উন্নত জাতের গরু পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বি হওয়ার উপায় জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আজকে উন্নত জাতের গরু পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বি হয়ার উপায় আমরা জানবো দেশে বর্তমানে ২০ লিটারের অধিক দুধ দেয় এমন গাভীর সংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষের কাছাকাছি। এসব সম্ভব হয়েছে প্রাণিসম্পদে গাভীর জাত উন্নয়নের মাধ্যমে,ডেইরি এবং ক্যাটেল শিল্পে এখন শিকিষত যুবক-যুবতীরা খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অনেকে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন বুঝতে পারবেন।
উন্নত জাতের গরু পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বি হওয়ার উপায় জেনে নিন

ভূমিকা 

গরুর দুধ আমাদের দেহের জন্য অত্যান্ত পুষ্টিকর ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই গরু পালনের ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য করা উচিত কোন গরু বেশি দুধ দিতে সক্ষম। কোন জাতের গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয় তা নিচের আলোচনায় বিস্তারিত তুলে ধরা হল

উন্নত জাতের গরু পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বি

কোন ধরনের গরু নিয়ে ফার্ম শুরু করবো আপনার খামারের জন্য কোন ধরনের গরু বেশি উপযোগী ঠিক তেমনি গরুর যে জাত ডেনমার্ক কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় অনেক দুগ্ধ উৎপাদন করে তা বাংলাদেশে এসেও তেমন ফলন দেবে এমনটা চিন্তা করা অনেকটা কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতোই। ব্যবসায় লাভবান হতে গেলে কোন জাতের গরু কতোটা দুধ দেয় তা ভাবার আগে খামারীরা।

যদি বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর জন্য উপযোগী এমন পশু লালন-পালন করে তবেই তা বুদ্ধিমানের কাজ এবং যুগোপযোগী। আসুন এসম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই কোন ধরনের গরু আমাদের আবহাওয়ায় বেশি উপযোগী এ সম্পর্কেঃবাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ দু’টি রাষ্ট্র হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান। 

তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাদের আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে যে কোনো প্রাণীর মানিয়ে নেয়াটা অনেক সহজ ও সাবলীল। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, পাকিস্তানী এবং ভারতীয় জাতের গরু খুব সহজেই বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে পারে।বিদেশী গরুর পাশাপাশি শাহীওয়াল, সিন্ধি, হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান এবং সংকর জাতের গরু এদেশের ।

অনেক খামারে জায়গা করে নিয়েছে। অধিক দুগ্ধ উৎপাদন এবং লালন-পালনের সুবিধার জন্য লোকসমাজে দিনে দিনে এসব গরুর চাহিদা বেড়েই চলেছে।বাংলাদেশের শাহজাতপুর, পাবনা, মুন্সি, মাদারিপুর এবং চট্টগ্রাম এলাকায় বেশ উন্নতমানের গবাদিপশু রয়েছে যারা অধিক পরিমাণে দুগ্ধ উৎপাদন করে। তাই এ সমস্ত এলাকায় প্রচুর পরিমাণে দুধ পাওয়া যায়।

এসব গবাদিপশু অন্যসব প্রজাতি অপেক্ষা উন্নততর তাই অধিক ফলন দিয়ে থাকে বর্তমানে এদেশের খামারীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সংকর জাতের গরু। এদেশের আবহাওয়ার সাথে সহজে খাপ খাওয়াতে পারা এবং অধিক উৎপাদন ক্ষমতার জন্য দিনে দিনে জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। দেশি গাভী এবং বিদেশী উন্নত জাতের ষাঁড়ের প্রজননের মাধ্যমেই জনপ্রিয় এই সংকর জাতের গাভীর উৎপত্তি।

অধিক উৎপাদন ক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য আমাদের দেশে দু’ধরনের সংকর জাতের গরু উৎপাদন করা হয়ে থাকে, যেমন-ফ্রিজিয়ান ষাঁড়ের সাথে শাহীওয়াল বকনা বা গাভীর মিশ্রণে এবং ফ্রিজিয়ান ষাঁড়ের সাথে দেশী বকনা বা গাভীর মিশ্রণে।সংকর গাভীর গড় ওজন ৩০০-৪৫০ কেজি, প্রতিদিন দুধ দেয় ১২-১৮ কেজি দৈহিক আকৃতি দানবাকার ।

হলেই কি বেশি দুধ দেবে?দৈহিক আকৃতি দানবাকার হলেই যে গাভীটি বেশি দুধ দেবে এমনটা ভাবা বোকামী। দুধেল গাভীর দৈহিক আকৃতি পাতলা এবং পুরুর সংমিশ্রণ হবে। যেমন- দেহের সামনের দিক সাধারণত হালকা, পিছনের দিক ভারী ও সুসংগঠিত হবে। গাভীর সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গ সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সুগঠিত হবে। দৈহিক আকার আকর্ষণীয় ও শরীরের গঠন ঢিলা হবে।

কোন জাতের গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয়

হোলস্টেইন ফ্রিজিয়ান
দুগ্ধখামার তৈরির ক্ষেত্রে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গাভী গুলো সারাবিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও উন্নত মানের জাত হিসেবে গবেষণায় পরিচিত। নেদারল্যান্ডসের ফ্রিজল্যান্ড ও জার্মানির হোলস্টেইন অঞ্চলে উৎপত্তি এই গাভীর। আকারে বিশালদেহী, সাদা-কালো ও সাদা-লাল বর্ণের এই গাভী দুগ্ধখামারে অত্যন্ত পরিচিত। সাধারণত একটি হোলস্টেইন ফ্রিজিয়ান গাভী ২৫-৩৫ লিটার দুধ দিতে সক্ষম। 

তবে কিছু কিছু অতি উন্নত ভার্সনের ৪৫ কেজি পর্যন্ত দুধ দিতেও সক্ষম। এই গাভী গুলো অত্যন্ত শান্ত। একটি পূর্ণ বয়স্ক ফিজিয়ান গাভীর ওজন ৬৫০-৮০০ কেজি হতে পারে। তবে গাভীর এই দুধ দেওয়ার ক্ষমতা তার বয়স, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ওপর নির্ভরশীল।

জার্সি
ফ্রিজিয়ানের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও উন্নত দুগ্ধজাত গাভীর জাতটি হচ্ছে জার্সি। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যবর্তী জার্সি দ্বীপে এই গাভী পাওয়া গেলেও এখন সারাবিশ্বে পালন করা হয় দুধের জন্য। আকারে ফ্রিজিয়ানের চেয়ে একটু ছোট এই গাভীর ওজন পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ওজন ৩৫০-৫০০ কেজি৷ শ্যামলা, বাদামী, মুখের অংশ সাদা এবং নাকের অংশ লাল রঙের হয়ে জার্সি গাভীর। 

এদের পিঠের শিরদাঁড়া সোজা ও ঘাড়ের দিক থেকে কৌণিক আকৃতির। একটি সুস্থ পূর্ণবয়স্ক জার্সি গাভী প্রতিদিন ১৫-২৫ লিটার দুধ দিতে সক্ষম। তবে আবহাওয়া, স্বাস্থ্য, সময়ের ওপর দুধের পরিমাণ নির্ভরশীল। যেকোনো আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে সক্ষম হওয়ায় জার্সি গাভীর বিশ্বব্যাপী ব্যপক চাহিদা আছে।

রেড বা লাল সিন্ধি
পাকিস্তানের সিন্ধু নদী তীরবর্তী সিন্ধু প্রদেশে এই গরুর আদিনিবাস। সেই জন্যই এর নামের সাথে ‘সিন্ধি’ শব্দ যুক্ত আছে। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ব্রাউন সুইচ, ড্যানিশ রেড ও হোলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের সংমিশ্রণের মতো এই জাতটি আছে। রেড সিন্ধি শুধু দুধ না বরং মাংসের জন্যও অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য এই গরুর জাতটি খুবই উপযোগী। 

গাড়ো লাল রঙের রেড সিন্ধির ওজন ৩০০-৪০০ কেজি হয় এবং দৈনিক ১২-২০ লিটার দুধ প্রদান করে থাকে। তবে গরুর স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও অবস্থার ওপর এই পরিমাণ নির্ভরশীল।

শাহীওয়াল
দুধ উৎপাদনের জন্য শাহিওয়াল সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও উন্নত জাতের একটি। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শাহিওয়াল জেলায় আদিনিবাস হওয়ায় এই জাতটি শাহিওয়াল হিসেবেই নামকরণ করা হয়েছে। তবে, শুধু দুধ উৎপাদন না, বরং মাংস উৎপাদনের ক্ষেত্রে শাহিওয়াল দেশের খামারিদের কাছে খুবই চাহিদাসম্পন্ন একটি জাতশাহিওয়াল গাড়ো লাল, সোনালী বা বাদামী রঙের হয়ে থাকে। 

কাঁধের কুঁজ সোজা, শিং গুলো ছোট ও মোটা আকৃতির হয়। আবার গলার চামড়া নিচের দিকে অনেকটা ঝুলে থাকে। একটি শাহিওয়াল গাভীর ওজন প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ৪৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। উন্নত ও সুস্থ একটি গাভী দৈনিক প্রায় ২৫ লিটার হয়ে থাকে। সাধারণত স্বাভাবিকভাবেই ১২-১৮ লিটার হয়ে থাকে অবশ্যই। তবে সবকিছুই গাভীর পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্য ও অবস্থার ওপর নির্ভরশীল।

উন্নত দেশি গাভী
বাংলাদেশের নিজস্ব রয়েছে কিছু উন্নত জাতের গাভী। দেশের গ্রামীণ পর্যায়ে এই জাতের গরু বেশি দেখা যায় বানিজ্যিক খামারের তুলনায়। এই ধরণের গাভী কে পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্য ও ভালো আবহাওয়ায় রাখলে ২-৩ লিটার দৈনিক দুধ দিতে পারবে।

কম খরচে গরু পালন

বর্তমান সময়ে গরু পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। গরু পালন করে লাভবান হতে হলে আমাদের অবশ্যই ধৈর্যের সাথে কাজ করতে হবে এবং কম খরচে গরু পালন করতে হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হবে কম খরচে গরু পালন করে অধিক মুনাফা অর্জন করা। তবে আমাদের মাথাই রাখতে হবে এতোটাই কম খরচ করা যাবে না যে গরু অপুষ্টিতে ভোগে ও রোগাকান্ত হয়ে যায়।

গরুর প্রতিদিনের খাবার বাবদ খরচ কম করতে হবে তবে মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।উৎপাদন মৌসুমে গরু খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। গরুর খাবার খরচ কমানোর সাথে সাথে অনান্য খরচগুলোও কম করতে হবে। বিভিন্ন প্রকার দানাদার ও প্রক্রিয়াজাত খাবার না দিয়ে গরুকে বেশি পরিমাণে কাচা ঘাস দিতে হবে।

নেপোননিয়া খাস চাষ করেও গরু পালন করা সম্ভব হবে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘাস ভাষ করা হয় থাকে। প্রতিদিন গরুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিষ্কার পানি সবুজ কাঁচা ঘাস ও খর দিতে হবে। চরণভূমিতে চরাতে নিয়ে যেতে হবে এতে গরুর শরীর ঠিক থাকবে ও খাবার খরচ কম হবে ।

গরু পালন প্রশিক্ষণ

বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে আমাদের বিশাল যুবসমাজকে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ করতে হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই যুব ‍উন্নয়ন অধিদপ্তর দেশব্যাপী কর্মপ্রত্যাশী যুবক ও যুবনারীদের জন্য SDG এর লক্ষ্যমাত্রা ৮.৬ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের কর্মমূখী প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে আসছে ।

গরু মোটাতাজাকরণ কোর্সটি গগলস কৃষিকথা ও আইসিটি ডিভিশনের এটুআই প্রকল্পের মুক্তপাঠ, ই- লার্নিং প্লাটফর্ম এর যৌথ উদ্যোগে প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশে গরু পালন যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ দশে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে,সেক্ষেত্রে প্রয়োজন সঠিক দিক নির্দেশনা। গরু চাহিদা মেটাতে আমাদের স্ব-নির্ভরতার পেছনে ।

প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং গরু মোটাতাজাকরনে খামারিদের একান্ত আগ্রহ কাজ করছে।শুধুমাত্র বড় খামারি নয়,দেশের প্রতিটি খামারির নিকট প্রয়োজনীয় তথ্য এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে গরু মোটাতাজাকরনের সকল রহস্য পৌছে দেয়ার উদ্দেশেই কোর্সটি প্রস্তুত করা হয়েছে। একটি খামারের বাৎসরিক খরচ কমিয়ে খামারকে লাভজনক করে ।

তোলার ব্যাপারে গুরত্ব দেয়া হয়েছে এই কোর্সটিতে। উক্ত কোর্সে ১৩ টি পর্ব ও ৩৯ টি পাঠ রয়েছে । একজন খামারি সবগুলো পাঠে অংশগ্রহন করার মাধ্যমে মডার্ন ফ্যাটেনিং এর সিক্রেটস বিষয়ক বিস্তারিত জানতে পারবেন।

গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

1,তড়কা রোগ (Anthrax) :
তড়কা বা অ্যানথ্রাক্স একটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট অতি তীব্র প্রকৃতির মারাত্মক রোগ।
লক্ষণ
  • জ্বর (১০৪°-১০৭° ফা:)।
  • ক্ষুধামান্দ্য, দ্রূত শ্বাস-প্রশ্বাস, পেট ফাঁপা, গর্ভপাত ও দেহের কাঁপুনি।
  • নাক, মুখ, প্রশ্রাব ও মলদ্বার দিয়ে রক্ত ক্ষরণ।
  • শরীরের ভিতরে বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত ক্ষরণ।
চিকিৎসা
  1. এন্টিসিরাম ও এন্টিবায়োটিক ভাল কাজ করে।
  2. এন্টিসিরাম ১০০-২৫০ মিলি; প্রতিটি মহিষকে প্রত্যহ শিরায় ইনজেকশন দিতে হবে।
  3. একই সময়ে এন্টিসিরাম ও এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন অধিক কার্যকর।
  4. পেনিসিলিন জাতীয় ঔষধ দিনে দুইবার করে ৫ দিন মাংস পেশীতে ইনজেকশন দিতে হয় (প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০,০০০ ইউনিট করে)।
  5. মৃত প্রাণী ও প্রাণীর শরীর থেকে নির্গত রক্ত ও মল, মূত্র গভীর গর্ত করে চুন সহকারে পুতে ফেলতে হবে। পরে প্রাণীর আবাসস্থল ১০% ফরমালডিহাইড দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
2,বাদলা রোগ (Black Quarter) 
প্রধানত ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়স্ক মহিষ আক্রান্ত হয়।
লক্ষণ
  • অতি তীব্র ও তীব্র এই দুই প্রকার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
  • আক্রান্ত স্থান ফুলে যাবে, পচন ধরবে ও মহিষ খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটবে।
  • আক্রান্ত স্থানে চাপ দিলে পচ পচ শব্দ হবে।
চিকিৎসা
  • পেনিসিলিন ইনজেকশন দিতে হয় (প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০,০০০ আই ইউ)।
  • প্রথমে ক্রিস্টালিন পেনিসিলিন ইনজেকশন (শিরায়) দিতে হবে।
  • পরবর্তীতে প্রোকেইন পেনিসিলিন অর্ধেক মাত্রায় আক্রান্ত পেশী এবং মাংশপেশীতে দিনে দুইবার করে ৫-৭ দিন দিতে হবে।
3,গলাফোলা রোগ (Hemorrhagic Septicemia) :
লক্ষণ

  • হঠাৎ করে দেহের তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পায় (১০৫°-১০৭° ফা.)।
  • গলার নীচের অংশ ফুলে যায় এবং হাত দিলে গরম অনুভূত হয়। ফুলা ক্রমশ গলা থেকে বুক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শব্দ হয়, নাক-মুখ দিয়ে তরল পদার্থ নিঃসরণ হয়।
  • অনেক সময় জিহবা ফুলে যায়, জিহবা বের করে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়।
  • রোগ খুবই তীব্র প্রকৃতির হলে পশু ২৪ ঘন্টার মধ্যে মারা যায়।
চিকিৎসা
  1. লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে চিকিৎসা করালে ভাল ফল পাওয়া যায়।
  2. প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০-২০ মিলি ওটেট্রো ভেট অথবা ২-৭ মিলি এসাইপিলিন অথবা স্ট্রেপটোপেন ইনজেকশন ৫-৭ মিলি মাংসে প্রয়োগ করতে হবে।
  3. প্রতিটি ইনজেকশন ২৪ ঘন্টা পরপর ৩-৫ দিন প্রয়োগ করতে হবে।
  4. এর সাথে এন্টিহিস্টামিন ইনজেকশন ৫-১০ মিলি (প্রতি ১০০কেজির জন্য) দিনে ২-৩ বার মাংশে প্রয়োগ করতে হবে।
4,ম্যসিটাইটিস :
প্রাণীর ওলানের গ্লান্ডুলার টিস্যুর প্রদাহওক ম্যসিটাইটিস বা ওলান ফোলা বা ঠুনকো রোগ বলে।
চিকিৎসা
  • ওলানে এন্টিবায়োটিক ও ব্যাথানাশক ইনজেকশন দিতে হবে।
  • স্যালাইন দিতে হবে।
  • পাইপের সাহায্যে ১০-১৫ মিনিট ঠান্ডা পানি স্প্রে করা যেতে পারে।
  • দুধ দোহনের পূর্বে দোহনকারীর হাত, গাভীর ওলান ও বাট পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার কাপড় দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে।
5,দুধ জ্বর :
বেশি দুধ প্রদান করে এরকম গাভীতে রোগটি বেশি দেখা যায়। গাভীর রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমান ৫ মিলি গ্রাম এর কম হলে এ রোগ হয়।
লক্ষণ
  • ক্ষুধামন্দা, পেশীতে কাপুনি, অনুভূতিহীন ও নিদ্রাভাব।
  • চোখের মনি বড় হয়ে যায় ও জিহবা বের হয়ে আসে।
  • শেষের দিকে গাভী বুকে ভর দিয়ে মাথা এক দিকে বাকিয়ে শুয়ে পড়ে।
  • অচেতন হয়, পেট ফুলে যায় এবং মারা যায়।
চিকিৎসা
  • যত দ্রুত সম্ভব ক্যালসিয়াম বোরো গ্লুকোনেট সলুশন ইনজেকশন দিতে হবে। অর্ধেক ত্বকের নিচে এবং বাকি অর্ধেক শিরায় ৫-১০ মিনিট ধরে দিতে হয়। অতিরিক্ত মাত্রায় এবং দ্রুত শিরায় দিলে প্রাণীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
  • সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম রক্তে গেলেই গাভী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। অপর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম সলুশন দিয়ে চিকিৎসা করলে গাভী সুস্থ হয় না বা পুনরায় অসুস্থ হয়।
6,কিটোসিস :
এটি একটি বিপাকীয় রোগ। অধিক দুধ উৎপাদনশীল গাভীতে এ রোগ হয়। রক্তে গ্লুকোজের অভাব এ রোগের কারণ।
লক্ষণ
  • বাচ্চা প্রসবের ২০-৩০ দিনের মধ্যে এ রোগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
  • সাধারণত বাচ্চা প্রসবের প্রথম মাসে সর্বোচ্চ, দ্বিতীয় মাসে অপেক্ষাকৃত কম এবং গর্ভাবস্থায় কদাচিৎ এ রোগ দেখা যায়।
7,ল্যাকটেশন টিটেনি :
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিজনিত একটি অতি মারাত্বক রোগ। বাচ্চা প্রসবের দুই মাসের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব সর্বোচ্চ। প্রাণীকে শুধু ঘাস খাওয়ালে এ রোগ হয়।
লক্ষণ
  1. হঠাৎ খাদ্যগ্রহণ বন্ধ।
  2. মাঝে মাঝে উত্তেজিত হয়ে লাফালাফি।
  3. হাটতে গেলে হোচট খাওয়া।
  4. খিচুনি এবং দেহের তাপ ও শ্বাস-প্রশ্বাস বৃদ্ধি।
  5. ডায়রিয়া ও ঘন ঘন প্রসাব।
  6. চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ঘন্টার মধ্যে মৃত্যু।
  7. চিকিৎসা না করালে মহিষ মারা যেতে পারে।
8,পেট ফাপা :
অতিরিক্ত গ্যাস জমে পেট ফাপা রোগের সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ
  • প্রথমে গরুর পেটের বামদিকের উপরের অংশ ফুলে, পরে পুরো পেট ফুলে যায়।
  • পেটে লাথি মারে, ঘন ঘন উঠাবসা করে, মাঝে মাঝে মাটিতে গড়াগড়ি করে।
  • পেটে আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিলে বিশেষ শব্দ হয়।
  • খাদ্যগ্রহন বন্ধ হয়।
  • চিকিৎসা না করালে মহিষ মারা যেতে পারে।
9,রক্ত-প্রস্রাব বা ব্যাবেসিওসিস :
জীবজন্তুর আঁটুলিবাহিত রোগের মধ্যে এটি অন্যতম। এ রোগে উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি গরুর মুত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত ৯ মাস বয়স পর্যন্ত গরু মহিষ এ রোগে আক্রান্ত হয় না।
লক্ষণ
  • ক্ষুধামান্দ্য ও উচ্চ তাপমাত্রা (১০৩°-১০৭° ফা)।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যাওয়া।
  • রক্তশূন্যতা ও রক্তপ্রস্রাব দেখা দেয়।
  • যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে ৪-৮ দিনের মধ্যে আক্রান্ত প্রাণীর মৃত্যু হয়।

লেখকের শেষ কথা

আশা করছি উন্নত জাতের গরু পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বি সম্পর্কে সকল প্রকারের ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url