উকিল হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা - উকিলের বেতন কত

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো একসময় আইন বিষয়ে পাস করার পর খুব সহজে বার কাউন্সিলের মেম্বার হয়ে উকিল হওয়া যেত। কিন্তু আজকাল এ পেশা প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে তিন ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আইনজীবীর সনদ দেওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়টি ভালো করে না জানার কারণে অনেকেরই সমস্যায় পড়তে হয়।
উকিল হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা - উকিলের বেতন কত
রাস্তায় চলতে-ফিরতে হঠাৎ যখন চোখে পড়ে কালো স্যুট আর ভিতরে সাদা জামা পরা ব্যক্তিদের, ঠিক তখন এক ধাক্কায় মাথায় আসে আইনজীবীদের(Lawyer) কথা।অনেকের মনেই সুপ্ত বাসনা থাকে আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু, কীভাবে পড়াশোনা করলে হতে পারে স্বপ্নপূরণ।

ভূমিকা

উকিল হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাদের জন্য উকিল হওয়ার জন্য কোন বিষয় নিয়ে পড়তে হবে ,এডভোকেট ব্যারিস্টার উকিল হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা , উকিল এডভোকেট ব্যারিস্টার হতে কত টাকা লাগে , বাংলাদেশে আইনজীবী হওয়ার নূন্যতম বয়স , সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

উকিল হতে হলে কোন বিষয় নিয়ে পড়তে হবে

আইনজীবী হতে গেলে স্কুল স্তরে কলা, বিজ্ঞান বা বাণিজ্যি, কোন শাখায় কোনও শিক্ষার্থী পড়েছেন তা বিশেষ মান্যতা রাখে না। প্রয়োজন শুধু ভাল নম্বরের। উচ্চ মাধ্যমিক বা স্নাতক স্তরে ৪৫ শতাংশের উপরে নম্বর থাকলেই যে কেউ আইনজীবী হওয়ার প্রথম ধাপ অর্থ্যাৎ প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। দুটি পদ্ধতি অবলম্বনে আইন কলেজে প্রবেশ করা যায়।

প্রথম বিএ-এল.এল.বি, যা আদপে ৫ বছরের একটি কোর্স। উচ্চ মাধ্যমিকের পরই এই কোর্সে অংশগ্রহণ করতে হয়। আর একটি পদ্ধতি হল, স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করে তারপর আইন কলেজে প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসা। এই ক্ষেত্রে পড়ুয়াকে ৩ বছরের এল.এল.এল.বি কোর্সের মধ্যে দিয়ে নিজের আইনের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে হয়।

উকিল হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা

আইনজীবী হওয়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় যোগ্যতা দেওয়া হলো বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থাকতে হবে।
বয়স ২১ বছর বা তার বেশি হতে হবে।এইচএসসি পাস হতে হবে।এলএলবি অনার্স এবং এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধন করতে হবে।আইন বিষয়ে পড়াশোনা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে কোনো।

  • বিশ্ববিদ্যালয় বা বার কাউন্সিল স্বীকৃত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি গ্রহণযোগ্য। আপনার গ্র্যাজুয়েশন যদি আইন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে হয়ে থাকে, তাহলে এলএলবি কোর্স সম্পন্ন করা প্রয়োজন।বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ : আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার পর কমপক্ষে ৬ মাস একজন শিক্ষানবিশ হিসেবে সিনিয়র কোনো অ্যাডভোকেটের অধীনে কাজ করতে হবে।
  • এরপর মৌখিক, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হলে অ্যাডভোকেট হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন।আপনি যদি আইনজীবী হতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে আইন বিষয়ে ডিগ্রী অর্জন করতে হবে।বাংলাদেশের স্বীকৃত যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনাকে ৪ বছরের অনার্স এলএলবি অথবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২ বছরের এলএলবি পাস কোর্স সম্পূর্ণ করতে হবে।

তার পরবর্তীতে বাংলাদেশের বার কাউন্সিল নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। ১০০ নম্বরের বহুনির্বাচনী প্রশ্ন, ১০০ নম্বরের লিখিত ও ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় আলাদা আলাদা পাশ করার পর একজন ব্যক্তি একজন আইনজীবী ও এডভোকেট বার কাউন্সিলের এন্ডরোলমেন্ট হয়। দেশের সরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি রয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইন কলেজগুলোতেও পড়াশোনার সুযোগ আছে। এছাড়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল।

উকিলের বেতন কত

পড়ার খরচ : চার বছর মেয়াদি কোর্সের মোট খরচ তিন লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে নির্ভর করবে আপনি কেমন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছরের কোর্স করবেন তার ওপর। দুই বছর মেয়াদি এই কোর্সের খরচ ৯০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
সুযোগ-সুবিধা : আইন পড়ে কেউ আইনজীবী ।

হতে না চাইলেও তার জন্য সরকারি-বেসরকারি চাকরির দুয়ার খোলা। আইন পড়ার আরেকটি মজার বিষয় হলো আপনি স্বাস্থ্য, প্রকৌশলী, আইটিসহ অনেক সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পাবেন। ছোট-বড় সব ধরনের কোম্পানিতেই লিগ্যাল সেক্টরে চাকরি বা পরামর্শক হিসেবে আইনের ছাত্রছাত্রীরা ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।আয়-রোজগার একজন আইনজীবীর আয়।

 কাজের ধরন ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল। বার সনদ নেওয়ার শুরুতে হয়তো আপনি মাসে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন। সিনিয়র আইনজীবীদের ক্ষেত্রে আয় কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

উকিল এডভোকেট ব্যারিস্টার হতে কত টাকা লাগে

দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আইন বিভাগের পড়ার খরচ একেক রকম হয়ে থাকে।
  1. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৪ বছরের সাধারণত ৪০-৯০ হাজার টাকা খরচ হয়।
  2. প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৩ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়।
  3. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৪০ – ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়।

বাংলাদেশে আইনজীবী হওয়ার নূন্যতম বয়স

বাংলাদেশে আইনজীবী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২১ বছর। এর উপরে আপনি যেকোনো বয়সে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিতে পারবেন। কিন্তু ৪০ বছরের বেশি হলে বার কাউন্সিল এর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কম পাওয়া যায়। তবে সব বার কাউন্সিলে এমন তা কিন্তু নয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হওয়াটা সকল এডভোকেটরেই স্বপ্ন হয়ে থাকে। আপনি যদি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হতে চান তাহলে বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্তি পরীক্ষায় পাশ করলেই সে আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করতে পারে জেলা আদালতসমূহে এবং ২ বছর নিম্ন আদালতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে সে সুপ্রিম কোর্টের ।

আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে এবং পাশ করলে হাইকোর্টে প্রাকটিস করার লাইসেন্স লাভ করে।
আপনার কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। নিচে নির্মুক্ত যোগ্যতাগুলো আপনার প্রয়োজন।
  •  ৪ বছর মেয়াদি আইনের স্নাতক বা ২ বছর মেয়াদী ডিগ্রী পাস কোর্স।
  •  বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এডভোকেট হতে হবে।
  •  বাংলাদেশের কোন নিম্ন আদালতে সর্বনিম্ন ২ বছরের চর্চা করার অভিজ্ঞতা অথবা এলএলবি ডিগ্রীসহ সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবীর অধীনে ২ বছরের কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
  •  দেওয়ানী মামলা সর্বনিম্ন ২৫ টি এবং ফৌজদারি মামলার ২৫ টি মামলায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

ডিগ্রী পাস করে কি আইন নিয়ে পড়া যায়

হ্যা পড়া যায় অ্যাডভোকেট হতে হলে বা আইন পেশায় ঢুকতে হলে: প্রথমে আপনাকে এইচএসসি পাসের পর যে কোনো সরকারি অথবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদে ভর্তি হতে হবে। এখানে আপনাকে চার বছরমেয়াদি এলএলবি অনার্স সম্পন্ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

আপনি ইচ্ছা করলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন। আর বাংলাদেশের প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের জন্য এলএলবি অনার্স কোর্স চালু আছে। এখানে পড়তে হলে প্রতিষ্ঠানভেদে খরচ পড়বে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা। এছাড়া আপনি চার বছর মেয়াদি এলএলবি না করেও আইন পেশায় আসতে পারেন। এ জন্য আপনাকে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ।

অথবা কলেজ থেকে অনার্স বা ডিগ্রি পাস করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অধীনে যে কোনো ল’ কলেজে দু’বছর এলএলবি (পাস) কোর্স করতে হবে। এখানে আপনার খরচ পড়বে বিশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়া যায়।এখানে খরচ ৮০হাজার থেকে ১লাখ টাকা পড়বে আপনাকে এলএলবি অনার্স শেষে বার কাউন্সিল সনদ গ্রহণ করে ।

সিএমএম জজকোর্ট, হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের জন্য আলাদা আলাদা বারের সনদ গ্রহণ করতে হবে। সনদ পাওয়ার জন্য প্রথমে বার কাউন্সিলের ফরমে আবেদন করতে হবে। এরপর তিন ধাপে তথা এমসিকিউ,লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

উকিলের কাজ কি হয়ে থাকে

আইনজীবী হলেন 'আইন ব্যবসায়ী', যিনি একজন অ্যাডভোকেট, ব্যারিস্টার, অ্যাটর্নি, সলিসিটর বা আইনি উপদেশক। আইনজীবী মূলত আইনের তাত্ত্বিক বিষয়গুলির বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তির বা সংস্থার আইনি সমস্যার সমাধানের কাজ করে থাকেন। তারা বিভিন্ন ধরনের আইনি মামলায় যেকোনো এক পক্ষের হয়ে লড়াই করে থাকেন।

অ্যাডভোকেসি এমন একটি পেশা যেখানে কর্মের প্রতি নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং প্রচেষ্টা ছাড়া কোনো ভাবেই উন্নতি সম্ভব না। সঠিক বিচার কাজে সাহায্য করা এবং দোষীকে চিহ্নিত করতে বিচারককে সহায়তা করার ক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠা একান্ত প্রয়োজন

লেখকের শেষ কথা

আশা করছি উকিল হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা - উকিলের বেতন কত সকল প্রকারের ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url