দুবাইয়ের সেরা ৭ দর্শনীয় স্থান জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো দুবাইয়ের সেরা ৭ দর্শনীয় স্থান জেনে নিন দুবাইয়ের সেরা ৭ দর্শনীয় স্থান জেনে নিন দুবাই শহরের কথা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রধান শহর এটি। আরব সাগরের গা ঘেঁষা এ শহরের বৈশিষ্ট্য অন্য সব শহর থেকে আলাদা। রাজসিক জীবন, চোখ ধাঁধানো আলো, বিশাল অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জসহ বিভিন্ন কারণে দুবাই শহর মানুষের পছন্দের শীর্ষে।
দুবাইয়ের সেরা ৭ দর্শনীয় স্থান জেনে নিন

ভূমিকা 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, প্রধান শহর, নিরাপদ শহর ও আমিরাতে বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাই। বিলাসবহুল জীবনযাপন, চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি, আকাশচুম্বি অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জসহ ব্যবসায়িক কারণে দুবাই ভ্রমণপ্রিয়দের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।

১, বুর্জ খলিফা

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফা, যা একইসঙ্গে একটি সাত তারকা হোটেল, মসজিদ, বিনোদনকেন্দ্র, নাইট ক্লাব, অ্যাপার্টমেন্ট, অফিস এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ ডেক হিসেবে বিখ্যাত। ভবনটি জুমেইরা সৈকত থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বুর্জ খলিফা ‘দুবাই টাওয়ার’ নামেও পরিচিত। ১৬০ তলাবিশিষ্ট আকাশচুম্বী এ ভবনটির ।

মোট উচ্চতা ২ হাজার ৭১৭ ফুট, যার অবকাঠামো রকেটের মতো। এ ভবনে ঘণ্টায় ৪০ মাইল গতিবেগে চলে এমন মোট ৫৪টি এলিভেটর আছে।পর্যটকদের কাছে এটি নিঃসন্দেহে আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় এবং আকর্ষণীয় স্থান। এ ভবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হলো ১২৪ তলার ওপরে প্রকৃতি দর্শনের জন্য পর্যবেক্ষণ ডেকটি। এখান থেকে শুধু দুবাই নয়।

 আরবের একটি বড় অংশ পর্যবেক্ষণ করা যায়। ভূমি ছেড়ে এ ভবনটি এতই উপরে উঠেছে যে, একই বিল্ডিংয়ে থাকা সত্ত্বেও এখানকার মানুষজন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে পান। শুধু উচ্চতাই নয়, বুর্জ খলিফার আভিজাত্য এবং চোখ ধাঁধানো নির্মাণশৈলী এক মুহূর্তেই আপনাকে বিমোহিত করে তুলবে। তবে বুর্জ খলিফা ভ্রমণের ক্ষেত্রে সূর্যোদয়ের সময়টি বেছে নিতে ভুলবেন না যেন।

২,বুর্জ আল আরব

বিশ্বের একমাত্র বিলাসবহুল সাত তারকা হোটেল বুর্জ আল আরব। ৩২১ মিটার লম্বা এ ভবনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে অনেকটা পাল তোলা জাহাজ বা তিমি মাছের মতো, যা জুমেরিয়া সৈকতে পাশে সমুদ্রের মধ্যে একটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর তৈরি করা হয়েছে। আকাশচুম্বী এ হোটেল বিশ্বের চতুর্থ সুউচ্চ ভবন। 

বিলাসবহুল এ হোটেলের অত্যাধুনিক রাজকীয় অন্দরসজ্জা, দৃষ্টিনন্দন অ্যাকুরিয়াম এবং চমৎকার ইন্টেরিয়র ডিজাইন আপনাকে দারুণ এক শিহরণ দেবে।হোটেলের প্রতিটি রুমেই রয়েছে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের আইপ্যাড, যার মাধ্যমে আপনি সহজেই হোটেল এবং রেস্তোরাঁর নানা তথ্য জানতে পারবেন। ব্যাপক ব্যয়বহুল এ হোটেলে প্রতি রাত থাকার জন্য খরচ হবে ।

৪ হাজার ৫০০ দিরহাম। তবে, এত টাকা খরচ না করেও পাশে থাকা জুমেইরা সৈকতে গিয়ে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করে নিতে পারেন আপনি।হেলিপ্যাডভবনের শীর্ষে ক্যান্টিলিভারের সহায়তায় একটি হেলিপ্যাড বসানো হয়েছে। এই হেলিপ্যাডে হোটেলটির ইতিহাসে স্মরনীয় কয়েকটি পাবলিক কর্মসুচি হয়েছে- আইরিশ গায়ক রোনান কিটিং তার মিউজিক ।

ভিডিও’র শূটিং করেছেন এই হেলিপ্যাডে। ২০০৪ সালের মার্চ মাসে গল্‌ফার টাইগার উড এই হেলিপ্যাড থেকে পার্শিয়ান গালফ সাগরের দিকে বেশ কয়েকটি বল মেরেছেন। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে টেনিস তারকা আন্দ্রে আগাসি এবং রজার ফেদেরার এই হেলিপ্যাডে একটি ম্যাচ খেলেছেন। তখন অস্থায়ীভাবে হেলিপ্যাডটিকে একটি ঘাসবহুল টেনিস কোর্টে রূপান্তর করা হয়েছিল। 

হেলিপ্যাডে কোন সীমানা কিংবা বেড়া নেই, তাই টেনিস বল যদি একবার কোর্টের বাইরে চলে যায় তবে সেটি ফিরিয়ে আনার কোন উপায় নেই।

৩,আটলান্টিস, দি পাম

আটলান্টিস, দি পাম হচ্ছে একটি হোটেল রিসোর্ট, যা দুবাইয়ের পাম জুমাইরাতে অবস্থিত। কৃত্রিম দ্বীপের ওপর তৈরি এটিই বিশ্বের প্রথম রিসোর্ট। দি পামে প্রবেশ করার ঠিক পর মুহূর্ত থেকেই এর বিলাসিতা ও চোখ ধাঁধানো জৌলুস আপনার মন কেড়ে নেবে।কয়েকদিনের অবসরে ছুটি কাটানোর জন্য এ রিসোর্ট খুবই জনপ্রিয়। 

হলিউড-বলিউডের অনেক তারকাই এখানে আসেন অবসর কাটাতে। খুব কাছ থেকে সেসব তারকার মুখোমুখি হতে পারেন আপনিও।আটলান্টিস, দ্য পাম হল একটি বিলাসবহুল হোটেল রিসর্ট যা সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাম জুমেইরার শীর্ষে অবস্থিত । এটি দ্বীপে নির্মিত প্রথম অবলম্বন ছিল এবং এটি আটলান্টিসের মিথের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে ।

তবে এতে আলাদা আরবীয় উপাদান রয়েছে। কেরজনার ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিংস লিমিটেড এবং ইস্টিথমার ওয়ার্ল্ডের মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগ হিসাবে 24 সেপ্টেম্বর, 2008-এ রিসোর্টটি খোলা হয়েছিল

৪,পাম আইল্যান্ড

দুবাইয়ের পাম আইল্যান্ডটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি জায়গা, যা মানুষের তৈরি কৃত্রিম দ্বীপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টিকারী। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে সাগরের বুকে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম তিনটি দ্বীপ।সমুদ্রের ওপর বালি দিয়ে তৈরি তিনটি দ্বীপ এমনভাবে বসানো হয়েছে যা ওপর থেকে দেখতে একটি পাম গাছের মতো লাগে।

এখানে রয়েছে বিলাসবহুল সব হোটেল আর রিসোর্ট। আরো রয়েছে নিজস্ব আবাসিক সৈকত, অ্যাপার্টমেন্ট, সুইমিং পুল, থিম পার্ক, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, হাসপাতাল এবং খেলাধুলার সুবিধা।পাম দ্বীপ সংযুক্ত আরব আমিরাত-এর দুবাইয়ে অবস্থিত ৩টি কৃত্রিম দ্বীপ পাম জুমেইরাহ,পাম দেইরা ও পাম জেবেল আলির সমষ্টি। ২০০১ সালে এই দ্বীপের নির্মাণকাজ শুরু হয়।

২০১১ সালের নভেম্বরে শুধুমাত্র পাম জুমেইরাহর কাজ সম্পন্ন হয়। এই দ্বীপটি পাম গাছের আকৃতি ধারণ করে।কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর,পাম জেবেল আলিও একই আকৃতি ধারণ করবে। পাম জুমেইরাহর মতো প্রতিটি দ্বীপেই বিশাল সংখ্যক বাসস্থান,অবসরকেন্দ্র ও বিনোদন কেন্দ্র থাকবে এবং দুবাই শহরের সাথে সমুদ্রসৈকত যুক্ত করবে।

৫,স্কি দুবাই

দুবাই ভ্রমণের পথে মরুভূমির বুকে ধু ধু করে বালি ওড়া কিংবা মরিচিকার দেখা পাওয়া স্বাভাবিক মনে হলেও বরফে স্কি করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, মরুভূমিতে ঝলসানো রোদ থাকলেও দুবাইয়েই কেবল মরুভূমির বুকে স্কি করা সম্ভব। তাও আবার বরফঘেরা মাঠে, যা ২২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত।

স্কি দুবাই মূলত একটি ইনডোর স্কি লাউঞ্জ, যেখানে পাওয়া যাবে পৃথিবীর সর্বপ্রথম ৪০০ মিটার দীর্ঘ ব্ল্যাক রান। লাউঞ্জের ভেতরে প্রবেশ করলে কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনি পেতে পারেন এন্টার্কটিকা ভ্রমণের অনুভূতি। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য স্কি দুবাইয়ের অভিজ্ঞতা উত্তেজনাপূর্ণ ও আনন্দময় মুহূর্ত সৃষ্টি করে। স্কি দুবাইয়ের প্রধান আকর্ষণ জেনেটু পেঙ্গুইন, কিং পেঙ্গুইন।

এখানে পেঙ্গুইনদের সঙ্গে সাঁতার কাটাসহ কাচের বিশাল প্রাচীরের মাধ্যমে পেঙ্গুইনের মুখোমুখি হওয়া সত্যি অতুলনীয়। শুন্যের নিচে মাইনাস ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় বসেও আপনি মজা করে আইসক্রিম বা মগ ভর্তি গরম কফি খেতে পারেন। সে জন্য আপনাকে অবশ্যই বিশেষ এক ধরনের পোশাক পরতে হবে।

স্কি দুবাই হল একটি ইনডোর স্কি রিসোর্ট যেখানে 22,500 বর্গ মিটার ইনডোর স্কি এলাকা রয়েছে । পার্কটি সারা বছর −1 থেকে 2 °C (30 থেকে 36 °F) তাপমাত্রা বজায় রাখে। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম শপিং মলগুলির মধ্যে একটি মল অফ এমিরেটসের একটি অংশ । এটি মজিদ আল ফুত্তাইম গ্রুপ দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল , যা আমিরাতের মল পরিচালনা করে।

৬,দুবাই মারিনা

দুবাই মেরিনার প্রথম ধাপটি 25 একর (100,000 m 2 ) জুড়ে রয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি ফ্রিহোল্ড অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং রয়েছে যার নাম দুবাই মেরিনা টাওয়ার । দুবাই মেরিনার প্রথম ধাপের খরচ 1.2 বিলিয়ন AED-এর বেশি। তিনটি টাওয়ারের নামকরণ করা হয়েছে মূল্যবান পাথরের নামানুসারে: আল মাস, ফাইরুজ এবং মুরজান; বাকি তিনটির নামকরণ করা হয়েছে ।

আরবি গন্ধের নামানুসারে: মেস্ক, আনবার এবং আল ইয়াস। প্রকল্পটি HOK দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল এবং ঠিকাদাররা ছিল আল-ফুত্তাইম ক্যারিলিয়ন এবং নাসাহ মাল্টিপ্লেক্স সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরেক সুউচ্চ ভবন – দুবাই মারিনা। যেখানে রয়েছে বিশাল বিশাল সব আকাশছোঁয়া ভবন, বিলাসবহুল সৌন্দর্যে আবেশিত প্যাঁচানো ‘ক্যানন টাওয়ার’ সমুদ্র সৈকত।

যা টুরিস্টদের মন কেঁড়ে নেয় এক নিমিষেই। সুন্দর আবহাওয়ার একটি দিন বেছে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দুবাই মারিনা থেকে। এখানে পানি ট্যাক্সি নিয়ে ঘুরতে পারেন মারিনার অন্যতম ক্রুজে। কিংবা প্রিয়জনদের সাথে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে অসাধারণ একটি ডিনারও করে নিতে পারেন।

৭,দি ফাউন্টেন

রঙিন পানির নৃত্য দেখতে যেতে পারেন দি ফাউন্টেনে। এখানকার বিশাল কৃত্রিম ওয়াটার ডান্স প্রায় সাড়ে ছয় হাজার সঙ্গীতের সুরের সাথে তাল মিলিয়ে ৩ থেকে ৬ মিনিটব্যাপি নৃত্য পরিবেশন করে। সন্ধ্যায় এই ফাউন্টেনে যুক্ত হয় ৬,৬০০টি সুপার লাইট এবং ২৫টি রঙের প্রজেক্টর। যা পানির ধারাকে বহুরূপে প্রকাশ করে। এমনকি রঙিন আলোকরশ্মির ঝলমল সেই আলো ২০ মাইলেরও বেশি দূর থেকে দেখা যায়। প্রত্যেক ১৫-২০ মিনিট পরপর এই ওয়াটার ডান্স দেখা যায়।

লেখকের শেষ কথা

আশা করছি দুবাইয়ের সেরা ৭ দর্শনীয় স্থান জেনে নিন সকল প্রকারের ধারনা পেয়েছেন এই আর্টিকেলটিতে, এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলে আপনাদের পরিচিতি মানুষদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এ ধরনের বা বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইডে ভিজিট করে দেখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url