখরোট এবং পেস্তা সহ গাছ বাদাম খাদ্য অ্যালার্জির জন্য একটি সাধারণ কারণ। বাদামের প্রোটিনগুলি অত্যন্ত অ্যালার্জেনিক হতে পারে এবং এমনকি ত্বকের সংস্পর্শে এলেও প্রতিক্রিয়া ট্রিগার করতে পারে।
সয়া:
- সয়া একটি বহুমুখী খাবার যা বিভিন্ন খাবারে পাওয়া যায়। সয়াবিনের প্রোটিন খাদ্য অ্যালার্জির জন্য দায়ী হতে পারে।
গম:
- গমের প্রোটিন, গ্লুটেন, সিলিয়াক রোগের পাশাপাশি খাদ্য অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। গ্লুটেন গম, বার্লি এবং রাই সহ শস্যের একটি প্রোটিন।
চাল:
- চালের প্রোটিন কিছু লোকেদের মধ্যে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া ট্রিগার করতে পারে। চালের অ্যালার্জি তুলনামূলকভাবে বিরল, তবে এটি যেকোনো বয়সে হতে পারে। এটি চালের প্রোটিন, যেমন অ্যালবুমিন এবং গ্লোবুলিনের প্রতি শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়।
উপরের তালিকা ছাড়াও আরও অনেক খাবার আছে যেগুলো খাওয়ার কারণে অনেকের এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। নিচে এমন আরও বেশ কিছু খাবারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এলার্জির লক্ষণসমূহ
শরীর এলার্জিক উপাদানের সংস্পর্শে আসার পর খুব কম সময়ের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এলার্জির লক্ষণগুলো হলো চামড়ায় চুলকানি, র্যাশ বা ফুসকুড়ি হওয়াশরীরের কিছু অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, ফোস্কা পড়া ও চামড়া ঝরে যাওয়াঠোঁট, জিহ্বা, চোখ ও মুখ ফুলে যাওয়াচোখে চুলকানি, চোখ থেকে পানি পড়া, লাল হওয়া ।
ও ফুলে যাওয়াশুকনো কাশি, হাঁচি, নাকে ও গলায় চুলকানি ও নাক বন্ধ হওয়াশ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ চাপ লাগা ও শ্বাস নেওয়ার সময়ে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া
এলার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা
- সয়াবিন
- কুমড়া
- সরিষা
- তিল
- মটরশুটি
- সবুজ মটরশুটি
- আপেল
- গাজর
- আখরোট
- কাজু
- পেস্তা
- বাদাম
- চকোলেট
- কফি
- চা
- মধু
- মশলা
- টমেটো
- আলু
- গমের গ্লুটেন
- মেট্রোসয়াবিন
- কোকো
কোন কোন ডালে এলার্জি আছে
মসুরের ডালঃ
- মসুরের ডাল একটি অতীব পরিচিত একটি ডাল। কারণ গ্রামে বা শহরে এমন কোন ব্যক্তি নাই যে ব্যক্তি মসুর ডাল খায় না। আমরা বাঙালি যদি মসুর ডাল না চিনি তাহলে আমরা কেমন বাঙালি। কারণ আমরা খাওয়ার সময় ভাতের সাথে এই ডাল প্রতিনিয়ত খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা এটা জানি না যে এই ডালে প্রচুর পরিমাণ এলার্জি রয়েছে। তাই আমাদের যাদের এলার্জি রয়েছে আমরা সচেতন হয়ে এই ডাল খাব।
খেসারির ডালঃ
- আমরা বাঙালিরা খেসারির ডালও অনেক খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা এটি প্রতিনিয়ত খাওয়ার পরও আমরা জানি না যে এই ডালে এলার্জির প্রভাব রয়েছে। তবে এই ডালের এলার্জির পরিমাণ মসুর ডালের চেয়ে কিছুটা কম। তাই যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা একটু সচেতন হয়ে এই ডাল খাবেন।
মুগ ডালঃ
- মুগ ডাল সবাই খায় না। তবুও এটি অনেক জায়গায় অনেক বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন পিয়াজি বানাতে জুড়ি নেই। কিন্তু এই ডাল এত ব্যবহারের ফলেও আমরা এতোটুকু জানি না যে এই ডালেও এলার্জি প্রভাব রয়েছে। তবে এই ডালের এলার্জির পরিমাণ বেশ খানিকটাই কম।
উপসংহার
আশা করছি অ্যালার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা সম্পর্কে জেনে নিন ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url